ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

লামা হাসপাতালে বেড়েছে ডাক্তার, কমেছে সেবা

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::

বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়লেও সেবা বাড়েনি। প্রতিদিনই বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রোগীরা। হাসপাতালে খাতা-কলমে ১০জন এমবিবিএস ডাক্তার থাকলেও অধিকাংশ ডাক্তারের টানা অনুপস্থিতিতে রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা না বাড়ায় ও হাসপাতালের নানা অনিয়মের কারণে সেবা প্রত্যাশী মানুষের হাহাকার বেড়েই চলেছে।

২০১৪ইং সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির প্রচেষ্টায় লামা হাসপাতাল ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কাগজে কলমে ৫০ শয্যা হলেও ২০১৮ইং সালের ১লা জানুয়ারী হতে ৫০ শয্যার হাসপাতালের যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে লামা হাসপাতালে ১০ জন মেডিকেল অফিসার (এমবিবিএস) ডাক্তার রয়েছে।

লামা হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তাররা হলেন, ডা. উইলিয়াম লুসাই (উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা), ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (কনসালটেন্ট সার্জন), ডা. মাকসুদা বেগম (গাইনী কনসালটেন্ট), ডা. মো. বেলায়েত হোসেন ডালি (কনসালটেন্ট শিশু), ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদার (আবাসিক মেডিকেল অফিসার), ডা. এ.বি.এম আবু সুফিয়ান (মেডিসিন বিষেশজ্ঞ), ডা. মো. মাজেদুর রহমান (মেডিকেল অফিসার), ডা. জিয়াউল হায়দার (মেডিকেল অফিসার), ডা. রেজাউল করিম (মেডিকেল অফিসার) ও ডা. মোহাম্মদুল হক (মেডিসিন বিষেশজ্ঞ)।

সরজমিনে গেলে সেবা প্রত্যাশী রোগীরা দুঃখ করে বলেন, ১০ জন ডাক্তার কর্মরত থাকলেও তাদের মধ্যে ডাঃ উইলিয়াম লুসাই, ডাঃ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও ডাঃ মো. শফিউর রহমান মজুমদার ছাড়া অন্যদের দেখা মিলেনা। কালেভাদ্রে দেখা মিললেও কয়েক ঘন্টা পরে চলে যান এবং রোগীরা তাদের চিনেননা বলেও জানান। আক্ষেপ করে বলেন, অন্য ডাক্তারদের মধ্যে ডাঃ এ.বি.এম আবু সুফিয়ান (মেডিসিন বিষেশজ্ঞ) ও ডাঃ মো. মাজেদুর রহমান (মেডিকেল অফিসার) দুইজনকে প্রেষণে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় আরো শূণ্যতা সৃষ্টি হয়। অনেক ডাক্তার বেতন নেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কিন্তু দায়িত্ব পালন করেন অন্য হাসপাতালে।

উপজেলার প্রায় ২ লাখ লোকের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অধিকাংশ ডাক্তারের অনুপস্থিতির ফলে বহির্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা দিতে দুই-এক ডাক্তারদের হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রোগীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ২শ থেকে ৩শ রোগী উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে চিকিৎসা নিতে বহির্বিভাগের ডাক্তারদের কাছে ভিড় করে। স্থানীয়রা ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বান্দরবান সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. উইলিয়াম লুসাই ডাক্তারদের অনুপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ডাক্তারদের কেউ-কেউ ছুটিতে থাকে। কেউ বিভিন্ন মিটিংয়ে যোগ দেন। কেউ আবার ট্রেনিং করতে এলাকার বাইরে থাকেন। কেউ ডেপুটেশনে অন্য হাসপতালে কাজ করছেন। ফলে কাগজে-কলমে ডাক্তার অনেক থাকলেও হাসপাতালে ডাক্তার দেখা যায় না।

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. অং সুই প্রু মারমা জানান, লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারদের নিয়মিত অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হবে। আন্তরিকতা দিয়ে কাজ না হলে আইনের প্রয়োগ করা হবে।

পাঠকের মতামত: