বান্দরবান প্রতিনিধি ::
জুন–ক্লোজিংকে সামনে রেখে বান্দরবান সদর, আলীকদম এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় সকড়পথ সংস্কারের কাজ দ্রুতসময়ের মধ্যে শেষ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা। যেনতেন প্রকারে কাজ শেষ করতে চায় তারা। আর সেজন্য ব্যাপক অনিয়ম–দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। রাস্তা সংস্কারের কাজ এতই নিম্নমানের যে, কাজ শেষ করার মাত্র ৭দিনের মাথায় কোন কোন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে এবং সড়কপথের নানাস্থান দেবে গেছে। স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, জুন ক্লোজিংকে সামনে রেখেই এলজিইডির কতিপয় প্রকৌশলীর যোগসাজসে এসব কাজ হচ্ছে। এর ফলে সংস্কারকৃত রাস্তাসমূহ দ্রুত অযোগ্য হয়ে পড়বে ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অর্থায়নে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কার (রক্ষণা–বেক্ষণ) কাজে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে কমদামি ইরানী ভিটুমিন এবং সড়কে ১২এম এম সিলকোড পাথরের স্তর দিয়ে কার্পেটিং করার নিয়ম থাকা সত্বেও ৬–৭এম.এম সিলকোডের কার্পেটিং দেয়া হচ্ছে। অতি নিম্নমানের ইট ব্যবহার করেই সড়কের পাশে নালা ও গাইড–ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। নালা ও গাইড–ওয়ালে সিমেন্ট–বালির মিশ্রণেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ জানায়, এ উপজেলায় ১কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে জারুলিয়াছড়ি স্কুলের সামনে থেকে সোনাইছড়ি পর্যন্ত ৫কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজটি সম্পাদনের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হয় মিল্টন টেডার্সের লাইসেন্সে। কার্যত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন আলীকদম উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কফিল উদ্দিন ও বিএনপি নেতা জুলফিকার ভুট্টো গং। কার্যাদেশ অনুযায়ী সড়কটি সংস্কারে কার্পেটিং কাজে ৮০ থেকে ১০০ গ্রেডের বিটুমিন এবং ১২ এম এম সিলকোড পাথরের স্তর দিয়ে কার্পেটিং করার কথা, কিন্তু তা করা হয়নি। কমদামি ইরানী বিটুমিন ব্যবহার করে মাত্র ৬ থেকে ৭ এম এম সিলকোড পাথরের স্তর দিয়ে কার্পেটিং কাজ দ্রুত সময়েই শেষ করছে তারা। ১২ ফুট প্রশস্ত রাস্তাটির মাপ–পরিমাপও সঠিক নেই বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ সড়কের সংস্কার কাজের অভিযোগ সম্পর্কে ঠিকাদার ভুট্টো বলেন, কাজের গুনগতমান ঠিক রেখেই সড়ক সংস্কারের চলছে। প্রকৌশল বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারাও নিয়মিত তদারকি করছেন। ঠিকাদার কফিল উদ্দিন দাবি করেন, রাস্তার সিলকোর্ড কার্পেটিং এর কাজ প্রায় শেষ। কয়েকটি স্থানে কিছুু সমস্যা থাকলেও তা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী তোফাজ্জেল হোসেন জানান, ইরানী ভিটুমিন ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়। কাজের গুনগতমান ঠিক রাখতে সার্বক্ষণিক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। অভিযোগসমূহ সঠিক নয়।
জেলার আলীকদম উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে মাত্র ৭দিনের মাথায়। সড়কের কাজে নিম্নমানের ভিটুমিনসহ সামগী্র ব্যবহারের ফলে এলজিইডি’র উন্নয়ন ও সংস্কার কাজগুলোর টেকসই হচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আলীকদম উপজেলা সদরে ২হাজার ৩’শ মিটার সড়ক সংস্কার(রক্ষণা–বেক্ষণের)কাজ চলছে। কে–হোসাইন এন্ড কোং লাইসেন্সের নামে সরকারি দলের নেতা নাছির উদ্দিন এবং বিএনপি নেতা আবু বক্কর উন্নয়ন কাজটি বাস্তবায়ন করছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ৮০থেকে ১০০ গ্রেডের উন্নতমানের বিটুমিন এবং ১২ এমএম সিলকোড পাথর ব্যবহার করে ১২ফুট প্রশস্ত সড়ক নির্মাণের কথা রয়েছে। চলতি অর্থ বছরের উন্নয়ন কাজটি জুন মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করার অজুহাতেই যেনতেনভাবেই কাজ করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় কোনভবেই এটি টেকসই হবে না এবং কার্যত সরকারি কোষাগারের বিপুল অর্থ অপচয় হবে বলেও শংকা প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা।
বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি কালভার্ট, ৪০ মিটার গাইড–ওয়াল ও ২কিলোমিটার নালা নির্মাণের কাজেও ন্নিমানের ইট, বালু, স্থানীয় পাথরসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। মেসার্স সেলিম এন্ড ব্রাদাসের্র লাইসেন্সে এই উন্নয়ন কাজটি বাস্তবায়ন করছেন জনৈক শাজাহান মিয়া। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদাররা প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করে নিম্নমানের ইরানী বিটুমিন ব্যবহার করে ১২ এমএম সিলকোর্ড পাথরের স্তরের স্থলে ৬–৭ এমএম কার্পেটিং কাজ দ্রুত শেষ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এ বিভাগের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ নেই, ভারীবর্ষণে নির্মাণাধীন আলীকদম উপজেলা পরিষদ সড়কের রাস্তার কিছু অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। সেগুলো পুনরায় ঠিক করে নেয়া হবে। সদর এবং নাইক্ষ্যংছড়িতে সড়ক সংষ্কারের কাজে কোন দুর্নীতি নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
পাঠকের মতামত: