ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফ -উখিয়াতে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে চলছে হযবরল অবস্থা

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥taknaf 17.09.2017

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়াতে ত্রাণ বিতরণে চলছে হযবরল অবস্থা। রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের নামে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে রাস্তার উভয় পাশে যেখানে সেখানে ত্রাণ বিতরণ করায় দীর্ঘ যানজটে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। ত্রাণ নিতে এসে গত ২ দিনে ৩ রোহিঙ্গার প্রাণ গেছে আহত হয়েছে আরো ৩ জন ।

কক্সবাজার টেকনাফ সড়কে রোহিঙ্গাদের বিক্ষিপ্ত চলাচল, হ-য-ব-র-ল ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনার আশংকা বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার একদিনেই ৩ রোহিঙ্গা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তম্মধ্যে ১ জন হোয়াইক্যং এবং ২ জন লেদায়। আহতের বিষয়টি টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশণার (ভুমি) প্রণয় চাকমা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ২ শিশু এবং ১ নারী বালুখালীতে মারা গেছেন। তাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গারা রাস্থার পাশে ত্রাণ পাওয়ার আশায় অবস্থানরত রোহিঙ্গারা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বিকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং তেচ্ছিব্রীজ এলাকায় রাস্থার দুই পাশে অবস্থানরত এক রোহিঙ্গা শিশু জেসমিন আক্তার (৭) নামে এক শিশু মাহিন্দ্রা গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়। সে মংডু ছৈয়দ হোসনের মেয়ে। রোহিঙ্গা নারী, শিশু. বৃদ্ধ রোহিঙ্গারা ত্রাণ পাওয়ার আশায় সারাদিন টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কে অপেক্ষায় থাকেন। ত্রাণের গাড়ি আসতে দেখলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির উপর ঝাপিয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা। এতে অনেকেই গাড়ির নিচে, অনেকেই মানুষের পদদলিত হয়। যারা রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ দেয়ার জন্য দেশের ও দেশের বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে তারা কোন নিয়মনীতি না মেনে ত্রাণ বিতরণ করে। সেই ত্রাণের জন্য হাহাকার হয়ে ছুটতে থাকে এসব নিয়মনীতি না মেনে ত্রাণ বাহি গাড়ির কারণে সড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ির যানজট লেগেই থাকে। ফলে সাধারণ যাত্রিদের দুর্ভোগের শেষ নাই।

হাইওয়ে রামু ক্রসিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন ‘হাইওয়ে পুলিশ টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কে যানজট মুক্ত করার জন্য ব্যপক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং পাশাপাশি জেলা পুলিশও কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী দেয়ার জন্য আসা ত্রাণবাহী গাড়ি কোন নিয়মনীমিত না মেনে ত্রাণ দেয়ার কারণে বিশেষ করে সড়কে যানজট লেগেই থাকে। তারপরও আমরা সড়ক যানজট মুক্ত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’।

জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা ও পুলিশ ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলা পরবর্তী সহিংসতায় নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এখনো অনেক রোহিঙ্গা সীমান্তের ওপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। নিজ দেশে নির্যাতিত নিপীড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা এখন টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং গ্রামে গঞ্জে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কেউ ক্যাম্পে, কেউ পাহাড়ে, কেউ গ্রামে গঞ্জে, কেউ বা রাস্তার ধারে বসে বসে দিন রাত পার করছেন। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে খেয়ে না খেয়ে লাখো রোহিঙ্গা মানবেতর জীবন যাপন করছে। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন স্বয়ং সরকার প্রধান থেকে শুরু করে দেশের সব শ্রেনীর মানুষ। রাজনীতিবিদ ও কুটনীতিকরা দলে দলে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের স্বচক্ষে দেখতে ছুটে আসছেন। সাধ্যমত সকলে সহযোগীতাও করছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, রোহিঙ্গারা কিছু পাওয়ার আশায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের দু’পাশে বসে থাকেন। কোন গাড়ী দেখলে তারা দৌঁড়ে আসেন। কার আগে কে নিতে পারে তাদের মধ্যে এমন প্রতিযোগীতা চলে। স্থানীয়রা জানান প্রতিদিন চলন্ত গাড়ী থেকে বিক্ষিপ্তভাবে ত্রাণের প্যাকেট ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এসময় দৌঁড়াদৌড়িতে অনেক রোহিঙ্গা হতাহতও হয়েছে। রোহিঙ্গা যুবকরা নারী এবং শিশুদের কাছ থেকে ত্রাণের প্যাকেট ছিনিয়ে নিচ্ছে। অনেকে ত্রাণ দেওয়ার নামে ফটোসেশন করতে গিয়ে সড়কে গাড়ী দাঁড় করিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে নিছক অপ্রয়োজনীয় কিছু বিতরণ করেই যাচ্ছে। গাড়ী দেখলে ছুটে আসা রোহিঙ্গাদের হুড়াহুড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট লেগেই থাকে।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের মাঝে যত্রতত্র ত্রাণ না দিতে জেলা প্রশাসন নির্দেশনা দিলেও কেউ মানছেন না। আগ্রহী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্টদের জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলে জমা দিতে বলা হলেও কেউ কারও কথা শুনছেন না। লোক দেখানো ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ করে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাঝে সাধ্যমত খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে গাড়ী দিয়ে রাস্তার পাশে বসে থাকা এবং গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিতে স্থানীয় বাসিন্দাগণ দাবি জানিয়েছেন।

টেকনাফ উপজেলা ত্রাণ সেলের সমন্বয়ক সহকারী কমিশনার (ভুমি) প্রণয় চাকমা বলেন, যত্রতত্র ত্রাণ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে টেকনাফেও একটি ত্রাণ সেল খোলা হয়েছে। উক্ত সেলের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তায় সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।

—————-

পাঠকের মতামত: