ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের উন্নয়নে সংবাদপত্রের ভূমিকা

nurul islamমুহম্মদ নূরুল ইসলাম
কক্সবাজার বাংলাদেশের প্রান্তিক জেলা। হালের কথিত ‘পর্যটন শহর’ বা পর্যটন নগরী। গাল ভরা শব্দ ‘পর্যটন শহর’ বা ‘পর্যটন নগরী’ শুনলে আমরা বড়ই প্রীত হই। জেলার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে আন্তর্জাতিক নদী নাফ ও প্রতিবেশি রাষ্ট্র মিয়ানমার, পশ্চিমে দিগন্ত বিস্তৃৃত বঙ্গোপসাগর, পূর্বে সবুজের সমাহার ঘন বনাঞ্চল সমৃদ্ধ পাহাড় ঘেরা পার্বত্য বান্দরবান জেলা ও উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা।

দুইশত বিশ বছর আগেও কক্সবাজার ছিলো স্বাধীন আরাকানের অংশ। ফলে এখানকার সাহিত্য-সংস্কৃতির রূপ ছিলো ভিন্ন। ১৭৮৪ সালে পেগুর রাজা বোদাফায় বা বোদফ্রা আরাকান দখল করে নিলে আরাকানের কয়েক হাজার বছরের স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায়। বোদাফায়ার সেনাপতি মহাবান্দুলার নেতৃত্বে বর্মীরা আরাকানী জনগণের উপর নির্মম নির্যাতন, অত্যাচার, ধর্ষণ, লুটপাট শুরু করে। এতে করে লক্ষাধিক আরাকানী হিন্দু, মুসলিম, রাখাইন ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজন পালিয়ে এসে বর্তমান রামুসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় আশ্রয় নেয়। এসব উদ্বাস্তুদেরকে পুনর্বাসনে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৯ সালে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামের জনৈক ইংরেজ ক্যাপ্টেনকে এ অঞ্চলে নিয়োগ প্রদান করেন। এরপর থেকেই কক্সবাজার নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে চলতে শুরু করে।

প্রশাসনিক সুবিধার্ধে ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৪ সালে কক্সবাজারকে মহকুমায় উন্নীত করে। এর কিছু দিন পরে পাক-ভারত উপ-মহাদেশের প্রাচীন মহকুমার ধারাবাহিকতায় ১৮৬৯ সালে কক্সবাজার শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয় ‘কক্সবাজার মিউনিসিপ্যালিটি’। মাত্র ২.৬২ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে মহকুমা সদরকে ‘কক্সবাজার মিউনিসিপ্যালিটি’ হিসেবে উন্নীত করা হলেও শহুরে সুযোগ-সুবিধা জনগণের ভাগ্যে জোটেনি। কক্সবাজারকে মিউনিসিপ্যালিটি হিসেবে উন্নীত করা হলেও এর প্রশাসনিক কার্যালয় ছিলো চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা থেকে মিউনিসিপ্যালিটির অফিস কক্সবাজারে স্থানান্তর করা হয়। কক্সবাজার পাক-ভারত উপমহাদেশের একটি পুরোনো মহকুমা শহর। দূরত্ব ও নেতৃত্ব শূন্যতার কারণে কক্সবাজার বার বার অবহেলিত থেকেছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ৩২.৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে কক্সবাজার পৌর এলাকাকে সম্প্রসারিত করা হয়।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে এজন্য আমরা গর্ববোধ করি। জেলার একপাশে সমুদ্র ও অন্যপাশে সবুজের সমাহার পাহাড়, বনজঙ্গলে ভরপুর বিধায় কক্সবাজারে পর্যটনের বিকাশে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। কিন্তু আমরা তার কতটুকুই কাজে লাগাতে পেরেছি? ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) “ভ্রমণ ও পর্যটন প্রতিযোগিতা সূচক ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের পর্যটনের হাল নাগাদ চিত্র। প্রতিবেদনে দেখা যায়, পর্যটনে বিশ্বের ১৩৬টি পর্যটন দেশের মধ্যে আমাদের প্রাণ প্রিয় বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫ নম্বরে। (সূত্র : পর্যটনে বেহাল বাংলাদেশÑ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভ্রমণ ও পর্যটন প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক প্রতিবেদেন, ১৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৫ নম্বরে’ দৈনিক প্রথম আলো ২১ এপ্রিল ২০১৭, পৃষ্ঠা-২০) দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫ম। এমন কি মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের আস্তানা নামে খ্যাত পাকিস্তানের অবস্থান আমাদের ওপরে। পর্যটক আকর্ষণে একটি দেশ কতটা নিরাপদ, অবকাঠামো সুবিধা কেমন, বিমানবন্দর কতটা উন্নত, আবাসন ব্যবস্থার মান কেমন- মোটা দাগে এমন ১৪টি বিষয় বা সূচকের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পর্যটক আকর্ষণে বিশে^র ১ নম্বর দেশ স্পেন। এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভারত। তালিকায় ভারতের অবস্থান ৪০ নম্বরে। এছাড়া ভুটানের অবস্থান ৭৮ নম্বরে, নেপাল ১০৩ ও পাকিস্তান ১২৪ নম্বরে।”

তখনই প্রশ্ন আসে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে তথা কক্সবাজারে থেকে লাভটাই বা কি হলো? বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। বর্তমানে পর্যটনের নতুন নতুন স্পট বা এলাকা দেশের মধ্যে গড়ে উঠছে। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ও পাহাড়ি বনাঞ্চলকে ঘিরে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। কক্সবাজারে রয়েছে সেভেন স্টার, ফাইভ স্টার, থ্রি স্টারসহ প্রথম শ্রেণি থেকে সব শ্রেণির পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। পর্যটন শিল্পের বিকাশের প্রায় সকল সুযোগ-সুবিধা কক্সবাজারে বিদ্যমান কিন্তু যোগাযোগ অবকাঠামো ও অভ্যন্তরীন বিভিন্ন সমস্যার কারণে কক্সবাজারে পর্যটন শিল্প যথাযথ ভাবে বিকশিত হচ্ছে না। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর বিমানে করে মাত্র ১৮-২০ হাজার টাকায় যাওয়া-আসা করা যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের কাছে প্রশ্ন করা যেতে পারে, কক্সবাজার থেকে ঢাকা বিমানে যাওয়া-আসা করতে ১০ থেকে ১৬ হাজার টাকা কেন প্রয়োজন? উন্নত বিশ্বের সড়ক যোগাযোগের কথা নাই বললাম, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মহাসড়কে নিরাপদে ও অল্প সময়ে যাতায়ত করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশে? ঢাকা থেকে কক্সবাজার মাত্র ৪৫০ কিলোমিটার। উক্ত সড়ক পরিভ্রমণ করতে সময় লাগে ৮ থেকে ১২ ঘন্টা। কোনো কোনো সময় ২৪ ঘন্টায়ও লাগে।

শীত মওসুমকে বাংলাদেশে পর্যটন মওসুম ধরা হয়। শীত মওসুমে শুক্রবার বা শনিবার কক্সবাজার শহরের কলাতলী সার্ক মোড় থেকে শহরের ডিসি হিলে পৌঁছতে সময় নেয় প্রায় একঘন্টা। শহরের বুক চিরে রয়েছে একমাত্র সড়ক। এই সড়কের অবস্থা আর কতই বলা যায়। বছরের ঈদ-পার্বনে সড়ক কিছুটা ফাঁকা থাকলেও অন্য সময় ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টায় থাকে যানজট। যানজটের কারণে শহরবাসীসহ শহরে পর্যটনে আসা লোকজন নাকাল হয়ে পড়ে। শহরে ও কলাতলী থেকে শহরের ডিসি হিল পর্যন্ত কোনো বিকল্প সড়ক নেই বলেই আমাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

কক্সবাজার একটি প্রান্তিক জেলা হলেও কক্সবাজার পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তবে দেশের প্রতিবছরের চাহিদার ৯৫ ভাগ লবণ কক্সবাজারেই উৎপন্ন হয়। সামুদ্রিক মাছ, রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি উৎপাদন, চিংড়ির পোনা উৎপাদন, পাহাড়ি বনজসম্পদের কারনে কক্সবাজার নিজের কাছে নিজেই বৈরি। উপরের আলোচনাটা মূলতঃ দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা শুনে আসছি কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষায়িত (ঊীপষঁংরাব ঞড়ঁৎরংঃং তড়হব) পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা হবে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে কাটাতারের বেড়া দিয়ে বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলো। কিন্তু ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস পর্যটন কর্পোরেশনের সেই কাটাতারের বেড়া উপড়ে ফেলে। এরপর পর্যটন কর্পোরেশন বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তাবলয় পূননির্মাণ করেনি। তারপরে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইনানী বা মনখালীতে ৫০০ হেক্টর জমি নিয়ে বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষায়িত পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা হবে। সরকারের সেই ঘোষণা ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ।

উপরের বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্র, গণমাধ্যমে একাধিকবার লেখালেখি হয়েছে, সম্প্রচার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সংবাদপত্রে মুদ্রিত বক্তব্যসমূহের সুবিধাজনক অংশটা গ্রহণ করে অবশিষ্ট অংশ গ্রহণ করে না। এটা লেখার উদ্দেশ্য নেতিবাচক ধারণা প্রদান করা নয়।

সংবাদপত্রকে ফোর্থ স্টেট বা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। আবার অনেকেই সংবাদপত্রকে সমাজের দর্পণও বলে থাকে। সে যা-ই হোক, সমাজে-রাষ্ট্রে সংবাদপত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সংবাদপত্র জনগণের সুখ-দুঃখের কথা বলে, আশা-নিরাশার কথা তুলে ধরে, অভাব-অভিযোগের কথা উপস্থাপন করে, উন্নয়নের কথা বলে, অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সমাজকে, রাষ্ট্রকে আলো দেখায়, সমাজের-রাষ্ট্রের চোরাগলি সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে, সংবাদপত্র সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। সংবাদপত্র জনগণকে সমবেত করতে ভূমিকা রাখে। কোনো নির্ধারিত বিষয়ে জনগণকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখে। সংবাদপত্র জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে। সংবাদপত্র জনমত সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখে। সংবাদপত্র বরাবরই রাষ্ট্রের উন্নয়নের অংশীদার, উন্নয়নের সহায়ক। সংবাদপত্রকে বৈরি ভাবলে চলবে না।

কক্সবাজারের সংবাদপত্রের ইতিহাস খুব দীর্ঘদিনের নয়। কক্সবাজার থেকে সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় বিগত শতকের সত্তর দশকে। প্রথমে দু’একটি অনিয়মিত সংবাদপত্র প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে নিয়মিত ভাবে সংবাদপত্র প্রকাশ হতে থাকে। আর নব্বইর দশকে কক্সবাজারবাসী স্থানীয়ভাবে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ হতে দেখে। প্রথমে গণবাণী, তরঙ্গ ও বারুদ নামের তিনটি পত্রিকা অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়। তবে উক্ত পত্রিকা তিনটির অকাল মৃত্যু ঘটে। ১৯৭৮ সালে সাপ্তাহিক কক্সবাজার নামের পত্রিকা একক ভাবে কয়েকবছর প্রকাশিত হতে থাকে এবং কক্সবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কয়েকবছর পরে তার সাথে যুক্ত হয় সাপ্তাহিক কক্সবাজার বার্তা নামের জেলার দ্বিতীয় সাপ্তাহিক পত্রিকা। তার দু’একবছর পরে মাসিক বাঁকখালী নামের একটি ২৪ পৃষ্ঠার টেবলয়েড পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে। যাতে ছিলো চমক। কারণ পত্রিকাটিতে নিউজ, ভিউজ, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ক্রীড়া, গবেষণাসহ সব বিষয় যুক্ত ছিলো। এর পরে সাগরবাণী, সাগর কণ্ঠ নামের দুইটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে। শিশু-কিশোরদের জন্য সৈকত নামের একটি অনিয়মিত পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে। একই সাথে সমুদ্র ধারা নামের আরো একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ হতে দেখা যায়। নব্বই দশকের শুরুতেই কক্সবাজারে আসে দৈনিক কক্সবাজার ও দৈনিক সৈকত নামের দুটি পত্রিকা। উক্ত পত্রিকা দুইটি কক্সবাজারের দৈনিক সংবাদপত্র জগতের পুরোধা তথা পাইওনিয়ার। পত্রিকা দুইটির প্রকাশনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। উক্ত পত্রিকা দুটির ধারাবাহিকতায় একে একে প্রকাশিত হতে থাকে দৈনিক হিমছড়ি, দৈনিক আজকের দেশবিদেশ, দৈনিক আপনকণ্ঠ, দৈনিক বাঁকখালী, দৈনিক সমুদ্রবার্তাসহ অন্যান্য দৈনিকগুলো। উপরে উল্লেখ করেছি, বর্তমানে কক্সবাজার শহর থেকে কুড়িটির অধিক দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, জেলার বৃহত্তম ও বর্ধিষ্ণু উপজেলা চকরিয়া সদর থেকে প্রকাশিত হতে থাকে দৈনিক চকোরি নামের একটি দৈনিক ও পাক্ষিক মেহেদী নামের পত্রিকা। তবে কক্সবাজারের সংবাদপত্রের পুরোধা হচ্ছেন চকরিয়া উপজেলার কাকারা এলাকার আবদুর রশিদ ছিদ্দিকী। তিনি কক্সবাজার থেকে সংবাদপত্র প্রকাশ না করলেও চট্টগ্রাম ও কলকাতা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশ করেন।

সমাজের মানুষের মধ্যে তিন শ্রেণির মানুষ রয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ বরাবরই স্তাবকতায় নিয়োজিত, আর এক শ্রেণির মানুষ বরাবরই নিন্দা করতে অভ্যস্ত। আপনি যতই ভাল কাজ করেন না কেনো তারা আপনার নিন্দা করতেই থাকবে। আর একশ্রেণির মানুষ আছে যাদেরকে বলা হয় সমালোচক। তুল্য বিচারে সমাজে সেই মানুষই উত্তম যিনি সমালোচক। সমালোচক হচ্ছে তিনি যিনি ভালো, খারাপ দুটাই সমভাবে আলোচনা করতে পারদর্শি। যিনিই সমালোচক, তিনিই শ্রেষ্ট মানুষ। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সমাজ, রাষ্ট্র সমালোচকদের পছন্দ করেন না। তাদের প্রথম ও একমাত্র পছন্দ স্তাবক। আপনি যতই স্তাবকতা করতে পারদর্শি সমাজে, রাষ্ট্রে আপনার কদর তত বেশি, ততই গ্রহণযোগ্যতা বেশি। দশের স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে এই দৃষ্টিভংগির পরিবর্তন দরকার।

বর্তমানে কক্সবাজারসহ সারা দেশে সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমের স্বর্ণযুগ চলছে। আমাদের প্রান্তিক জেলা কক্সবাজারে কুড়িটির অধিক দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। সাথে রয়েছে ই-পেপার। পাশাপাশি ইন্টারনেট ভিত্তিক দৈনিক নিউজ পোর্টাল প্রচারিত হচ্ছে প্রায় ৫০টির অধিক। একই সাথে পাল্লা দিয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্রগুলো ভোর হতেই আমাদের দোরগোড়ায় চলে আসছে। একই সাথে দৈনন্দিন নিউজ, ভিউজসমূহ ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কল্যাণে আমরা দেখতে পাচ্ছি। সংবাদপত্র, গণমাধ্যমসমূহে সরকারের উন্নয়নের চালচিত্র আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি। কক্সবাজারের সংবাদপত্রসমূহেও আমরা একই চিত্র দেখতে পাই। কক্সবাজার জেলার প্রায় ২৫ লাখ মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, অভাব-অভিযোগের খতিয়ান হিসেবে প্রতিদিন ভোরে কক্সবাজারের সংবাদপত্রসমূহ প্রকাশিত হচ্ছে। একই সাথে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-সমূহ আমরা জানতে পারছি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে জনসম্পৃক্ততা, উন্নয়ন কর্মকা-ের মান, উন্নয়ন কর্মকা-সমূহে জনগণের আগ্রহ, কাজের মান সম্পর্কে জনগণের অভিমতও একই সাথে সংবাদপত্রের কল্যাণে আমরা জানতে পারছি। এতে করে উন্নয়ন কর্মকা-ে জড়িত ব্যক্তিরা কাজের মান ১৯ বা ২০ করলেও ১০ বা ২০ করতে সাহস পাচ্ছে না।

কক্সবাজারবাসীর হৃদয়পটে এখনো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে বহুল আলোচিত ৫১ একর পাহাড়, সমুদ্র সৈকতের বুকচিরে জেটি নির্মাণ, সোনাদিয়ার প্যারাবন নিধন করে চিংড়ি চাষ, কুতুবদিয়ার প্যারাবন নিধন করে লবণ মাঠ তৈরি, শাহপরীর দ্বীপের ঝাউবাগান উজাড়সহ বিভিন্ন পরিবেশ বিধ্বংসীকাজসমূহ। পরিবেশবাদীসহ স্থানীয় স্বংাদপত্রসমূহে এসবের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করে। এতে করে সরকার নির্মিত জেটি ভেঙ্গে দেয়, ৫১ একর সরকারি জমির বন্দোবস্তী বাতিল করতে বাধ্য হয়। কিন্তু শাহপরীর দ্বীপের ঝাউবাগান রক্ষা করা যায় নি। আর তার ফলও শাহপরীর দ্বীপবাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরের ভাঙ্গনে শাহপরীর দ্বীপের আকার বিকৃত হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ বাস্তচ্যুত হয়েছে।

আলোচনার শুরুতেই বলা হয়েছে, শহরের তীব্র যানজটের কথা। এব্যাপারে সংবাদপত্রসমূহ প্রতিনিয়ত সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি করে। তারই বদৌলতে আজ বাসটার্মিনাল থেকে কলাতলী বাইপাস সড়ক, কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, কক্সবাজার বিমান বন্দরের আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- বায়স্তবায়িত হয়েছে, কিছু বাস্তবায়িত হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তথা বিজিবিকে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বলা হয় অনুরূপভাবে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম হচ্ছে উন্নয়নের সহযোগি এবং দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়মের বিরুদ্ধে অতন্দ্র প্রহরী।

লেখক : সাংবাদিক, লোকগবেষক, ইতিহাস লেখক, সভাপতি, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার প্রেসক্লাব।

পাঠকের মতামত: