ঢাকা,রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

উখিয়া-টেকনাফে ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে….

yabaউখিয়া প্রতিনিধি :::

কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ইয়াবা পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে খ্যাত উখিয়া-টেকনাফের সাগর চ্যানেল, সড়ক পথ ও অরক্ষিত সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইয়াবার পাচার হয়ে থাকে। এছাড়া উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার শহর, গ্রাম-গঞ্জে ইয়াবা আসক্তদের সংখ্যা আশংকা জনক হারে বেড়েই চলছে।

বিশেষ করে উটতী তরুন-তরুনী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন ইয়াবা নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। তা অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনদিন যুব সমাজ অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে। যার ফলে উখিয়া-টেকনাফের প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে অপরাধমূলক কর্মকান্ড। স্থানীয় অভিজ্ঞদের মতে, ইয়াবা পাগলের বড়ি।

যা ব্যবহার করার ফলে একজন ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তি ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বিচার করা ভালমন্দ বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। উখিয়া টেকনাফের ইয়াবা আসক্তরা ছদ্ম নামে ইয়াবাকে পরীর বড়ি, ছোটভাই-বড়ভাই, উপরের মাথা-নিচের মাথা, বাবা, গুটি, বাবাজান, গোলাপজানসহ এ ধরনের নানান সংকেত ব্যবহার করে থাকে। দুঃখজনক সত্য ওই সর্বনাশী আগ্রাসন থেকে কখন এরা মুক্তি পাবে। এ নিয়ে সমাজ, দেশ, রাষ্ট্রের তা প্রতিরোধ অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে।

মিয়ানমারে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ইয়াবার সিংহভাগ চালান উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পাচারকারীদের মাধ্যমে এ দেশে পাচার হয়ে আসছে।

পাচারকারীরা মিয়ানমার এলাকা থেকে ইয়াবা এনে উখিয়া গ্রামগঞ্জে মজুদ পূর্বক সুযোগ বুঝে কৌশলে সারা দেশে পাচার করে আসছে। সীমান্তরক্ষী বিজিবির কড়া নজরদারি থাকা স্বত্বেও কিছু দালালরা রাতের আধারে হাতবদল করে বিভিন্ন স্থানে পাচারের পাশাপাশি খোলামেলা বাজারজাত করছে।

সহজলভ্যে নাগালে পাওয়ার সুবাদে ইয়াবা আসক্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেশার টাকা যোগাড় করতে পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ে সন্তানেরা নানা অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনা নিয়ে পরিবার পরিজনেরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত জীবন নিয়ে শংকিত হয়ে পড়ছে।

এমতাবস্থায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আন্তরিক না হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন, সামাজিক জীবন ব্যবস্থার বেহাল পরিণতি হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সরেজমিন কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে আলাপ করে জানা যায়, বস্তিতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অনেকেই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন রোহিঙ্গা জানায়, যুবতী মহিলারা ইয়াবা বিক্রিতে সম্পৃক্ত হওয়ার সুবাদের যুব সমাজ মরণনেশা ইয়াবার প্রতি ঝুঁকেছে। কুতুপালং এর বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল হক খান জানান, সন্ধ্যা নামার পরপরই দক্ষিণ কুতুপালং এলাকা ইয়াবার নগরীতে পরিণত হয়।

বিভিন্ন এলাকা থেকে নামী দামী বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে আসা অচেনা, অজানা লোকজন ইয়াবা সেবন করছে আর ইয়াবার চালান নিয়ে অনায়াসে সটকে পড়ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডিবি পুলিশ, হাইওয়ে, থানা পুলিশ ও বালুখালী কাস্টমস্ ইতিপূর্বে সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থামিয়ে ইয়াবা তল্লাশি অভিযান চালানোর ধারাবাহিকতায় ইয়াবা পাচার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। মাস দুয়েক ধরে সড়ক পথে কোন যানবাহন তল্লাশি না থাকায় ইয়াবার রমরমা বাণিজ্যের আশাতিত উত্থান হয়েছে।

বালুখালী দক্ষিণ পাড়া গ্রামের বয়োবৃদ্ধ শামশুল আলম জানায়, ইয়াবা আসক্ত হয়ে তার একটি মাত্র সন্তান পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে ভবঘুরে হয়ে গেছে। ইয়াবা আসক্ত ওই ছেলের অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে সমাজে মুখ দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। বালুখালী হাতিরডেরা গ্রামের প্রবাসী নিয়ামত আলী জানায়, অনেক কষ্ট করে প্রবাস জীবন কাটিয়ে উপার্জিত টাকা দেশের বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম।

তবে ছেলে ওই সমস্ত টাকা ইয়াবার পেছনে শেষ করেছে। বর্তমানে ওই ছেলের নৈতিক জীবন নিয়ে পরিবার পরিজন গভীর উদ্বিগ্ন বলে সাংবাদিকদের জানান। পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানায়, ইয়াবার কারণে পালংখালীর জনজীবনে অস্তিরতা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, প্রশাসন ইচ্ছা করলে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।

এ নিয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় ওই চেয়ারম্যান কড়া প্রতিবাদের মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

জানতে চাওয়া হলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি বলেন, ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।

পাঠকের মতামত: