ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

আ.লীগ নেতার দখল থেকে ৮ একর খাস জমি পুনরুদ্ধার. অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে ভূমিহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণে বাঁধা!

 

 

 

মুহাম্মদ মনজুর আলম, চকরিয়া (কক্সবাজার) ঃ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ভূমিহীনদের মাঝে বিনামূল্যে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কাজে বার বার বাঁধাগ্রস্ত করছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। উপজেলা প্রশাসনের নির্দিষ্ট করা ইউনিয়নের উচিতারবিল মৌজাস্থ সরকারের এক নাম্বার খাস খতিয়ানের দুই দাগের প্রায় ৮ একর জায়গা দখলে রেখে সেখানে এক্সকাভেটর দিয়ে পুকুর খনন করছিলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই মৌজায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দখলে নেওয়া খাস জায়গা পুনরুদ্ধার করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে পুকুর খননে ব্যবহৃত আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াসের এক্সকাভেটরটি। একইসময়ে উদ্ধারকৃত জায়গার চতুর্দিকে লাল পতাকা উঁচিয়ে দেওয়াসহ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। জব্দকৃত এক্সকাভেটরটি আগামীকাল শনিবারের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৌঁছে দিতে আদেশমূলে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন এবং পরিষদের সচিবকে।

চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সলিম উল্লাহ অভিযোগ করেন, সরকারের এক নাম্বার খাস খতিয়ানের উচিতার বিল মৌজার বিএস ৪০৪ দাগের সাড়ে সাত একর জায়গা দখল করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। যে জায়গাটি ভূমিহীনদের জন্য বাড়ি তৈরির জন্য নির্ধারিত। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক গত ২৯ এপ্রিল তিনিসহ ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার, একদল কর্মচারী ও শ্রমিকেরা গিয়ে সংরক্ষিত বনের ভেতর অবৈধ ইটভাটা লাগোয়া প্রায় সাড়ে সাত একর খাস জায়গা পরিচিন্হিত করে চারিদিকে লাল পতাকা উঁচিয়ে দেওয়াসহ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। কিন্তু তারা চলে আসার পর সেই খাস জায়গার লাল পতাকা এবং সাইনবোর্ড গুঁড়িয়ে দেয় গিয়াস উদ্দিনের ইটভাটার ম্যানেজার অনুপ রূদ্রসহ তার লোকজন। এর পর সেই জায়গা ইটভাটার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে ইট বানানো, লাকড়ি মজুদ করাসহ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে আসছেন। শুধু তাই নয়, দখলে নেওয়া সেই খাস জায়গার টিলা শ্রেণীর পাহাড় সাবাড় করে সেখানে এক্সকাভেটর দিয়ে পুকুর খননেরও কাজ শুরু করেন আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস। সরজমিন এই পরিস্থিতি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) সলিম উল্লাহ প্রত্যক্ষ করে আসার পর সেখানে সাড়াশি অভিযান শুরু করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন। এ সময় সাথে ছিলেন পুলিশসহ ভূমি সংশ্লিষ্ট অসংখ্য কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং নিয়োজিত শ্রমিকেরা।

আদালত সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন কর্তৃক দখলে নেওয়া খাস জায়গার টিলা শ্রেণীর পাহাড় এক্সকাভেটর দিয়ে কেটে সাবাড় এবং পুকুর খনন করা হচ্ছিল। অভিযানের সময় পাহাড় কাটায় ব্যবহৃত এক্সকাভেটরটি জব্দ করা হয়। ইটভাটার অভ্যন্তরে দখলে রাখা প্রায় সাড়ে সাত একর খাস জায়গা উদ্ধারের পর ফের লাল পতাকা উঁচিয়ে দেওয়া এবং সাইনবোর্ড সাটিয়ে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন এবং ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্দেশ দেন, জব্দকৃত এক্সকাভেটরটি আগামী শনিবারের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৌঁছে দিতে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য নির্ধারিত খাস জায়গা দখলে নিয়ে টিলা শ্রেণীর পাহাড় সাবাড় ও নাল শ্রেণীর জমি এক্সকাভেটর দিয়ে কেটে সেখানে পুকুর খনন করার অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পাহাড় সাবাড় ও পুকুর খননে ব্যবহৃত একটি এক্সকাভেটর জব্দ করাসহ ইটভাটার নিয়ন্ত্রণ থেকে সাড়ে সাত একর খাস জায়গা পুনরুদ্ধার করে চারিদিকে ফের লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকভূক্ত প্রকল্প খাস জায়গায় ভূমিহীনদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করতে গিয়ে বার বার বাঁধা পাচ্ছিলাম ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে। আজ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পুনরুদ্ধার করা দুই মৌজার প্রায় আট একর খাস জায়গায় ভূমিহীনদের জন্য বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করা হবে।’

ইউএনও আরো বলেন, সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গা দখলে নিয়ে টিলা শ্রেণীর পাহাড় কাটাসহ জমির শ্রেণী পরিবর্তনের অভিযোগে পরিবেশ আইনেও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কিছু জারজ সন্তান তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’

 

পাঠকের মতামত: