ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

তেল ও গো-খাদ্যের চাহিদায়

চট্রগ্রামে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
সূর্যমুখী ফুলের আবাদ দিনদিন বাড়ছে গ্রামীণ জনপদে। সূর্যমুখী ফুলে ফোটা এক ধরনের শুকনো দানা (বিচি) থেকে উৎপাদিত হয় সান ফ্লাওয়ার তেল, যা ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত; যার চাহিদা সারাদেশে। এর দামও বেশ ভালো।

পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় ‘খইল’ নামের এক ধরনের গরুর খাদ্য। বর্তমানে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা এখন সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষাবাদ শুরু করেছেন।

রাউজান: নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে ফুটন্ত সূর্যমুখী ফুল। যেন দিগন্তজুড়ে হাজারো ফুটন্ত ফুল চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। আর এসব সূর্যমুখী বাগানে ছবি, সেলফি তুলতে নানা বয়সী ছেলে-মেয়েরা প্রায় প্রতিদিন ভিড় করছে। উৎসুক বিভিন্ন বয়সীদের কাছে এসব সূর্যমুখী ফুল শুধু সৌন্দর্য্যরে ডালপালা মনে হলেও বাস্তবে দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর একটি উপকরণ এই সূর্যমুখীর বাগান। সূর্যমুখী ফুলের শুকনো দানা (বিচি) থেকে উৎপাদিত হয় সান ফ্লাওয়ার তেল। পাশাপাশি এ সূর্যমুখী ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় ‘খইল’ নামের এক ধরনের গরুর খাদ্য।

এ বাস্তবতায় রাউজানে কৃষকদের মাঝে ‘সূর্যমুখী’র আবাদে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তুলনামূক লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এ চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন উপজেলার অসংখ্য সাধারণ কৃষক। এ কারণে এ বছর উপজেলায় আগের বছরের তুলনায় সূর্যমুখীর চাষাবাদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় এবার ৩২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ১৫ হেক্টর জমিতে। ভবিষ্যতে চাষাবাদ শত হেক্টর জমি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছে রাউজান কৃষি অফিস।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাউজান পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঢেউয়া হাজীপাড়া, ৭ নম্বর ওয়ার্ড, পশ্চিম গুজরা, ৭ নম্বর রাউজান সদর ইউনিয়নের নাতোয়ান বাগিছা, কদলপুর, পূর্ব গুজরা, ডাবুয়া, হিংগলা, চিকদাইরসহ বিভিন্ন এলাকায় এবার সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। খরচের তুলনায় দ্বিগুণ লাভের আশায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ‘অনেক কৃষক এবার ও গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষ করেছে। এটি লাভজনক হওয়ায় এখানে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।’

উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার কাজী আতিকুর রহমান চৌধুরী বলেন ‘সরকারের দেয়া প্রণোদনা, বীজ, সারসহ যাবতীয় সমর্থন দেয়ায় রাউজানে সূর্যমুখী চাষ বেড়েছে। তিনি বলেন- ‘রাউজানে বারি-৩, স্থানীয়, হাইব্রিডসহ তিন জাতে সূর্যমুখী চাষ হয়। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতি হেক্টর থেকে ৩ টন বা তিন হাজার কেজি সূর্যমুখীর দানা (বিচি) হয়। পাশাপাশি গরুর খাদ্য ‘খইল’ও পাওয়া যায় সূর্যমুখী থেকে। যা বিক্রি হয় ২০ টাকা কেজিতে। মোট কথা, এ চাষে কৃষকের প্রতি কানিতে ৩৫ হাজার বা তার বেশি লাভ হয়।

সীতাকুণ্ড: নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সীতাকুণ্ডে সূর্যমুখী ফুলের প্রথম চাষেই বাজিমাত করেছেন ৫ কৃষক। তাদের ক্ষেত এখন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। ফলে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা সূর্যমুখী বাগানের ফুল দেখতে এখন প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তৈল উৎপাদনের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সীতাকুণ্ডে প্রথমবারের মতো দুটি ইউনিয়নে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়েছে। মোট ১০ জন কৃষককে কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রণোদনা দিয়ে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়েছে উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকের একটি ক্ষেতে। এই ক্ষেতটির মালিক আলী হোসেন জুয়েল যৌথভাবে চাষ করেন তার বন্ধু আরিফ হোসেন, পারভেজ, এমরান ও ইদ্রিসকে সঙ্গে নিয়ে। পরে এই ৫ জনের চেষ্টা ও কৃষি অফিসারের দিক নির্দেশনায় একটি সফল সূর্যমুখী ক্ষেত গড়ে উঠে।

এদিকে তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে এই ক্ষেতটি গড়ে তোলা হলেও জমিটি হলুদ সূর্যমুখীতে ছেয়ে যাবার পর এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় এখন প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন এই ক্ষেতে। ক্ষেতটির উদ্যোক্তা আলী হোসেন জুয়েল বলেন, আমাদের ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পিপাস চৌধুরী আমাকে সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের পরামর্শ দেন। এজন্য তিনি বিনামূল্যে বীজ, সারও প্রদান করেন। কিন্তু আমার কাছে সূর্যমুখী চাষ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছিলো। কিন্তু আমার চার বন্ধু বলেন সবাই মিলে চাষ করবেন। শেষে ৩৩ শতক জমিতে ডিসেম্বরের শেষ দিকে বীজ বপন করি। মার্চের প্রথমে ফুল আসে। এখন পুরো ক্ষেত ফুলে ছেয়ে গেছে। এতে প্রায় এক কেজি বীজ ও প্রচুর সার লেগেছে। এ ছাড়াও ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আর এ জমি থেকে ৭০ লিটার সূর্যমুখী তেল এবং প্রায় ২৫০ কেজি গো খাদ্যের খৈল উৎপাদন হবে। যা বিক্রি করলে ৫০-৬০ হাজার টাকার মতো পাওয়া যাবে। অর্থাৎ খরচের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি আয় হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাবীব উল্লাহ বলেন, সূর্যমুখী ফুলের চাষে সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়েছে। তাই আগামীতে আরো অনেক কৃষক সূর্যমুখী চাষ করবে বলে আমরা আশাবাদী।

পাঠকের মতামত: