ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সরকারি হলো শতবর্ষী রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়

ramu khijari h sc সোয়েব সাঈদ, রামু :::

অবশেষে সরকারিকরণ হলো ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার শতবছরেও ঐতিহ্যের ধারক এ বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ না হওয়ায় চরম হতাশায় ছিলেন রামুর ৫ লাশ মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল এ বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণের জন্য জোর প্রচেষ্টা শুরু করেন। এরই প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যালয়টিকে সরকারীকরণের ঘোষনা দেবেন এমন আশায় বুক বেঁেধছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ পুরো রামুবাসী।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৭৯টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দেন। শিক্ষা মন্ত্রনালয় গত ১৩ জুলাই কক্সবাজার জেলা থেকে একমাত্র রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৭৯টি বিদ্যালয়ের নাম শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দেয়। সরকারীকরনের জন্য নির্ধারিত এসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সকল প্রকার নতুন নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাখায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস ও রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে এক সপ্তাহের মধ্যে রামু উপজেলায় রামু কলেজ সহ এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করা হলো। দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের ঘোষনা রামুবাসীর জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।॥ ঐতিহ্যবাহি রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ॥

শ্রেষ্ঠ দানবীর উ. খিজারী দালাল মায়ানমার হতে এসে ১৯১৪ সালে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যা এখনো রাখাইন তথা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। দক্ষিন চট্টগ্রামের প্রথম প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি খিজারী স্কুল নামেই পরিচিতি লাভ করেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও দেশে-বিদেশে প্রশাসনের উচ্চ পদে এ বিদ্যারয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা স্ব-মহিমায় সমুজ্জ্বল। কিন্তু জেলা প্রথম বিদ্যালয়টি স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকার সরকারী করণের উদ্যোগ নিলেও স্বাধীনতার স্ব-পক্ষের ব্যক্তিবর্গ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করায় তা বাস্তবায়ন করেনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে এ বিদ্যালয়টি এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষনের অন্যতম আশ্রয়স্থল ছিলো। ইতিমধ্যে ভিশন ২০২১ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে শিক্ষামন্ত্রনালয় ঘোষিত ‘মডেল স্কুল’ প্রকল্পে বাস্তবায়িত হয়ে বিদ্যালয়টি যুগোপযোগি শিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি রামুর বৌদ্ধপল্লী ও মন্দিরে সংগঠিত ন্যাক্কারজনক হামলা ও সহিংসতার পর থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও আইনশৃংখলা বাহিনীর আশ্রয়স্থল হিসেবে এ বিদ্যালয় ভূমিকা রেখেছে।

জানা গেছে, এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের। তিনিও প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহি এ প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারীকরণের জন্য বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত সুপারিশ করেছেন।

এ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোশতাক আহমদ। তিনি বলেন, নানা কারনে ইতিপূর্বে বিদ্যালটি সরকারীকরণ হয়নি। অথচ বিদ্যালয়টি অনেক আগেই সরকারী হওয়া প্রয়োজন ছিলো। এখন প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণের ঘোষনা দেয়ায় রামুবাসী নয় পুরোদেশ উপকৃত হবে।

রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম জানান, সরকারিকরণের ঘোষনায় পুরো বিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এটা রামুবাসীর জন্য শ্রেষ্ঠ অর্জন হয়ে থাকবে।

তিনি আরো জানান, প্রাচীন এ বিদ্যালয়টি জেলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ক্ষেত্রে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে। বর্তমান সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। একারনেই প্রধানমন্ত্রী বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণের ঘোষনা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যালয়টি সরকারীকরণের জোরালো দাবীতে সোচ্ছার ছিলো রামুবাসী। এ দাবী বাস্তবায়নে রামুর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সমাবেশ, র‌্যালী, সচেতনতামূলক প্রচারনা সহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। কয়েকবছরে রামুতে প্রধানমন্ত্রীর কয়েকদফা আগমনে বিদ্যালয় সরকারী করণের দাবীতে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেষ্টুন দিয়ে প্রচারনা চালানো হয়েছিলো। তাই কাংখিত দাবি বাস্তবায়ন হওয়ায় রামুর সর্বস্তুরের জনতার মাঝে এ সংবাদ আনন্দের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে।

 রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল্লাহ, সিনিয়র শিক্ষক মৌলানা বখতেয়ার আহমদ, নুরুল হোছাইন, আবুল কালাম ও নাজনীন আকতার মেরী জানান, ১০০ বছরের প্রাচীন এ বিদ্যালয়টি সরকারি করণ করায় বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারিবৃন্দ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সাংসদ কমলের প্রতি কৃতজ্ঞ।

জেলার বরণ্যে শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোশতাক আহমদ বলেন, কক্সবাজার জেলা শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সাহিত্যের প্রসার ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূমিকা পুরো জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। প্রতিষ্ঠার ১০০ বছরেও এ বিদ্যালয়টি সরকারী করণ না হওয়া পুরো জেলাবাসীর জন্য দূর্ভাগ্যজনক ছিলো। এখন বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যালয়টিকে সরকারীকরণের ঘোষনা দিয়ে রামুবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী পূরন করেছেন। সরকারের এ ঘোষনা রামুর শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

এদিকে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারি, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকবৃন্দ জেলার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল সহ সরকারিকরণে ভূমিকা পালনকারি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: