সাংবাদিক জাতির বিবেক, এক মহান পেশা। জাতির যেকোন ক্রান্তিলগ্নে সাংবাদিকরা তাঁদের হাতের কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে জাতিকে মুক্ত করেছে। ইতিহাসের এমন কোন পাতা নেই যেখানে কিছু অর্জন আছে সেখানে সাংবাদিকদের অবদান নেই। জাতিকে মুক্তির পথ দেখানোর জন্য সাংবাদিকরা তাঁর কলমকে বরাবরই অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করেছে। কিন্ত আজ সেই সাংবাদিকতা কোথায়?
কক্সবাজারে রয়েছে অসংখ্য সাংবাদিক। এই সাংবাদিকরা কতটুকু অবদান রাখছে সমাজ উন্নয়নে আজ তা প্রশ্নের সম্মুখীন। হয়তো সবাইকে দোষারুপ করা যাবে না। কিন্ত যখন ধাপে ধাপে তা আরো পিছনে হটতে থাকে তাহলে তা থেকে উত্তরণ কি সম্ভব?
যদি কলম সাংবাদিকদের অস্ত্র হয় তাহলে সে অস্ত্র যে চালাতে জানেনা তাকেও কি সাংবাদিক বলা যায়? একটা ক্যামেরা আর একটা নোট বুকই কি একজনকে সাংবাদিক বানাতে পারে? হয়তো তা জানার পরিধি আমার নেই। কিন্ত এতটুকু বুঝি অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ হয়তো ভালো ছবি তুলতে পারবে কিন্ত তাঁর পক্ষে একটা সংবাদ লেখা সম্ভব কি? তাহলে সেও কেন সাংবাদিক? কোন কোন প্রেসক্লাবের সদস্যও, আবার কেউ কেউ সংগঠনের উচ্চ পদেও পদস্থ। কার স্বার্থে কোন প্রয়োজনে কে বা কারা বসালো তাদের সেই সম্মানিত স্থানে? এই প্রশ্নগুলো কোন ব্যক্তির কাছে নয়, বিবেকের কাছে।
একটা সময় সাংবাদিকদের মূল্যায়ন ছিল অতি উচ্চে। একটা স্বার্থনেষী মহল তাদের নিজেদের স্থানকে পাকাপোক্ত করার জন্য যেনতেন ব্যক্তিকে সাংবাদিক বানিয়ে দিচ্ছেন। যার ফলে সাংবাদিকরা জাতির জন্য কাজ করছে নাকি কেউ কেউ এটাকে অর্থ উপার্জনের সহজ পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে তা ভাববার বিষয়।
সাংবাদিক তৈরীতে যাদের সবচেয়ে বড় অবদান তারা হলেন সম্পাদক। একজন সম্পাদকই সাংবাদিক তৈরীতে বড় ভূমিকা পালন করেন। সাংবাদিক পরিচয়ের আগে নিজের যোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে অনেক সম্পাদক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে সম্পাদক ও তার বানানো সাংবাদিকের হাতের কলমটা কি আসলেই কাজ করে কিনা তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ।
বর্তমানে যে কেউ হতে পারে সম্পাদক আর সাংবাদিক তো কোন ব্যাপারই না। নামমাত্র দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ প্রোটাল, সাপ্তাহিক, মাসিক এবং শুধু নামধারী নিউজ পেপারের অভাব নেই । তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি কক্সবাজারে। পর্যবেক্ষণে এমনও দেখা যায় এক ব্যক্তির এক নিউজ পেপার, সেই সম্পাদক, সেই সাংবাদিক। অথচ সাংবাদিক তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিউজ সংগ্রহ করতে হয়। কিন্ত যারা ছায়াতলে বসে সাংবাদিকতা করেন তাদের নিউজের প্রয়োজন হয়না। সাংবাদিকতায় ১ যুগ পার করে দিলেও তিনি তার জীবনে কোন নিউজ লিখেছেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে গভীর সন্দেহ। তাঁদের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে বড় মাপের সম্পাদক, সাংবাদিকের সাথে পরিচয়ের অভিজ্ঞতা। তাঁদের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কোন সংবাদ কোন দিন লিখেছেন তা বলতে পারবেন না, কিন্ত অনেক বড় সম্পাদক আর সাংবাদিকদের নাম বলতে পারবেন। যার ফলে সাংবাদিকতা এখন আর সম্মানজনক পেশা হিসেবে মূল্যায়ন পায়না।
কক্সবাজারে এত বেশি সাংবাদিক রয়েছে কেউ কারো কাছে শিখেনা, কেউ কারো কাছে দ্বারস্থ নয়। একবার কার্ড হাতে পেলেই নিজে নিজেই বড় মাপের সাংবাদিক বনে যায়। আবার কেউ কেউ সাংবাদিকতাকে ক্ষমতার একটা মাধ্যম বলেই গ্রহণ করছেন। বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত কিছু ব্যক্তিদেরকেও সাংবাদিক পরিচয় দিতে দেখা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে বিভিন্ন চালকদেরকেও কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। তাতে সাংবাদিকতার মান দিন দিন এত নীচে নেমে যাচ্ছে যে, সাধারণ মানুষের কাছে সাংবাদিক এখন আতঙ্কের নাম হিসেবেই পরিচিত। অর্থের দিকে ঝুকে সাংবাদিকের সততা বিলিন হয়ে গেছে। সমাজের বিভিন্ন অপরাধ চক্রের সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরকে কিছু সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব করতেও দেখা গেছে। যেকোন বিপদে-আপদে সেই অপরাধীর পাশে সাংবাদিকদের দাড়াতেও দেখা যায়। তাই সঠিক সাংবাদিকতা সমাজ থেকে প্রায় বিলিন।
জাতির বিবেক সাংবাদিকদের নিজের সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিজের পেশার বদনাম ঘটাচ্ছে এমন সাংবাদিকদের দিকেও নজর দিতে হবে। প্রথমত তাদেরকে বুঝাতে হবে এবং পরবর্তীতে কঠোর ব্যবস্থার মখোমুখি করতে হবে। এতে প্রত্যেকের কাজের মান, সমাজের প্রতি দায়বব্ধতা, দেশ প্রেম বাড়বে। আর এতে সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে সাংবাদিকদের প্রতি আস্থাশীল হবে সাধারণ মানুষ। তাতে সমাজের উপকার হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
লেখক: সেলিম উদ্দিন, সম্পাদক ও প্রকাশক- সাপ্তাহিক আলোকিত ঈদগাঁও (প্রস্তাবিত)
পাঠকের মতামত: