ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

আ.লীগের জোটে যোগ দিচ্ছেন চরমোনাই পীর ও আল্লামা শফী!

sofiসি এন ডেস্ক:
সময় যতো যাচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা বাড়ছে চরমোনাইপীর ও হেফাজতের আমির আল্লামা শফীর। যার কারণে রাজনৈতিক মাঠও কিছুটা সন্দেহ আর কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে দোলাচালে। সম্প্রতি কিছু কর্মকা- তাই জানান দিচ্ছে। পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই মঞ্চে দেখা যাচ্ছে পরস্পরদের। সবকিছু মিলে সরকার দলীয় জোটে যোগ দেয়ারও কথা বলছেন অনেকেই।

জানা গেছে, শনিবার বিকেলে দেশের সবচেয়ে বড় কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মাদ্রাসার দারুল হাদিস মিলনায়তনে ‘ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে বাংলা ভাষা সাহিত্য বিভাগ।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল্লামা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, মন্ত্রী বাংলাভাষার প্রচারে আলেমদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি মাদ্রাসা অঞ্চলের এমপি ও মন্ত্রী। তাই আমরা তাকে দাওয়াত দিয়েছি। মন্ত্রীকে দাওয়াত দেওয়ায় হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক পোক্ত হচ্ছে— এমন প্রসঙ্গে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজতের সঙ্গে কারও কোনও শত্রুতা নেই। তাই, আমরা তাকে দাওয়াত দিয়েছি।

যদিও পানিসম্পদমন্ত্রীকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় দাওয়াত দেওয়ার বিষয়ে সাধারণ আলেমদের মধ্যে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, বিষয়টি সন্দেহজনক। কওমি মঞ্চের চেয়ারম্যান মুফতি মোহাম্মদ তাসনীম মুহাম্মদ তাসনিম বলেছেন, উম্মুল মাদারিসে একজন মন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করেছেন হয়তো হাটহাজারীর হুজুর সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে। কিন্তু এতে সব শিক্ষাঙ্গনে খারাপ প্রভাব পড়বে। সালেহ মাহমুদ নামে একজন আলেম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তারা করলে ইসলামের জন্য অন্যরা করলে সেটা হয় দালালি। আজব পৃথিবী।’ মাওলানা কবির আহমাদ মাসরুর বলেছেন, এক দিকে হানিফ সাহেব বললেন, হেফাজত ৮০ কোটি নিলো মাহমুদুর রহমানের কাছ থেকে। অন্যদিকে হাটহাজারীর হুজুর পানিসম্পদমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করে অনুষ্ঠান করলেন। চমৎকার!

জানা যায়, আগামী ৩০ এপ্রিল ও ১ মে তেজগাঁওয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেছেন চরমোনাই পীরের অনুসারীরা। ওই মাহফিলের প্রথম দিন প্রধান অতিথি করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে। দ্বিতীয় প্রধান অতিথি থাকবেন চরমোনাই পীর, ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। জানা গেছে, পহেলা বৈশাখে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘নাস্তিক ব্লগারদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আজকের দিনে মুক্তচিন্তার নামে ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু একটা লিখে দেওয়াই যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এসব লেখাকে মুক্তচিন্তার না বলে নিম্নমানের হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এগুলো গ্রহণযোগ্য নয় এবং সরকারও কোনওভাবে এসবের দায়দায়িত্ব নেবে না।’ প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর আলেমদের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক প্রকাশ্যে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী পহেলা বৈশাখের বক্তব্যকে স্বাগত জানান হেফাজত প্রধান আল্লামা শফী। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ দিয়ে ১৭ এপ্রিল একটি বিবৃতি দেন। ওই বিবৃতিতে শফী বলেন, ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী মানসিক যন্ত্রণা ও ক্ষোভের যে প্রকাশ করেছেন, তাতে হেফাজতের দাবির যৌক্তিকতা জোরালোভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আল্লামা শফী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেদিন বাংলাদেশের কোটি-কোটি মুসলমানের হৃদয়ের কথাই বলেছেন।

গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর একইভাবে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হলে, তা সহ্য করা হবে না। এদেশে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলার কোনও অধিকার কারও নেই। ধর্ম পালন করুন বা না করুন। কিন্তু অন্যের ধর্মে আঘাত দিতে পারবেন না। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হলে তা সহ্য করা হবে না।

এছাড়া, গতবছরের ৭ আগস্ট ঢাকায় ঘরের ভেতর ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় খুন হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকও একই ধরনের কথা বলেছিলেন। নিলয়ের আগে ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু ও অনন্ত বিজয় দাশ খুন হন।

সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিক খুন হয়েছেন। একের পর এক মুক্তমনা লেখক-ব্লগার খুন হলেও হত্যারহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের ওই কথায় ওই সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।

জানা গেছে, হাটহাজারী মাদ্রাসায় পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের উপস্থিতি কওমি আলেমদের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। দৃশ্যত বিষয়টিকে রাজনৈতিক বললেও কোনও কোনও আলেম বলছেন ভিন্ন কথা। তারা দাবি করেছেন, পানিসম্পদমন্ত্রী গত রমজানে লালবাগে খেলাফতে ইসলামীর আলোচনা সভায় গিয়েছিলেন। এরপর গত ৭ জানুয়ারি বিএনপি জোট ছাড়ে ইসলামী ঐক্যজোট। হেফাজত নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দাবি করেছেন, তেমন কিছু না। উনি এলাকার মন্ত্রী, তাই মাদ্রাসায় উনাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সফর করছেন আল্লামা শফী। হেলিকপ্টরে করে আয়োজকরা তাকে দাওয়াত দিচ্ছেন। আল্লামা শফীও দাওয়াত গ্রহণ করছেন।

হেফাজত সূত্রে জানা যায়, কোনও এলাকাতেই আল্লামা শফীকে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। বরং বরাবরই সরকারের আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সহযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। গত সপ্তাহে উত্তরবঙ্গের সফর সম্পর্কে গণমাধ্যমে কোনও তথ্য দেয়নি হেফাজত। পাশাপাশি রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় অন্তত তিনদিন থেকে নারায়ণগঞ্জসহ নগরীর কয়েকটি মাদ্রাসায় প্রোগ্রাম করেন শফী। সব আয়োজনই নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। কালবেলা

পাঠকের মতামত: