ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

বাঁশখালী বেড়িবাঁধ ও ব্লক বসানোর

মেয়াদ শেষ হয়, কাজ শেষ হয় না

বাঁশখালী প্রতিনিধি :: বাঁশখালী বেড়িবাঁধ ও ব্লক বসানোর কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু শেষ হয় না কাজ। বাড়ে প্রকল্পের সময় ও ব্যয়। নিম্নমানের কাজ ও অনিয়ম-দুর্নীতিতেই ঘুরপাক খাচ্ছে প্রকল্পটি। দুই মাস আগে ছনুয়া অংশে ৬ প্যাকেজে ৪০ কোটি টাকার টেন্ডার ও ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কাজ পায় হাসান এন্ড ব্রাদার্স। প্রতিষ্ঠানটি প্রেমাশিয়া ও কদমরসুল অংশে কাজ করেছিল। নিম্নমানের কাজ ও বাঁধ দেবে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তারপরও ‘কমিশনের’ মাধ্যমে বিতর্কিত ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের কাজের মান বজায় রাখতে না পারা ও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১০ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ১৬ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাসান এন্ড ব্রাদার্সের নামও রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর-২) নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিঠি এসেছে অনেক পরে। এর আগে কাজের দরপত্র দেওয়া হয়েছে।’

পাউবো সূত্র জানায়, প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের ব্যয় ২০৯ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকায়। কয়েক দফায় বেড়ে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ২৯৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আট বছর ধরে বাড়ানো হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ।

নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান বলেন, ‘কাজের প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ছনুয়া অংশে ৬ প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে।’

অনিয়মের অভিযোগ : প্রকল্পের শুরু থেকেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ লেগে রয়েছে। সাগরের নোনামিশ্রিত পানি দিয়ে ব্লক নির্মাণ, বেড়িবাঁধের কিনারা থেকে মাটি নিয়ে বাঁধ নির্মাণ, নুড়িপাথর ব্যবহারসহ এন্তার অভিযোগ ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদন্ত রিপোর্ট : পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিম্নমানের ব্লক নির্মাণে কর্মকর্তাদের দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছে টাস্কফোর্স কমিটি। ২০২০ সালে প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়। বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কাজে সরকার নির্ধারিত চাপন শক্তি না থাকায় বিপুল পরিমাণ সিসি ব্লক বাতিল করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাস্কফোর্স কমিটি। যেটি তোফায়েল কমিটি নামে অধিক পরিচিত। বুয়েটে পরীক্ষার পর টাস্কফোর্স কমিটির গণনা শেষে সিসি ব্লক ফেলার নিয়ম রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকার চিফ মনিটরিং কর্মকর্তা কাজী তোফায়েল হোসেন ২০২০ সালের ৩০ জুন মহাপরিচালকের কাছে সিসি ব্লকের নিম্নমান ও স্পেসিফিকেশনের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্লক তৈরির সময়ে কেন ব্লকগুলো ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করানো হয়নি, তা বোধগম্য নয়। ব্লকের খারাপ মানের জন্য দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্লক তৈরির সময় ব্লকগুলো টেস্ট করানো হলে ঠিকাদাররা পূর্ব থেকে সতর্ক হতেন। একসঙ্গে এতগুলো ব্লক বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাত পেত। প্রকল্পগুলো হল বাঁশখালীর ফোল্ডার নং ৬৪/১এ, ৬৪/১বি ও ৬৪/১সি ক্ষতিগ্রস্ত অংশে স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্প, সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের নিম্নমান এবং স্পেসিফিকেশন বহির্ভূত ব্লক নির্মাণ এবং সন্দ্বীপ উপজেলার ফোল্ডার নং ৭২ এর ভাঙনপ্রবণ এলাকায় তীর প্রতিরক্ষা। ট্রাস্কফোর্স কমিটি নিম্নমানের ব্লক নির্মাণে দায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা এড়াতে পারেন না বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

তিন সদস্যের কমিটিতে আহবায়ক ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকার প্রধান প্রকৌশলী (পুর) পরিকল্পনা ফজলুর রশিদ। সদস্য সচিব কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন। সদস্য হলেন ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী (কন্ট্রাক এন্ড প্রকিউরমেন্ট সেল) মো. হাফিজুল আলম।

বেড়িবাঁধ : ছনুয়া ছাড়া অংশ বেড়িবাঁধের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু বাঁধের বিভিন্ন অংশ দেবে গেছে। এসব অংশে আবার জরুরিভিত্তিতে বরাদ্দ দিয়ে বাঁধ সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে। ২৯৩ কোটি টাকার প্রকল্পের ভেতরে জরুরিভিত্তিতে ছোট ছোট প্রকল্প নিয়ে সংস্কার করা হয়। এসব টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পাঠকের মতামত: