১৯৬৬ সনের ১৮ নভেম্বর জন্ম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। ইতোমধ্যে কেটে গেছে ৫০ বছর। আগামী ১৮ ও ১৯ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী জমকালো আয়োজনে উদ্যাপিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে উদগ্রীব সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন ব্যস্ত প্রস্তুতি নিয়ে। অনুষ্ঠানের বাজেট ধরা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। এর বড় একটি অংশ দিচ্ছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এরই মধ্যে প্রায় ৯ হাজার ৫৫৮ জন সাবেক শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন। আর বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিবন্ধন করেছেন ২০ হাজার ২৯২ জন। সাবেক শিক্ষার্থীর মধ্যে নির্ধারিত চাঁদা দিয়েছেন ৭ হাজার ৬৫০ জন। তবে সাবেক শিক্ষার্থী যাঁরা রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন কিন্তু টাকা জমা দিতে পারেননি, তাঁরা এখনো সুযোগ পাচ্ছেন। আড়াই কোটি টাকা বাজেটের ওই অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে এক কোটি টাকার বেশি। বাকি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন খাত থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে ।
দুই দিনের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে রঙিন সব আয়োজনে। ১৮ নভেম্বর বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হবে সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি। নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি শেষ হবে সিআরবির শিরীষতলায়। সন্ধ্যায় জিইসি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে ‘ওয়েলকাম নাইট’। সঙ্গে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান। রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে এই অনুষ্ঠান শুধু সাবেক শিক্ষার্থীদের জন্য।
১৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও-কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীণ শারমীন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নানসহ চট্টগ্রামের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। অনুষ্ঠানে স্মারকবক্তৃতা দেবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে আলোচনা সভা। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা জানানো হবে।
অনুষ্ঠানের মূল স্থান কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দুপুর ১২টায় শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলবে রাত আটটা পর্যন্ত। সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের সাংস্কৃতিক উপপর্ষদ কমিটির সদস্য সচিব এ এইচ এম রাকিবুল মাওলা বলেন, ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথমে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এবং পরে ওয়ারফেজ, লালন, আর্টসেল অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। আরো থাকছেন সঙ্গীতশিল্পী তপন চৌধুরী ও দিনাত জাহান মুন্নী।’
বিভাগ অনুযায়ী প্রতি ২০০ জনের জন্য কেন্দ্রীয় মাঠে একটি করে অর্ধশতাধিক বুথের ব্যবস্থা করা হবে। বুথ থেকে রেজিস্ট্রেশনকৃত সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যাগ, স্যুভেনিয়র, নাস্তার প্যাকেট সরবরাহ করা হবে। দুপুরে প্রায় ৩৫ হাজার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীর জন্য থাকবে খাবারের আয়োজন। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের এক কোণে প্রতিব্যাচে একসাথে দুই হাজার সাবেক শিক্ষার্থীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। আর বর্তমান শিক্ষার্থীরা একই খাবার টোকেন নিয়ে নিজ নিজ হলের ডাইনিং হলে খেতে পারবেন।
সুবর্ণজয়ন্তীর খাবার বন্টন ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসেই আমরা খাবার রান্নার আয়োজন করব। খাবারের তালিকায় কী থাকবে তা বাজেটের সাথে সমন্বয় করে নির্ধারণ করা হবে।’
সাবেক শিক্ষার্থীদের পরিচিতি কার্ড ইতোমধ্যে প্রতিব্যাচের প্রতিনিধিরা দূরবর্তী শহরে কুরিয়ারে ও কাছের স্থানগুলোতে হাতে হাতে দিচ্ছেন। না পেলে তাঁরা ১৮ নভেম্বর জিইসি কনভেনশন সেন্টার থেকে নিজ ব্যাচের প্রতিনিধির কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৯ নভেম্বর সকালে নগরের বটতলী ও ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছয়টি শাটল ট্রেন সকাল ৮টা থেকে আধাঘণ্টা পর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। নগরের ১০ স্থানে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০টি বাস। তবে বাসের যাত্রা শুরুর স্থান এখনো নির্ধারণ হয়নি। এছাড়া বিশেষ ট্রেন ও বিআরটিসির বাস থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
সুবর্ণজয়ন্তীর প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়কারী ড. কামরুল হুদা বলেন, ‘সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতি শেষের দিকে। এই উৎসব ঘিরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে নান্দনিক সাজে সাজানো হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আশা করছি, নবীন-প্রবীণের একটি সফল মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে।’
পাঠকের মতামত: