মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া জামায়াত ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এসেছে। ট্রাইব্যুনাল থেকে সন্ধ্যায় রায়ের কপি কারাগারে আসে।
এর আগে বিকাল ৩টার পরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এর আগে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ চার সদস্যের আপিল বেঞ্চের বাকি তিন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রায়ে স্বাক্ষর করেন। নিয়ম অনুযায়ী রায়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হবে।
এদিকে আপিল রিভিউ খারিজ হয়ে যাওয়ায় নিজামীর সামনে এখন কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করার সুযোগ রয়েছে। তবে তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে পরিবারের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এখন নিজামীকে আনুষ্ঠানিকভাকে আপিল রিভিউর রায় জানানোর পর প্রাণভিক্ষার বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইবে কারা কর্তৃপক্ষ। প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে বিধি অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রিভিউ খারিজের রায় ঘোষণার পরদিন নিজামীর সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানসহ ১০ জন দেখা করতে গেলে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দেন নিজামী।
এদিকে মতিউর রহমান নিজামী কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন রায় কার্যকর করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আসামিদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছিল। কিন্তু আগামি ২০ মে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় নবনির্মিত কারাগারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীদের স্থানান্তর করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে আসবাবপত্র ও নথিপত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টের অপিল বিভাগ। বর্তমানে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো প্রক্রিয়া বাকি নেই। তবে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। সে অনুযায়ী আগামী সপ্তাহের শেষদিকে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেই নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সংক্ষিপ্ত আদেশ বা পূর্ণাঙ্গ রায়ের যেকোনো একটি হলেই দ- কার্যকর করা যাবে। তবে এর আগে কয়েকটি রায়ের সময় আমরা সংক্ষিপ্ত আদেশ চেয়েছিলাম, কিন্তু তখন দেওয়া হয়নি। এবার তাই চাইনি। আশা করছি, খুব দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ রায়ই হাতে পেয়ে যাব।
এর আগের মামলা পর্যালোচনায় দেখা যায়, রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়া থেকে দ- কার্যকর হওয়ার মধ্যে ৫ দিনের বেশি সময় পাননি কোনো আসামি। মানবতাবিরোধী অপরাধে এ পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রথম ফাঁসি কার্যকর হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তার করা রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার দিনই রায় বের হওয়ার আগেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়। একই অপরাধে দলটির সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল রাতে। আর আপিল বিভাগে তার রিভিউ আবেদনটি খারিজ হয়েছিল ৬ এপ্রিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির দ- কার্যকর করা হয় ২১ নভেম্বর রাতে। এই দুজনের রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হয় ১৭ নভেম্বর।
পাঠকের মতামত: