সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত অসংখ্য যুবক বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও সরকারি চাকুরি নামক সোনার হরিণটি ধরতে আপ্রাণ চেষ্টা করেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে । সমস্ত যোগ্যতা থাকার পরও অনেকে মামা ও কোটার অভাবে চাকুরি পাচ্ছে না। আবার অনেকে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও স্বপদে চাকুরি পাচ্ছে না। পিএসসি ওইসব যোগ্যতাধারী বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নন-ক্যাডারভূক্ত চাকুরিটি নিয়োগ দিতে সুপারিশ করছে। এসব পদে কেউ যোগদান করলেও আবার কেউ কেউ অপমাণে যোগদান করছে না।
সব শিক্ষিত যুবক যে চাকুরি পাবে এমন আশা করা যায় না। কারণ “সব ফুলে পুঁজা হয়না”। দেশে শিক্ষার হার দিন দিন বেড়েছে। প্রতিবছরই অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে। সকলের ভাগ্যে চাকুরি নামক সোনার হরিণ জুড়ছে না। কেউ কেউ জীবিকার তাড়নায় বেসরকারি চাকুরি করে পরিবার পরিজনের মুখে দু’মুঠো অন্য যোগাচ্ছে। এক সময় অষ্টম শ্রেণি পাশের প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবিতে চাকুরি করে অসংখ্য যুবক জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই। এইচএসসি, ডিগ্রি এমনকি এম.এ পাশ করেও ছোট খাট চাকুরি করছে এমন নজিরও কম নয়। ওই চাকুরি যোগাড় করতে গিয়ে কি পরিমাণ কাঠ-খড় পুড়াতে হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইচ্ছা থাকার পরও সব কথা না বলা ভালো। কারণ “বোবার কোন শত্র“ নেই”। আসল কথা বলতে গিয়ে অনেক অপ্রাষঙ্গিক কথার অবতারণা করতে হয়েছে। যা অনেকটা ধান বানতে শিবের গীতের মত। কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলায় জমি বেচা-বিক্রির দায়িত্বে কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন সাব-রেজিষ্ট্রার। অথচ থাকার কথা ৮ জন। ৬ জন সাব-রেজিষ্ট্রারের পদ শূন্য থাকায় জমি বিক্রি সহিমুহরী দলিল সংগ্রহ করতে গিয়ে সেবা গ্রহীতারা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ১০ দিনের কাজ ২ মাসেও শেষ করতে পারছে না সেবা গ্রহীতারা। চকরিয়া সাব-রেজিষ্ট্রার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সাব রেজিষ্ট্রার চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজার সদর উপজেলা আর মহেশখালী উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রার মহেশখালী, রামু, উখিয়া ও টেকনাফের সাব-রেজিষ্ট্রার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কয়টি অফিসে দায়িত্ব পালন করতে পারে? প্রতি সপ্তাহে সরকারি বন্ধ ছাড়া ৫ কর্মদিবসে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা একদিন করে এক এক অফিসে কাজ করলে সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তি কমার কোন লক্ষণ আছে কি? অপরদিকে সরকার নির্ধারিত অফিস সময়ের পর হলে সেবা গ্রহীতাদেরকে গুণতে হয় অতিরিক্ত ফি (আক্কেল সেলামী)। প্রসঙ্গক্রমে না বললে হয় না জমি বিক্রি কেউ শখের বসে করে না। পারিবারিক, চিকিৎসা, ধার-দেনা, ছেলের চাকুরি, কন্যা দায়গ্রস্থ পিতার মেয়ের বিয়ে দিতে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আশায় ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে, শেষ বয়সে হজব্রত পালন, মৃত্যুর আগে ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন, বিভিন্ন ধর্মীয় ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দান, ওয়াক্ফ ও হেবা করার জন্যই বেশিরভাগ সেবা গ্রহীতা সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়ে স্মরণাপন্ন হয়। কিন্তু প্রতি উপজেলায় একজন করে সাব-রেজিষ্ট্রার না থাকায় সপ্তাহের নির্ধারিত দিনের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় সেবা গ্রহীতাদের। যদি জমি বিক্রেতা অসুস্থ বা বয়স্ক হয়ে থাকলে তার মৃত্যুর ফরমাণ কি সাব রেজিষ্ট্রারের অপেক্ষায় থাকবে? সাব-রেজিষ্ট্রার না থাকার অজুহাত দেখিয়ে হযরত আজরাইল (আঃ) এর কাছ থেকে সময় পাওয়া যাবে? সারাদেশে সাব-রেজিষ্ট্রার পথ শূন্য থাকলে দেশে এত শিক্ষিত ছেলেমেয়ে থাকার পরও নিয়োগ দিতে সমস্যা কোথায়? শূন্য পদে সাব-রেজিষ্ট্রার নিয়োগ দিলে দেশের অর্থ ভান্ডার কি শূন্য হয়ে যাবে? জরুরী ভিত্তিতে শূন্যপদে সাব-রেজিষ্ট্রার নিয়োগ দিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কি লোকসান হবে? নাকি দেশে মেধাবী শিক্ষিতদের আকাল চলছে। যাক বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নবোধক মন্তব্য করা যতার্থ হবে না।
কক্সবাজার জেলাবাসীর প্রশ্ন ৮টি উপজেলায় ২ জন সাব-রেজিষ্ট্রার দিয়ে জমি বিক্রির কাজ চালাতে গিয়ে জমির ক্রেতা ও বিক্রেতারা প্রতিদিনই দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। যা ভূক্তভোগী ছাড়া কারো পক্ষে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। ইচ্ছে করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি সহজে সমাধান করতে পারে। তার পরও কেন করছে না তার মুজেযা বুঝা বড় দায়। প্রসঙ্গক্রমে গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি কক্সবাজারের সাব-রেজিষ্ট্রার সংকট নিয়ে চকরিয়ার সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের মাঠে মন্তব্য করতে শোনা গেছে, কৃপণ এক ব্যক্তি এক সময় বাজারে গিয়েছিল একটি টুপি সেলাই করতে। ওই ব্যক্তি কাপড়ের দোকান থেকে একটি টুপির কাপড় কিনে দর্জির দোকানে গিয়ে দর্জিকে বলল, বাবা আমি একটি টুপির কাপড় নিয়ে তোমার কাছে হাজির হয়েছি। তুমি কয়টি টুপি আমাকে সেলাই করে দিতে পারবে। সুচতুর দর্জি বলে দিলে, টাকা দিলে ৫টি সেলাই করে দিতে পারব। কৃপণ বুড়ো খুশি হয়ে বলে বসল, টাকা দিব তুমি ৫টি টুপি সেলাই করে রাখ। পরে কৃপণ বুড়ো টুপির জন্য গিয়ে দেখে দর্জি ঠিকই ৫টি টুপি সেলাই করে রেখেছে। তবে টুপিগুলো মাথায় দিতে গিয়ে দেখা দিল বিপত্তি। কৃপণ বুড়ো দুঃখ করে বলল, কি টুপি সেলাই করেছ? এখন তো মাথায় হচ্ছে না। সুচতুর দর্জি বলে বসল, একটি টুপির কাপড় নিয়ে ৫টি টুপি হয় কি করে? তখন বুড়ো বলল, সেলাই করেছ কেন? মজুরি দিয়েছেন তাই। কৃপণ বুড়ো বলল, এখন কি করব? সুচতুর দর্জি বলল, টুপিগুলো হাতের ৫ আঙ্গুলেই হবে। মন্তব্য নি®প্রয়োজন। কক্সবাজার জেলার সাব-রেজিষ্ট্রার শূন্যতার কারণে অফিসগুলো চলছে কৃপণ বুড়ো আর সুচতুর দর্জির কায়দায়।
পাঠকের মতামত: