নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চকরিয়ার কোনাখালীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন কোনাখালী-ঢেমুশিয়া সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও লবণাক্ত বালু, নিন্মমানের পাথর ও কংক্রিট ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। উন্নয়নমূলক কাজের বিপরীতে নির্ধারিত হারে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে খোদ উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় লোকজন উন্নয়নমূলক কাজের নিুমান সম্পর্কে উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করলেও তিনি তাতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উলটো ঠিকাদারদের পক্ষেই সাফাই গেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দে কোনাখালী-ঢেমুশিয়া সড়কের দুই কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজ বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব পেয়েছে কক্সবাজারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জহুরী এন্টারপ্রাইজ। চকরিয়ার ঠিকাদার পারভেজের মালিকানাধীন আসিফ এন্টারপ্রাইজ কাজটি কিনে নিয়ে গত জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু করে। শুরুর দিকে সড়কের পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণের সময় নিুমানের ইট ও মাতামুহুরী নদীর লবণাক্ত বালু ব্যবহারের বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগ চকরিয়ায় তৎকালীন কর্মরত ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী শাফায়েত ফারুক চৌধুরীকে জানানো হলে তিনি ত্বরিতগতিতে কাজ পরিদর্শন করে নিন্মামনের ইট ও বালু অপসারণ করে গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করার জন্য ছোট ছোট পাথর কুচি, কংক্রিট ও বালু মিক্সিং করে সড়কের বাইরের সাইট অর্থাৎ নদীতে স্তূপ করে রাখেন ঠিকাদার। এদিকে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে মিক্সিং করা পাথরকুচি, কংক্রিট ও বালু লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হয় এবং রোদের প্রখর তাপে মিক্সারিং করা মালামালের ওপরে লবণের প্রলেপ বসে যায়।
গত রোববার বিকালে সরেজমিন দেখা যায়, জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হওয়া লবণযুক্ত পাথরকুচি, কংক্রিট ও বালু সড়কে কার্পেটিং কাজে ব্যবহার করছেন ঠিকাদার পারভেজ। লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত মালামাল ব্যবহারের বিষয়ে ঠিকাদার পারভেজের কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলম ভালো বলতে পারবেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
স্থানীয় কোনাখালী ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের দুই কোটি টাকা বাজেটে সড়ক সংস্কার কাজে লবণযুক্ত পাথরকুচি, কংক্রিট ও বালু ব্যবহারের ফলে সড়কটি অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে বারবার অবগত করা হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উলটো ঠিকাদারের পক্ষ নেন। এদিকে দ্রুত কার্পেটিং কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদার। এ নিয়ে এলাকার জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে ম্যানেজ করে ঠিকাদার এসব পরিত্যক্ত ও নিন্মামনের সামগ্রী ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশল জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে চকরিয়া নিউজকে বলেন, মালামাল নদীতে রাখা ছাড়া আমাদের আর অন্য কোনো উপায় নেই। জোয়ারের পানিতে ভিজে লবণযুক্ত হলেও এসব মালামাল সড়কের কার্পেটিংয়ে ব্যবহার করলে সড়কের কোনো ক্ষতি হবে না। সাংবাদিকরা তাকে ফোন করায় তিনি যথেষ্ট বিরক্তি প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে তাকে আর ফোন না করতেও নিষেধ করেন তিনি।
এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, ‘সড়কের কার্পেটিংয়ে বালু ও লবণযুক্ত পাথরকুচি ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। কাজের গুণগত মানের ক্ষেত্রে আমি কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজ করব না। এলজিইডির জেলা অফিস থেকে একটি টিম গিয়ে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এ কাজে উপজেলা প্রকৌশলীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পাঠকের মতামত: