ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

পাথর দস্যুতার কবলে লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রেঞ্জ

ক্যাপশান: নির্মাণাধীন আলীকদম-কুরুকপাতা-পোয়া মুহুরী সড়কে মাতামুহুরী রিজার্ভের সংরক্ষিত বন থেকে আহরণ করা পাথরের স্তুপ। ছবিটিশুক্রবারবিকেলেঠা-ারঝিরিএলাকা থেকে তোলা।

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম ::
পাথর দস্যুতার কবলে পড়েছে লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। পাথর দস্যুরা এখন বেপরোয়া। স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও বন বিভাগের বাধা উপেক্ষা করে চলছে রাতে-দিনে পাথরউত্তোলন। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অবিলম্বে রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবীতে প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে স্মারক লিপি পাঠিয়েছেন। এছাড়াওঅন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তরে অভিযুক্তদের নামের তালিকা দিয়ে অভিযোগ করেছেন।
প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে দেওয়া স্মারক লিপিতে বলা হয়, বান্দরবান জেলার আলীকদমে মাতামুহুরী রেঞ্জের সংরক্ষিত বনভূমির ওপর দিয়ে ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আলীকদম-কুরুকপাতা-পোয়া মুহুরী সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। এ বনাঞ্চলটি লামা বন বিভাগের আওতাভূক্ত। ১ লক্ষ ৩ হাজার একর আয়তনের বিশাল এ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের খাল ও ঝিরি থেকে অবৈধ ভাবে লাখ লাখ ঘনফুট পাথর উত্তোলনের চেষ্টা চলছে।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে আলীকদম উপজেলায় কোনঝিরি-খাল থেকে পাথর উত্তোলনের সরকারি অনুমতি নেই। আমার দপ্তর থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে গত ২ জানুয়ারি একটি পত্র দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে।
অভিযোগকারী  বলেন, বর্তমানে মাতামুহুরী রিজার্ভের ঠান্ডরঝিরি, ধুমচিখাল, বুঝিখাল, তুলাতলী, বাগানঝিরি, মহেশখালীঝিরি, ঠান্ডঝিরি, ক্রাইক্ষ্যংকলার ঝিরি, বলিরঝিরি, কালাইয়ারছড়া, কচুরছড়া, লাম্বু, বাম্বু ও ফুইট্টারঝিরি থেকে নির্বিচারে পাথর আহরণ করা হচ্ছে। এসব পাথর উত্তোলন ও পরিবহন কাজে আলীকদমের আবুমংমার্মা, জামাল ওরফে বাইট্টা জামাল, ইউনুচ, আবুল কালাম ঠিকাদার, শুভরঞ্জন, নাছির, ইলিয়াছ, মংচিং থোয়াই ও অংহ্লাচিং এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আব্দুর রহিম জড়িত।
স্মারক লিপিতে দাবী করা হয়, আব্দুর পাথর উত্তোলনের কাজে জড়িত শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীরা একটি সরকারি সংস্থার মদতপুষ্ট।
অভিযুক্ত আবুমং মার্মা বলেন, আমি রিজার্ভের বেশ কয়েকটি ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিলেই আমি পাথর তুলবো। অপরদিকে, আবুল কালাম ঠিকাদার বলেন, আমি রিজার্ভের বাইরে থেকে নানান উপায়ে পাথর সংগ্রহ করছি। এসব পাথর সরকারি কাজে ব্যবহার হবে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাইনথপ ¤্রাে বলেন, নির্বিচারে পাথর উত্তোলন করার কারণে এলাকার পরিবেশ-প্রকৃতির ক্ষতি আশংকা আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এসব নিয়ে স্মারকলিপি ও অভিযোগ পেশ করায় আমাকে একটি সংস্থার লোকজন গত সপ্তাহে ডেকে নিয়ে হুমকী ও নাজেহাল করেছেন। এখন কোথাও অভিযোগ করার উল্টো অভিযোগকারীরাই হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
মাতামুহুরী রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার সামসুল হুদা বলেন, বিভিন্ন ঝিরিও খাল থেকে পাথর উত্তোলনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পাথর শ্রমিক ও পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে বন কর্মীরা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। হাতে নাতে পাথর শ্রমিক, ব্যবসায়ী কিংবা পরিবহনে জড়িত গাড়ি পেলেই বন আইনে মামলা  দেওয়া হবে।
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বনআইন ১৯২৭ মতে পাথর হচ্ছে বনজ সম্পদ। বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া যারা পাথর উত্তোলন করছে তাদেরকে হাতে নাতে ধরা গেলে আইনগতব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ভাবেই সংরিক্ষত বন ভূমি থেকে পাথর উত্তোলন করতে দিবে না বন বিভাগ।

পাঠকের মতামত: