ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

বোরো ধান-চাল ক্রয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শংকায়

জেলায় ১১ হাজার টন, মাসে ক্রয় মাত্র ১ হাজার টন

এম. বেদারুল আলম, কক্সবাজার :: চলতি মৌসুমে সরকারি বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সংগ্রহের এক মাস সময় চলে গেলেও সামান্য পরিমাণই ধান ও চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে জেলা খাদ্য অফিস। জেলায় ১০ হাজার ৯৯৭ মেট্টিকটন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও ১ মাসে মাত্র ১ হাজার ৩৭ মেট্টিকটন ধান ও চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য অফিস।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নানা অবহেলা, কৃষকদের সাথে কড়াকড়ি আরোপ এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ার কারণে এবং কর্মকর্তারা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান না কিনে কতিপয় নির্দিষ্ট ডিলারের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের চুক্তিসহ নানা কারণে সরকারের ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা বলছেন সময় যেহেতু আরো আছে সেহেতু আমরা উক্ত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার ব্যাপারে আশাবাদী।
সরকার এ বছর বোরো মওসুমে কেজি প্রতি ২৭ টাকায় ধান, ৪০ টাকায় সিদ্ধ চাল এবং ৩৯ টাকায় আতপ চাল ক্রয়ের নির্দেশনা দেয় জেলা খাদ্য অফিসকে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান ও চাল ক্রয় শুরু হয় এবং চলবে ১৬ আগষ্ট পর্যন্ত। সেই হিসাবে গত ২৬ মে ১ মাস সময় পার হলেও গতকাল পর্যন্ত জেলা খাদ্য অফিস মাত্র ১৫ শতাংশ ধান, ১৩ শতাংশ সিদ্ধ চাল এবং ৩ শতাংশ আতপ চাল ক্রয় করতে সক্ষম হয়েছে। পুরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাড়িয়েছে।

জেলা খাদ্য অফিসসুত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে জেলায় ১০ হাজার ৯৯৭ মেট্টিকটন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে ও গত ১ মাসে মাত্র ১ হাজার ৩৭ মেট্টিকটন ধান ও চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য অফিস। এরমধ্যে ধান ৪৬৫০ টনে ক্রয় হয়েছে ৬৯৩ টন, সিদ্ধ চাল ২৪৭৭ টনে ৩০০ টন, আতপ চাল ৩৮৪৬ টনে মাত্র ৪৪ টন।

উপজেলা ভিত্তিক ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা হলো সদরে ৬০২ টন, চকরিয়ায় ১৪৭২ টন, পেকুয়ায় ৬৪৮ টন, কুতুবদিয়ায় ১৫৫ টন, মহেশখালীতে ৬০৯ টন, রামুতে ৫২০ টন, উখিয়ায় ৫৫৪ টন, টেকনাফে মাত্র ৯০ টন।
জেলায় বোরো ধান ও চাল ক্রয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শংকায় কিনা এবং তা অর্জন বিষয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুদীপ্ত চাকমা চকরিয়া নিউজকে বলেন- বেরো ধান ও চাল ক্রয়ে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। একমাস অতিক্রান্ত হলেও আরো আড়াই মাস সময় আছে। তাছাড়া ধান ও চাল ক্রয়ে কিছু ডিলারদের সাথে গত ২৩ মে চুক্তি হয়েছে। বাজারে ধানের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় কৃষকদের মাঝে ধান বিক্রিতে অনীহা রয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার এটাও একটা কারণ। ধান ও চাল ক্রয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাদের অবহেলা ও নানা অনিয়মের বিষয়টি ঠিক নয় বলেও জানান। তিনি লক্ষমাত্রা অর্জন নিয়ে আশাবাদী বলে মতামত ব্যক্ত করেন।

এদিকে সারা দেশের সবচেয়ে বেশি দূর্নীতিগ্রস্থ খাদ্য গুদাম হিসাবে পরিচিতি কক্সবাজারের সদর খাদ্য গুদাম যার অনিয়ম দূর্নীতির কারণে গত বছর ৩টি পৃথক তদন্ত কমটি গঠন করা হয়। দূর্ণীতি প্রমানিত হওয়ায় ২ কর্মকর্তাকে বদলী ও করা হয়। এখন অনেকটা সদর খাদ্য গুদামের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে বলে দাবি নবাগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরমানের।

উল্লেখ্য গত বছর সদর খাদ্য অফিসে ধান বিক্রি করতে আসা একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন সে সময় সদর খাদ্য কর্মকর্তা ধানের মান নির্ণয়, মানদন্ড নির্ধারণ, চিড়া, আদ্রতা নির্ণয়সহ নানা নিয়মের মারপ্যাঁচে ফেলে নানা হয়রানি করে। ফলে অনেক কৃষক সদর খাদ্য গুদামে ধান দিতে না পেরে অন্য উপজেলায় ধান বিক্রি করে। সরকার কৃষকদের স্বার্থে নায্যমূল্যে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও মূলত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নানা অবহেলা ও মানহীন অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়ার আশংকায় কৃষকরা  এ বছরও গুদামে ধান বিক্রি করতে আসছেনা।

এদিকে খাদ্য মজুত গড়ে তুলতে আভ্যন্তরীন বাজার থেকে সরকারের সংগ্রহের বড় একটি অংশ বোরো চাষ থেকে সংগ্রহ করতে চাচ্ছে সরকার। সংকটকালে বাজার নিয়ন্ত্রণে এই মজুত সরকাররে অন্যতম হাতিয়ার। একই সঙ্গে কৃষককে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাও এই সংগ্রহের অন্যতম উদ্দেশ্য।

গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু হয় তা চলবে ১৬ আগষ্ট পর্যন্ত। যেভাবে মাঠে কাজ চলছে তা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শংকা রয়েছে। যেহেতু পুরো ১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার ১২ শতাংশই মাত্র অর্জন করতে পেরেছে জেলা খাদ্য অফিস। ফলে সংকটে খাদ্য হওয়ার আশংকা রয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ জরুরি।

পাঠকের মতামত: