অনলাইন ডেস্ক :: কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের প্রকোপ চিহ্নিত হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরের বাইরেও কক্সবাজার জেলার নানা স্থানে এই রোগের সংক্রমণ ঘটছে বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।
জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন ও রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে। আরও প্রায় অর্ধশত আছেন মুমূর্ষু অবস্থায়।
জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে ৩৭৮ জন এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫৮ জন রোহিঙ্গা, ১২০ জন বাংলাদেশি। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১৬৫ জন পুরুষ, ১৬৪ জন নারী, ৪৮ জন শিশু এবং একজন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি। এখন ২৭৩ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাঁদের ২১১ জন রোহিঙ্গা। বর্তমানে যাঁরা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ৪০ জন মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন।Eprothomalo
জেলায় এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে গত প্রায় আড়াই বছরে (২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে এখন পর্যন্ত) মারা গেছেন
৫২ জন। তাঁদের মধ্যে ৩৮ জন বাংলাদেশি ও ১৪ জন রোহিঙ্গা। সর্বশেষ মারা গেছেন ৪৫ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা নারী। তিনি গত বছর মিয়ানমার থেকে এসেছিলেন। আক্রান্ত ও মৃত বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই কাজের সূত্রে মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। ধারণা করা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে থাকার সময় তাঁদের সংক্রমণ হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র জানায়, আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের ২০ জনকে বাংলাদেশে আসার পর শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যরা মিয়ানমারে থাকতেই তাঁদের সংক্রমণের বিষয়ে জানতেন।
এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে ৩৭৮ জন এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫৮ জন রোহিঙ্গা, ১২০ জন বাংলাদেশি।
বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের শিবিরে এইডস আক্রান্ত কয়েকজন নারী-পুরুষ আছেন। ওই শিবিরের আক্রান্ত একজন রোহিঙ্গার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশ রক্ত সঞ্চালন ও একই সিরিঞ্জ অনেক মানুষ ব্যবহারের কারণে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এইচআইভি/এইডসের প্রকোপ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি সম্মতি না দিলে এইডস সংক্রমণের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় না। যদি বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব হতো, তাহলে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতো বলে ধারণা করা যায়। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ খুবই চিন্তার মধ্যে আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিষয়টি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে কক্সবাজারের সুশীল সমাজ, তথা সচেতন সাধারণ মানুষকেও। কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আয়াছুর রহমান বলেন, এটি অবশ্যই একটি বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। যেহেতু এটি পর্যটন এলাকা, দেশের সব জায়গা থেকে এখানে পর্যটক আসেন, সেহেতু সারা দেশে এই মারাত্মক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। খবর : প্রথম আলোর
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, সারা দেশে এইচআইভি/এইডস শনাক্ত করার পরীক্ষা কেন্দ্র (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার) আছে ছয়টি। এর একটি কক্সবাজারে। এসব কেন্দ্রে বিনা মূল্যে এই পরীক্ষা করার সুযোগ নেই। বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বলে কক্সবাজারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার আব্দুল কুদ্দুস ও টেকনাফ প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন] প্রথম আলো
পাঠকের মতামত: