প্রেস বিজ্ঞপ্তি ::
মায়ানমারের আরকানে মুসলমান নারী ও শিশু নির্যাতন এবং নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর উদ্যোগে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৯নভেম্বর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
সাংবাদিক সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা !
আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হবার জন্যে আপনাদের সবাইকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি, সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা অত্যন্ত বেদনার্থ হৃদয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। একটি নৃশংস ও বর্বরতম চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধে পুরো বিশ্বের নীরবতার প্রতিবাদ করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করা হয়েছে। আপনাদের মাধ্যমে আমাদের প্রিয়মাতৃভূমি বাংলাদেশ এবং অপরাপর ভ্রাতৃপ্রতীম মুসলিম রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানদের নিদ্রাভঙ্গের ডাক দিতে হেফাজতে ইসলাম আজ নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব পালনের তাগিদে আজকের সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা !
পৃথিবীর উত্তর কিংবা দক্ষিণ মেরুতে নয়, আফ্রিকার জঙ্গল কিংবা আটলান্টিকের ওপারে নয়; আমাদেরই সীমান্তবর্তী, প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের আরাকানে ঘটছে সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ। আমরা অপরিসীম মর্মবেদনা ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রত্যক্ষ করছি যে, আমাদের ঘরের পাশে আরাকান রাজ্যের নিরীহ, নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষকে প্রতিদিন পশুর মতো জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে। নারী-শিশু-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার ওপর হিংস্র হায়েনার মতো দলবেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে দেশটির সামরিক বাহিনী ও সরকারের লেলিয়ে দেওয়া উগ্রবাদী মগ-দস্যু-সন্ত্রাসীরা। আরাকান ভূখন্ড থেকে মুসলিম জাতিসত্তাকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করে দেবার হীন উদ্দেশ্যে পূর্বঘোষিত ও পরিকল্পিত অভিযান চালানো হচ্ছে। আরাকানের বেসামরিক বৌদ্ধ জনগণকে অস্ত্রে সজ্জিত করে হত্যাকান্ডে প্ররোচিত করা হচ্ছে। ঘরে ঘরে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার মা-বোনদের ইজ্জত-সম্ভ্রম লুটে নেওয়া হচ্ছে। পাড়া-মহল্লা ও বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আরাকান গণহত্যার কোনও সংবাদ বিশ্বমিডিয়ায় প্রকাশিত না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত দু’চারটি সচিত্র সংবাদ দেখলেই কোনও বিবেকবান মানুষ স্থির থাকতে পারেন না।
আমরা আজ চোখ থেকেও অন্ধের ভান করছি, কান থেকেও বধিরের মতো না শোনার ভণিতা করছি। আজকের পৃথিবীকে বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে গোটা দুনিয়া আজ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের চোখের সামনে। দুনিয়ার এক প্রান্তে সাধারণ কোনও ঘটনা ঘটলেও মুহূর্তেই তার খবর সারাবিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের সরকারপ্রধানগুলো ক্ষমতার মোহ ও রাজনৈতিক স্বার্থে মায়ানমার সরকারের একতরফা হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরোচিত অত্যাচারের ব্যাপারে বরাবরই মুখে কুলুপ এঁটে আছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা !
বিশ্বমোড়ল আমেরিকা, রাশিয়া, জাতিসংঘসহ গোটা দুনিয়ার কাছে বিবেকবান মানুষের প্রশ্ন, মুসলমান হওয়াটাই কি আরাকানের নির্যাতিত নাগরিকদের অপরাধ? যে নির্যাতন আজ আরাকান, কাশ্মীর ও সিরিয়ায় চলছে তার শতভাগের একভাগও যদি কোনও মুসলিম দেশে অমুসলিমদের ওপর করা হতো তাহলে বিশ্বসংস্থা ও প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের শক্তিধর দেশগুলো এভাবে নীরব ভূমিকা পালন করতো ? নিশ্চয় না।
এর তাজা দৃষ্টান্ত ইন্দোনেশিয়ার পূর্বতিমূর ও সুদানের দারফুর। দেশ দুটিতে অমুসলিমদের ওপর তেমন কোনও অত্যাচারই হয়নি বরং পান থেকে চুন না খসতেই জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে অঞ্চল দুটিকে অনেকটা চাপের মুখে স্বাধীন বা আলাদা করে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্যাতনকারী ও আগ্রাসীশক্তি অমুসলিম আর নির্যাতিতরা মুসলমান হলে কেন ভিন্ন নীতি ? আরাকান ও কাশ্মিরের প্রশ্নে জাতিসংঘে অন্ধ ও বধির কেন ? কেনই-বা আরব রাষ্ট্রগুলোসহ মুসলিম বিশ্বের শাসকদের কোনও কার্যকর পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না ?
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা !
আপনাদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে; বর্তমান পৃথিবীতে মিডিয়ার শক্তি ও ক্ষমতা সমরাস্ত্রের চাইতে কোনও অংশে কম নয়। আপনাদের মধ্যে যারা মুসলমান তাদেরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে দায়িত্ব ও ক্ষমতার মাত্রা অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
আর যারা অমুসলিম তাদের দায়িত্বও কম নয়। বিভিন্ন দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও মানবাধিকার লঙ্গনের ইস্যুতে সাংবাদিকদের সোচ্চার হতে দেখা যায়; রাষ্ট্রকে আঁটঘাট বেঁধে নামতে দেখি। কিন্তু আজকে কথিত সভ্য দুনিয়ার চোখের সামনে অব্যাহতভাবে বিপুলসংখ্যক নিরীহ-নিরপরাধ ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর স্মরণকালের নিষ্ঠুরতম মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিবাদে মিডিয়াকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না ? আমরা আশা করি জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইয়েরা দলমত নির্বিশেষে আরকান-কাশ্মির-সিরিয়াসহ বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে আপনারাও সোচ্চার ভূমিকা পালন করবেন!
একটি মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের দাবি হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তথা সর্বস্তরের মুসলমানদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে মায়ানমার সরকারের গণহত্যা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আন্তর্জাতিকভাবে মায়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ জোরদার করুন। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে, জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিশ্বসংস্থাসমূহকে আরাকানের মুসলমানদের রক্ষায় কার্যকরি ভূমিকা পালন করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
আরাকানের চলমান গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধের দাবিতে নি্েনর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে-
১. আগামী ১৮ নভেম্বর জুমাবার চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিল
২. ২৫ নভেম্বর জুমাবার কক্সবাজার শহরে সমাবেশ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাকীম, মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মওলানা ইসহাক মেহেরিয়া, হেফাজত আমীরের প্রেসসচিব মাওলানা মনির আহমদ, মাওলানা হাজী মুজাম্মেল হক, মাওলানা কারী ইসমাঈল, মাওলানা হাফেজ ফায়সাল, মাওলানা মাহববুর রহমান হানিফ, মাওলানা জয়নাল কুতুবী, হাফেজ মুবিনুল হক, মাওলানা আনম আহমদুল্লাহ, মওলানা ইউনুস, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা হাফেজ জাকারিয়া, মাওলানা ওসমান কাসেমী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা শিব্বির আহমদ, মাওলানা আতিক প্রমূখ।
পাঠকের মতামত: