ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মহানায়ক ফজলুল কাদের চৌধুরী

fazlul-kader-chowdhuryচট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের এক অনন্য মেধা তৈরীর কারিগর। যার সাথে জড়িয়ে আছে বিশ্বের শ্রেষ্ট মানব সন্তানরা। নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস,বিজ্ঞানী জামাল নজরুল স্যার সহ অসংখ্য।বাংলাদেশ পরিচালনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্বে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী সন্তানরা।প্রতিষ্ঠার পর এই বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করেছে ইতিহাস পদার্পণ করেছে গৌরব উজ্জ্বল ৫০ বছরে।চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে রয়েছে এক সংগ্রাম এর ইতিহাস এবং অসংখ্য গুণীজনের অবদান। তাদের মধ্যে মাওলানা মনিরুজ্জামান,নুর আহম্মদ,ফেরদাউস খান, ড. শহীদুল্লাহ এবং বিশেষত ফজলুল কাদের চৌধুরীর অবদান অবিস্বরনীয়।ইতিহাস রয়েছে এজন্যই যে, বিশ শতাব্দী তে চট্রগ্রামে কোন বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় চট্রগ্রামের অধিবাসীরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় এর প্র‍য়োজনীয়তা অনুভব করেন।১৯৪০ সাল থেকে মাওলানা মনিরুজ্জামান সর্ব ভারতীয় সম্মেলনে চট্রগ্রামে একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর ২ বছর পর নুর আহম্মদ বঙ্গীয় আইনে পরিষদে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। এর ধারাবাহিকতায় চট্রগ্রাম কলেজে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।কিন্তু এই স্থান পরিবর্তিত হয়ে যায়।

chittagong-university-newsচট্টগ্রাম সরকারি কলেজের স্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল স্থাপনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হওয়ার পর, ১৯৬১ সালের ৭ মে চট্টগ্রামের নিবাসী র উদ্যোগে স্থানীয় মুসলিম হলে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রধান অতিথির ভাষণে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত প্রকাশ করেন এবং তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে ৩০ ডিসেম্বর, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ’ নামে আরেকটি পরিষদ গঠিত হয়। এই সকল সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ ও স্মারকলিপি প্রদান, পত্রপত্রিকায় বিবৃতি, সেমিনার অনুষ্ঠিত হতে থাকে। সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৬২ সালের ৯ ডিসেম্বর
লালদিঘী ময়দানে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৩ সালের ৮ জানুয়ারি, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বেচবি চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। এই অবস্থায় তৎকালীন নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী ১৯৬২ সালের নির্বাচন প্রচারনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাধারণ প্রতিশ্রুতি দেন।তিনি দৃঢ়তার সাথে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন “আমি নির্বাচিত হই আর না হই, তবে বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে স্থাপনের সকল প্রচেষ্টা আমি নেব এবং ইনশাল্লাহ আমার এই উদ্যোগে সাফল্য অর্জন করবই।” নির্বাচন পরবর্তীকালে তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ chittagong-university-newsকরেন।১৯৬৩ সালের ২৯ নভেম্বর, ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার মনোনীত হন।

কিন্তু চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়।কারণ সিলেট য়ে ছাত্ররা এক অনুষ্ঠানে আইয়ুব খান কে ঘেরাও করে সিলেটে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে বলতে বাধ্য করে এছাড়া ও তৎকালীন কুমিল্লার মহিউদ্দিন আহমদ প্রাদেশিক শিক্ষা মন্ত্রী হওয়ায় চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠার জোর লবিং ও আন্দোলন করেন।এক্ষেত্রে ফজলুল কাদের চৌধুরী ২৫ লক্ষ টাকার তহবিল সংগ্রহ সহ বেশ চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখী হন। প্রথমদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পরিবর্তিত সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে স্থাপনের যে পরিকল্পনা করা হয় ১৯৬৩ সালের ১২ ডিসেম্বর, রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের অনুপস্থিতির সুযোগে মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে সভাপতিত্বকালে ফজলুল কাদের চৌধুরী অতি দ্রুত কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এ.টি.এম মোস্তফাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ১৯৬৪ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় অর্থনৈতিক cuকাউন্সিলের বৈঠকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ মঞ্জুর করেন।এভাবেই ফজলুল কাদের চৌধুরী এক ইতিহাসের জন্ম দেন আর সেই ইতিহাস রচিত হয় চট্রগ্রামের বুকে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে। কুমিল্লা থেকে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কে চট্রগ্রামে স্থানান্তর এর জন্য ফজলুল কাদের চৌধুরী কে কুমিল্লার এক জনসভায় ডিম ছোড়া হয়।চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এই অগ্রনায়ক এর জন্ম ১৯১৯ সালে চট্রগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে।চট্রগ্রাম বাসীর উপাধি পান চট্রগ্রামের বাঘ হিসেবে।

–লেখক ঃ
Msh Hridoy
University of Chittagong-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠকের মতামত: