চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের পশ্চিম চাম্বল গ্রামে অভিযান চালিয়ে নকল সাবরেজিস্ট্রি অফিসের খোঁজ পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। অভিযানকালে অফিসটি থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ১৮১ জনের জমির দলিল, নকল দলিল, খতিয়ান, ওয়ারিশ সনদপত্র, স্ট্যাম্পসহ কয়েক হাজার গুরুত্বপূর্ণ কাগজ এবং চাম্বল বাজারে এলাহী কম্পিউটার নামের একটি দোকান থেকে দুটি কম্পিউটার, একটি স্ক্যানার ও একটি প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।
নকল সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কাজে ব্যবহার করা পাকা দোতলা ঘর ও দোকানটির মালিক চাম্বল এলাকার জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত মো. আলমগীর। তাঁর বাবার নাম আব্দুল হাকিম (মৃত)। আলমগীরের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি চাম্বল বাজারে ১২ জন পুলিশ সদস্যের ওপর পৈশাচিক হামলার মামলা রয়েছে। নকল সাবরেজিস্ট্রি অফিসটির খোঁজ পাওয়া যায় গত মঙ্গলবার রাতে। তবে বিপুলসংখ্যক আসল-নকল কাগজপত্র থাকায় দুই দিনে জব্দ তালিকা শেষ করে গতকাল বৃহস্পতিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জব্দ তালিকা তৈরি করেন বাঁশখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উৎপল চক্রবর্তী, চাম্বল ভূমি অফিসের তহশিলদার চন্দন দাশ ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসের এক কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী মানুষের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত নেতা মো. আলমগীর তাঁর ছেলে মো. মামুনকে নিয়ে ওই নকল জাল দলিল ব্যবসায় জড়িত। আলমগীর নিজেই সাবরেজিস্ট্রার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), তহশিলদার ও কানুনগোর স্বাক্ষর-সিল জাল করে খতিয়ান ও দলিল তৈরি করেন। এমনকি বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যদের (মেম্বার) সিল-প্যাড দিয়ে ভুয়া ওয়ারিশ সনদপত্রও তৈরি করেন তিনি। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতারণা ব্যবসা করে আসছেন। তাঁকে এ অপকর্মে সহযোগিতা করে আসছেন বাঁশখালী ভূমি অফিস ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব ভুয়া, জাল দলিল ও নামজারি খতিয়ান নিয়ে গ্রামের প্রভাবশালীরা নিরীহ মানুষের জায়গা জোর করে দখলে নেয়।
চাম্বল ভূমি অফিসের তহশিলদার চন্দন দাশ বলেন, জব্দ তালিকায় পটিয়া, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, বাঁশখালী, হাটহাজারীসহ বিভিন্ন এলাকার ১৮১ জনের জমির দলিল আছে। এ ছাড়া আছে সই করা অসংখ্য খালি স্ট্যাম্প, ভুয়া ওয়ারিশ সনদপত্র, আরএস, বিএস খতিয়ানসহ কয়েক হাজার কাগজ। এসবের জব্দ তালিকা করতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
বাঁশখালী থানার উপপরিদর্শক উৎপল চক্রবর্তী বলেন, এ ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে সাধারণ ডায়েরি ও কম্পিউটার দোকানটি তালাবদ্ধ করা হয়েছে। জড়িতদের আটকে অভিযান চলছে।
মো. আলমগীরের ছেলে মো. মামুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ব্যবসা বৈধ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা করে আসছি। চাম্বল বাজারে আরো ছয়টি পরিবার এ ব্যবসা করে। ওই পরিবারগুলোতে অভিযান চালালে আমাদের ঘরের চেয়ে বেশিসংখ্যক কাগজপত্র পাওয়া যাবে। ’ বাঁশখালী সাবরেজিস্ট্রার ওসমান গণি মণ্ডল মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি বর্তমানে মিরেরসরাই উপজেলায় দায়িত্বে আছি। আগামী রবিবার অফিসে গেলে বিষয়টি তদন্ত করে বলতে পারব। ’
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ চাহেল তস্তুরী বলেন, ‘পশ্চিম চাম্বলের মো. আলমগীরের দোকান ও ঘর থেকে জিনিসপত্রগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। বাঁশখালীতে বিশাল একটা সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতারণামূলক কাজ করে আসছে। তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাই আপাতত সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। শিগগিরই দুষ্টচক্রটি ধরা পড়বে।
পাঠকের মতামত: