ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

দুঃসহ স্মৃতির ১৫ আগষ্ট : জাতির পিতার মৃত্যুর উপাখ্যান

15-aug-1975-bangabandhu-familyউপমহাদেশের অবিসংবাদিত নেতা- বাংলার ও বাঙ্গালীর প্রানের অহংকার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কিংবদন্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ৭ই মার্চের ডাকে পেয়েছিলাম এই সূর্য সবুজের দেশ।  তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যকটি আন্দোলন সংগ্রামে যার দিক, নির্দেশনাসহ  পূর্ব বাংলার অসহায় নিপিড়িত জনগনের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান।  বঙ্গবন্ধুর নাম কিংবা পরিচয় কোন বাঙ্গালির না জানা থাকলে তার জাতীয়তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৩ সালে তিনি “বেঙ্গল মুসলিম লীগ”এ যোগদান করেন এবং হোসেন শহীদ  সোহরাওয়ার্দীর অধীনস্থ রাজনীতিতে সংক্রিয় হন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবিশ থেকে দেশ বিভাজনের সময় বঙ্গবন্ধু কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক।১৯৪৮ সালে নতুন রাষ্ট পাকিস্তানি শাসকরা বাঙ্গালি প্রানের অনুভুতিতে প্রথম আঘাত হানে রাষ্টভাষার মাধ্যমে, পাকিস্থান সরকার কতৃক উর্দূ ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন শুরু হলে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন বিপ্লব ঘটানোর জন্য সারা বাংলার ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে ৪ ঠা জানুয়ারি তৎকালিন প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতা সম্পম্ন ছাত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন ‘পাকিস্থান ছাত্রলীগ’।
পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন ছাত্রনেতা। ক্রমে তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বের উচ্চপদে আসীন হয়েছিলেন। তার বড় গুণ ছিল তুখোড় বক্তৃতা প্রদানের ক্ষমতা। সমাজতন্ত্রের পক্ষসমর্থনকারী একজন অধিবক্তা হিসেবে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তনের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একসময় ছয় দফা স্বায়ত্ত্বশাসন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন যাকে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ছয় দফা দাবীর মধ্যে প্রধান ছিল বর্ধিত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন যার কারণে তিনি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের অন্যতম বিরোধী পক্ষে পরিণত হন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সাথে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিচার শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তিনি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। তথাপি তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয় নি।

পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন বিষয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিবে আলোচনা বিফলে যাওয়ার পর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মার্চ ২৫ মধ্যরাত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা পরিচালনা করে। একই রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। রহিমুদ্দিন খান সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে তবে তা কার্যকরা হয় নি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র চালনার চেষ্টা সত্ত্বেও তীব্র দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সর্বব্যাপী অরাজকতা এবং সেই সাথে ব্যাপক দুর্নীতি মোকাবেলায় তিনি কঠিন সময় অতিবাহিত করেন।
১৯৭৫ সাল, আগষ্টের এইদিনে, তখন ও ভোর হয়নি । আকাশে হালকা একটা আলো ।  ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের ৬৭৭ নম্বর  বাড়িতে সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । তখন  বাড়িতে গার্ড পরিবর্তনের সময় ।  বাড়িতে ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ  বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান , তাঁর স্ত্রী বেগম মুজিব , পুত্র শেখ কামাল , শেখ  জামাল , শেখ রাসেল , পুত্রবধুরা এবং ভাই শেখ নাসের সহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের আঠারোজন সদ্যস । সেদিন দেশীয় বর্ণচোর, জারজ ঘাতকেরা হামলা চলালো জাতিরপিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে,ঘাতকেরা যখন বঙ্গবন্ধুর সামনে এসে দাঁড়ালো বঙ্গবন্ধু তখন তাদের বললো তোমরা কি চাও?কেউ উত্তর দেয়না ।
ঘাতক হুদা আর নূর এর অস্ত্র থেকে একঝাঁক বুলেট ছুটে যায় বঙ্গবন্ধুর দিকে । নীরবে সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চারপাশে এবং সিঁড়িতে গড়িয়ে পড়তে থাকে রক্ত , জাতির পিতার রক্ত। জারজ হায়নার দল, বাড়ির ছোট ছেলে নিষ্পাপ শেখ রাসেল সহ পরিবারের সকল কে হত্যা করলো । জনকের স্মৃতি চিহ্ন বাংলা থেকে মুছে দিওয়া ছিল হায়নাদের লক্ষ্যে, আল্লাহ্‌র কৃপায় সে সময় সুদূর প্রবাসে ছিল বাঙ্গলার অগ্নিবীণা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গকন্যা শেখ রেহেনা।
লজ্জিত বোধ হয়, এমন ঘাতকেরা এই বাংলার নাগরিক ছিল তা ভাবতে। আজ তাদের জন্য আমরা পিতা হত্যাকারী বাঙ্গালী।  বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক রাষ্ট্র নায়করা শোকাহত শোক বানী প্রেরন করে। বিশ্বের অন্যতম ব্যাক্তিবর্গের শোকবার্তা তুলে আনলামঃ

১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় জোটনিরেপেক্ষ সন্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন,

“পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে শোষক শ্রেণী আরেক ভাগে শোষিত শ্রেণী, আমি শোষিতের দলে।”

এই ভাষণের পরে কিউবার রাষ্ট্রপতি ফিদেল কাস্ট্রো শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন,

“তুমি আজ যে ভাষণ দিয়েছ, তারপর থেকে সাবধানে থেকো। আজ থেকে তোমাকে হত্যার জন্য একটি বুলেট তোমার
পিছু নিয়েছে।”

‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায়না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যে কোন জঘন্য কাজ করতে পারে।’ – নোবেল
বিজয়ী উইলিবান্ট।

‘শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ  হারালো একজন মহান নেতাকে, আর  আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের
বন্ধুকে’ – ফিদেলকাস্ট্রো

‘আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিলো মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট।’ – ইয়াসির আরাফাত।

‘শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার
জনগনের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।’ – ইন্দিরা গান্ধী।

‘শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।’ – সাদ্দাম হোসেন।

‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে বাঙালি শুধু এতিমই হয়নি বিশ্ববাসি হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।’ -জেমসলামণ্ড, ইংলিশ এম পি

‘আওয়ামিলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজি ও গতিশীল নেতা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আর পাওয়া যাবেনা।’ -হেনরি কিসিঞ্জার।

‘বাঙালি জাতির মহান নেতা মুজিব যুগোশ্লাবিয়ার অনন্য সন্মানের পাত্র ছিলেন। তার মৃত্যুতে পৃথিবী একজন শান্তির সৈনিক হারালো, জোট নিরেপেক্ষ আন্দোলন জোট নিরেপেক্ষ দেশের একজন মহান রাষ্টনায়ককে হারালো।’ -যুগশ্লাবিয়ার পররাষ্ট মন্ত্রনালয়।

‘আওয়ামিলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী ও গতিশীল নেতা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আর পাওয়া যাবেনা।’ -হেনরি কিসিঞ্জার।

“যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা গৌরি বহমান,
তত দিন রবে কীর্তি তোমার জয় শেখ মুজিবুর রহমান

দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা রক্ত গঙ্গা বহমান
তবু নাই ভয় হবে হবে জয় মুজিবুর রহমান।’
– অন্নদাশংকর রায়।

জাতির পিতা হারানোর শোকে শুধু বাঙ্গালী নয় বিশ্ববাসী কেঁদেছে সেদিন। কাঁদছে বাঙ্গালী,বাঙ্গালী মর্মাহত । আমি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া, বাংলার নাগরিক
হতে পেরে গর্বিত।বঙ্গকন্যার হাতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। কন্যার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ভিশন বাস্তবায়ন হউক সেই কামনা।
ibrahim azad babu

ইব্রাহীম আজাদ বাবু
যুগ্ন- সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,
কক্সবাজার জেলা শাখা।

 

পাঠকের মতামত: