ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

লামায় জীনামেজু অনাথ আশ্রম পাহাড়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে…

Jinamaju-Asrom-08-08-2016.01সাধন ত্রিপুরা , ইয়াংছা -লামা থেকে :
শিক্ষা দিক্ষায় অনগ্রসর ও চির অবহেলিত পশ্বাদ পদ পাহাড়ী জনপদ পার্বত্য জেলা বান্দরবনের লামা উপজেলার ফাঁশিয়া খালী ইউনিয়নের ইয়াংছা এলাকা। আর এই এলাকায় শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর গরিব, অনাথ ও মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াতে জীনামেজু অনাথ আশ্রম এখন অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে। এ ইউনিয়নের বনফুল ত্রিশ ডেবা এলাকায় প্রবাদ প্রতীম মহাপুরুষ জীনামেজু (ভান্তে) ভিক্ষুর অক্লান্ত পরিশ্রমে এ পতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে। বর্তমানে এ আশ্রমটি বান্দরবন জেলায় শিক্ষার ক্ষেত্রে অধিক পরিচিত ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।
জীনামেজু ভিক্ষু জানান অনেক সাধনা করে ও কাঠখড় পুড়িয়ে চকরিয়া-লামা-আলিকদম সড়কের পার্শ্বে ইয়াংছা কুমারীতে পাহাড় চুড়ায় অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়। প্রথমে সরকার থেকে কিছু জায়গা বন্দোবস্তি নিয়ে ১৯৯৪ সালে এ আশ্রমটি যাত্রা শুরু করে। অনেক শ্রম ও সাধনার পর প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণতা লাভ করে ১৯৯৯ সালে। (রেজি: নং- ১৫৭/২০০২)।
তিনি জানান, বর্তমানে অনাথ আশ্রমে ১২ জন ছাত্র ও ৪৫ জন ছাত্রী সহ সর্বমোট ৫৮ জন গরীব ও অনাথ শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মধ্যে ৫ জন পড়ে ইয়াংছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫১ জন পড়ে ইয়াংছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আর ২জন শিক্ষার্থী পড়ে লামা কলেজে।
জীনামেজু ভিক্ষু আরো জানান বর্তমানে ৫৮ জন শিক্ষার্থী থাকলেও সরকার থেকে অনুদান পাওয়া যায় ২০ জনের জন্য প্রতি মাসে জন প্রতি ১ হাজার টাকা করে। এছাড়াও বান্দরবন জেলা প্রশাসক, বান্দরবন জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন শোভাকাংখীদের কাছ থেকে এককালীন কিছু অনুদানে এই প্রতিষ্ঠানটি চলে। তবে তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও সামান্য। ৫৮ জন শিক্ষার্থীদের ৩ বেলা খাবার, কাপড় ছোপড়, বই, খাতা, শিক্ষা উপকরণ ঔষধ, প্রাইভেট শিক্ষদের বেতন ইত্যাদি এই সামান্য আয় দিয়ে পোষায় না। বর্তমানে এটি চালাতে কষ্ট সাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। আবার স্কুলের লেখা পড়া ছাড়াও আশ্রমে ২ জন প্রাইভেট শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়ানো হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যয়টা অনেক বেশী হয়ে গেছে। আশ্রমের দ্বিতল যে মূল ভবনটি রয়েছে তা অনুদান হিসাবে দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে বীর বাহাদুর এম.পি।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে পাহাড়ের উপর বিশাল জায়গায় প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে আশ্রমটি অবস্থিত। বিকাল বেলায় দেখা গেছে আশ্রমের ভিতর ৮/১০ জন করে শিক্ষার্থী দল বেধে বেঞ্চে বসে পড়তেছে। ২ জন প্রাইভেট শিক্ষক তাদের পড়াচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও খুব সুন্দর। প্রত্যেকের জন্য রুমে রুমে আলাদা কাঠ ও বাঁশের সংমিশ্রনে চৌকি রয়েছে। এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায় এখানে এসেছি মা-বাবাকে হারিয়ে। তবে আশ্রমের সেবা ও ভালো শিক্ষা পেয়ে আজ আমি গর্বিত। অতিতের সব দু:খ ভুলে গেছি।
ছাত্রীদের জন্য রয়েছে আলাদা হোস্টেল ব্যবস্থা। আলাদা রান্না ঘর ও ডাইনিং হলও রয়েছে। জীনামিজু ভিক্ষু জানান ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে প্রার্থনা হল, মেডিটেশন সেন্টার, বুদ্ধিষ্ট মিউজিয়াম হল, কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার সহ লাইব্রেরী যদি সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়। এ ধরনের মানুষ গড়ার কারখানায় সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ বরে জানান এলাকাবাসি।

পাঠকের মতামত: