নিউজ ডেস্ক :: এতদিন নমুনার জটে জর্জরিত চট্টগ্রামের পিসিআর ল্যাবগুলোতে এখন উল্টো নমুনা সংকট দেখা দিয়েছে। পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নমুনাই পাচ্ছে না ল্যাবগুলো। সরকারি ৪টি এবং বেসরকারি ২টিসহ চট্টগ্রামে মোট ৬টি পিসিআর ল্যাবে দিনে দেড় হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক দিনেও ল্যাবগুলোতে দেড় হাজারের কাছাকাছি সংখ্যায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার এ সংখ্যা হঠাৎ এক হাজারের নিচে নেমে আসে। এদিন (বৃহস্পতিবার) সবমিলিয়ে ৭৮১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চট্টগ্রামে। অথচ, আগের দিন (৮ জুলাই) পরীক্ষা হয় ১ হাজার ২৬৫টি। একইভাবে ৭ জুলাই ১ হাজার ৪৭১টি, ৬ জুলাই ১ হাজার ৩৬০টি এবং ৫ জুলাই ১ হাজার ৩১৮টি নমুনা পরীক্ষা হয় এসব ল্যাবে।
ল্যাব সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- ল্যাবে পরীক্ষার অপেক্ষায় কোন নমুনা এখন আর অবশিষ্ট নেই। আগের দিন যে সংখ্যক নমুনা জমা হচ্ছে, তার সবই পরের দিন পরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে। আর এখন দৈনিক নতুন নমুনা আসার সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। যা আসছে, তা-ই পরদিন পরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে। এতে করে নমুনার কোন ধরণের জট নেই। বরং দৈনিক কম সংখ্যক নমুনা আসায় পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নমুনাই মিলছে না বলে জানালেন ল্যাব সংশ্লিষ্টরা।
সিভিল সার্জন মনে করছেন, নমুনা কমে যাওয়ার পিছনে সরকারিভাবে ফি নির্ধারণ একটা কারণ হতে পারে। এখন উপসর্গহীন ব্যক্তির নমুনা দিতে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ মনে করছেন, তাছাড়া নমুনা দেওয়ার পর দীর্ঘ সময় ফল না পাওয়াও একটি কারণ হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৈনিক পাঁচশ’র কিছু কম-বেশি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাবে। গত ৫, ৬ ও ৭ জুলাই যথাক্রমে ৪৭৩, ৫১৫ ও ৫৩৪টি নমুনা পরীক্ষা হয় এই ল্যাবে। কিন্তু ৮ জুলাই পরীক্ষাকৃত নমুনার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৩৭টি। আর সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) মাত্র ১৩২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এই ল্যাবে। বিআইটিআইডি ল্যাবে দৈনিক প্রায় তিনশ নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। গত ৭ ও ৮ জুলাই যথাক্রমে ২৭৭ ও ২৭৬ টি নমুনা পরীক্ষা হয় এই ল্যাবে। কিন্তু ৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) এখানে পরীক্ষা হয়েছে ১৮১টি নমুনা।
দৈনিক নমুনা আসার সংখ্যা কমে যাওয়ায় সক্ষমতার তুলনায় কম সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে বলে জানালেন বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ ও চমেক ল্যাব ইনচার্জ অধ্যাপক ডা. এহেসানুল হক কাজল। দুজনই বলছেন, আগে নমুনার জট ছিল। এখন নমুনার জট নেই। উল্টো প্রতিদিন পরীক্ষার সক্ষমতার সমান সংখ্যক নমুনাও আসছে না। যা আসছে, তা-ই পরদিন পরীক্ষা করছি। ল্যাবে এখন একটি নমুনাও পরীক্ষার অপেক্ষায় অবশিষ্ট নেই বলেও জানান এই দুই ল্যাব ইনচার্জ। এদিকে, ধারাবাহিকভাবে দৈনিক দুই শতাধিক নমুনা পরীক্ষা হয়ে আসছিল ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। গত ৫, ৬, ৭ ও ৮ জুলাই এই ল্যাবে পরীক্ষাকৃত নমুনার সংখ্যা হয়েছে যথাক্রমে ২২৪, ২০৫, ২০৩ ও ২০৬টি। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) এই ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৭৭টি।
জানতে চাইলে নমুনা সংকটে ভুগছেন বলে জানালেন ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের ইনচার্জ অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আমাদের দৈনিক দুই শতাধিক নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। আমরা সেটি করেও আসছিলাম। কিন্তু এখন পরীক্ষার জন্য খুঁজেও নমুনা পাচ্ছি না।
প্রসঙ্গত, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে সরাসরি কোন কেন্দ্র থেকে নমুনা সরবরাহ হয় না। বিআইটিআইডি ল্যাব বা চমেক ল্যাব থেকেই পরীক্ষার জন্য এই ল্যাবে নমুনা দেয়া হয়ে থাকে। সরাসরি যেহেতু কোন কেন্দ্র থেকে নমুনা আসে না, সেহেতু বিআইটিআইডি বা চমেক ল্যাবের পানেই অপেক্ষায় থাকতে হয় ভেটেরিনারি ল্যাব সংশ্লিষ্টদের। বিআইটিআইডি এবং চমেক ল্যাব থেকে নমুনা চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানালেন অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, নমুনা চাইলে তাদেরই পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নমুনা নেই বলে জানাচ্ছেন। এরপরও বিআইটিআইডি ল্যাব থেকে যা দিচ্ছে, তা-ই পরীক্ষা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, দৈনিক তিনশোর কিছু কম-বেশি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। গত ৫ ও ৬ জুলাই যথাক্রমে ২১৩ ও ২০১টি নমুনা পরীক্ষা হয় এই ল্যাবে। কিন্তু এরপর থেকেই নমুনার সংখ্যা কমছে ল্যাবটিতে। ৭ ও ৮ জুলাই এই ল্যাবে যথাক্রমে ১৮৩ ও ১৭৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তবে ৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) তা কমে পরীক্ষাকৃত নমুনার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬২-তে। হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলায় সংগৃহীত নমুনাগুলো সরাসরি চবির এই ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়ে থাকে। সে হিসেবে এসব উপজেলা থেকে আগে যে সংখ্যক নমুনা আসতো, সংখ্যাটিও এখন কমে গেছে।
ল্যাবগুলোতে এখন উল্টো নমুনা সংকটের কথা জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, এতদিন নমুনার জট ছিল। আমরা পরীক্ষা করে পেরে উঠিনি। বাধ্য হয়ে কয়েক দফায় নমুনা ঢাকায় পাঠাতে হয়। কিন্তু এখন উল্টো পরীক্ষার জন্য নমুনা মিলছে না। আগের তুলনায় মানুষ কম নমুনা দেয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সিভিল সার্জন বলেন, নমুনা কমে যাওয়ার পিছনে সরকারিভাবে ফি নির্ধারণ একটা কারণ হতে পারে। এখন উপসর্গহীন ব্যক্তির নমুনা দিতে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। ২য় দফা বা ৩য় দফায় টেস্টও অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে সংক্রমণও কিছুটা কমে আসছে দাবি করে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন-এই কারণেও নমুনার সংখ্যা কমে আসছে বলে আমরা মনে করছি।
পাঠকের মতামত: