লোহাগাড়া প্রতিনিধি ::::
লোহাগাড়ায় ইটভাটাগুলো পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় রয়েছে। ইটভাটা গুলোতে কাঠ পুড়ানো নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তোয়াক্কা না করে কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কাঠ পোড়ানোর কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তা দেখছে না বনাঞ্চল বিভাগ। প্রতিবছর ইটভাটা থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। এছাড়া এসব ভাটায় বিপুল পরিমাণ ভূ-উপরস্থ মাটি ব্যবহার করায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমি। বিধিনিষেধ অমান্য করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা এসব ইটভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র। ওইসব ইটভাটার মধ্যে বেশীরভাগ ইটভাটা জেলা প্রশাসনের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইট পোড়ানো হচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে। উপজেলায় মোট ৫৫টি ইটভাটা রয়েছে।
বছরের পর বছর প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের জ্ঞাতসারে ওইসব ইটভাটা গুলোতে ইট পোড়ানো হলেও এ ব্যাপারে এমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মধ্য দিয়ে সীমাবদ্ধ থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কতিপয় কর্মকর্তা ওইসব অবৈধ ইটভাটা থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। অথচ আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা ব্যবহার করে কার্বন নিঃসরণ প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেশীরভাগ ইটভাটা ফসলী জমি নষ্ট করে গড়ে তোলা হয়েছে। আবার অনেক ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আবার অনেকে ড্রাম সিমনী ব্যবহার করছে। নতুন নতুন ইটভাটাও তৈরী হচ্ছে। তাছাড়া ওইসব ইটভাটার মালিকগণ সরকারের নির্ধারিত ভ্যাটও পরিশোধ করছেনা বলে সুত্রে প্রকাশ। পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ের পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ইটভাটা করার কথা থাকলেও অনেকে তা মানছে না। এক দিকে লোকালয়ের পাশেই ফসলী মাঠে গড়ে উঠা ওইসব ইটভাটার কারণে যেমন নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি। অন্যদিকে, বনভূমি উজার করে কাঠ পোড়ানোর কারণে মারাত্মকভাবে দূষণ করা হচ্ছে পরিবেশ।
উপজেলার প্রায় ইটভাটা গুলোতে নামে কয়লা ব্যবহারের জন্য অল্প কয়লার স্তুপ রেখে ইট পুড়ানোর জন্য কাঠ ব্যবহার করে যাচ্ছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৩ এ বলা হয়েছে, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। কৃষি জমি পাহাড় টিলা থেকে মাটি কেটে ইটের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
এছাড়া পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া ইট উৎপাদন করলে অনধিক ১ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। ইট ভাটায় জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করলে অনধিক ৩ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৩ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শামীম হোসেন বলেন, লোহাগাড়ায় এতো ইটভাটা তা নজির বিহীন। প্রতিটি ইটভাটাতে ফসলি জমির উপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল নিয়ে গিয়ে ইট তৈরি করছে তাতে পরবর্তী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফসলী জমির উপরের অংশ কৃষকরা বিক্রি না করার জন্য কৃষকদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে প্রশাসনসহ সকলকে অভিহিত করা হয়েছে।
লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, বড়হাতিয়ায় ৩টি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করেছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারা ইটভাটায় ড্রাম চিমনী ব্যবহার এবং কাঠ পোড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, ড্রাম চিমনী ব্যবহারের ফলে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ও সালোকসংশ্লেষণ ব্যাহত হয়। পর্যায়ক্রমে লোহাগাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় অভিযান পরিচালিত হবে। ড্রাম চিমনী ব্যবহারে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পাঠকের মতামত: