মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা :::
বান্দরবানের লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নে ৬নং ওয়ার্ড বৈল্ল্যারচর এলাকায় গুপ্তধন পাওয়া নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগ উঠেছে। কিশোরীকে দিয়ে তন্ত্রমন্ত্র করে মাটি থেকে এই গুপ্তধন তোলা হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে বৈল্ল্যারচর এলাকার মৃত শফি এর স্ত্রী আম্বিয়া বেগম (৭০) এর বিরুদ্ধে। এদিকে কিশোরী জোবায়রা(১২) কে দিয়ে তন্ত্রমন্ত্র করায় সে গুরুতর অসুস্থ হয়েছে বলে দাবি করছে তা মা কুলসুমা বেগম। এইদিকে ঘটনাটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের ১৫/২০ গ্রামের হাজার মানুষের ঢল নামে ঘটনাস্থল আম্বিয়া বেগম এর বাড়ি ও অসুস্থ জোবায়রা দেখতে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পুলিশ সহ সরকারের নানান গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা কয়েক দফা পরিদর্শন করে।
কিশোরী জোবায়রা এর মা কুলসুমা বেগম(৩০) বলেন, আমার মেয়ে ৩য় শ্রেণীতে পড়ে। মাদ্রাসা থেকে নামিয়ে পুনরায় স্কুলে ভর্তি করায় তার কয়েক বছর নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে তার বয়স ১২ বছর। প্রায় মাস খানিক যাবৎ তার পেট প্রচন্ড ব্যাথা করছে দেখে অনেক ডাক্তার দেখায়। প্রথমে ঋতুস্রাব জনিত ব্যাথা মনে করে গুরুত্ব দেয়নি। পরে ব্যাথা বাড়লে মেয়ে মূল ঘটনা খুলে বলে।
জোবায়রা বলে, আমাদের পার্শ্ববর্তী আম্বিয়া বেগম গত রমজানের মাঝামঝি সময়ে একদিন রাতে আমার ঋতুস্রাব হয়েছে শুনে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সে আমাকে আরো আগে থেকে ঋতুস্রাব এর কথা বলে রেখেছিল। সেখানে সে আমাকে তার ঘরে মাটিতে বসায় এবং সাদা এক টুকরো কাপড়ে কিছু ঋতুস্রাব নেয়। আম্বিয়া বেগম আমাকে বলে, তুমি নাপাক, তাড়াতাড়ি গিয়ে গোসল করে নাও। আমরা যা পেয়েছি তার ভাগ তোমাকে দেব। তাছাড়া তোমার বিয়েতে স্বর্ণাংলকার যা লাগবে আমরা দিব। আর কাউকে এইসব বলবে না, তাহলে তুমি মরে যাবে। সেই থেকে আমার পেট ব্যাথা শুরু এখনও পর্যন্ত আছে। আমি ভয়ে বিষয়টি কাউকে বলিনি। ব্যাথা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া বলতে বাধ্য হয়েছি। সে সময় সেখানে পার্শ্ববর্তী সাজেদা বেগম(৪৫) স্বামী- আব্দু সাত্তার ছিল। এদিকে মেয়েটিকে ১৭ আগষ্ট বুধবার লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত আম্বিয়া বেগম জানায়, আমি ঋতুস্রাব নিয়েছি সত্য। বৈল্ল্যারচর বাজারের ডা. সুমনের মা বৈদ্য মহিলা আমাকে এই পরামর্শ দেয়। গুপ্তধন পাওয়ার বিষয়ে সে অস্বীকার করে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে বললে সে যেতে অনিহা প্রকাশ করে। জোবায়রাকে স্বর্ণাংলকার দেয়ার হবে কেন এমন প্রশ্নে কোন উত্তর না দিয়ে অসুস্থতার ভান করে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এছাড়া আম্বিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরের সামনের রুমের একটি জায়গায় মাটি খুঁড়া চিহ্ন রয়েছে। সেখানে সাংকেতিক চিহ্ন কিছু লিখা আছে। বিষয়টি ১৫ আগষ্ট সোমবার থেকে জানাজানি হলে আম্বিয়া বেগম ১৬ তারিখ থেকে অসুস্থতার ভান করে ঘরে শুয়ে আছে। হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছে তাকে দেখতে।
উক্ত ঘটনার মূল সহায়তাকারী সাজেদা বেগম প্রকাশ-সাজুনী স্বামী- আব্দু সাত্তার। এছাড়া সকল ঘটনার অন্তরালে এলাকার প্রভাবশালী মো. শাহী নেওয়াজ ও বৈল্ল্যারচর বাজারের গ্রাম্য ডাক্তার সুমন কান্তি রয়েছে বলেছে এলাকার সকল মানুষ বলছে। এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে ২দিন যাবৎ সুমনের ঔষুদের দোকার বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার পরে শাহী নেওয়াজকে বাড়ি দেখা যায়নি বলে অনেকে জানায়। প্রাপ্ত গুপ্তধন মো. শাহী নেওয়াজ পিতা- আব্দুল ছোবাহান এর জিম্মায় আছে এলাকার প্রায় সকলে ধারনা করছে।
বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, আমি লামার বাহিরে আছি। বিভিন্ন জন থেকে শুনছি। সত্য মিথ্যা জানিনা। তবে নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন আছে।
লামা থানা পুলিশের উপরিদর্শক মো. আজমগীর বলেন, ঘটনাস্থলে আমি গিয়েছিলাম। সু-নির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছেনা। বিষয়টা গুজব।
পাঠকের মতামত: