ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা গ্রেফতার হতে পারেন

কককক-1-300x193সি এন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় ঢাকায় ও লন্ডনে বিএনপির হাইকমান্ড কয়েক দফা বৈঠকে মিলিত হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে আনা সাংবাদিক শফিক রেহমান। ঢাকায় ও লন্ডনে কয়েক দফা বিএনপির হাইকমান্ডের কোথায় কোথায় বৈঠক হয়েছে এবং বৈঠকে কারা কারা ছিল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে যে কোন সময় বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা গ্রেফতার হতে পারেন বলে জানা গেছে।
শফিক রেহমান বৈঠক করতে ২০১২ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রে যান তখন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাসকারী চট্টগ্রামের মিল্টন ভূঁইয়া বিমানের টিকেট, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, এফবি আই সদস্যের ঘুষের জন্য ৩০ হাজার ডলার দেয় শফিক রেহমানকে। এ মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এদিকে ঘুষের মাধ্যমে এফবি আইয়ের নথি কেনায় যুক্তরাষ্ট্রেও শফিক রেহমানের বিচার হওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। দ্বিতীয় দফায় আরও ৫ দিনের রিমান্ডে আনার পর বাসভবন থেকে এফবি আইয়ের নথিপত্র জব্দসংক্রান্ত বিষয়ে ডিবি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে।
ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর শফিক রেহমান পুলিশকে জানিয়েছেন, এফবি আইয়ের কিছু নথি মাহমুদুর রহমানের কাছেও আছে। শফিক রেহমানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা অব্যাহত থাকা অবস্থায় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে আনার জন্য ইতোমধ্যেই যে আবেদন জানানো হয়েছে তার শুনানির দিন ধার্য আছে ২৫ এপ্রিল সোমবার। মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে পাওয়া গেলে দু’জনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দু’জনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে শফিক রেহমানের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা এফবি আই নথিপত্র ও মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবে বলে আশাবাদী ডিবি।
গত ১৬ এপ্রিল সকালে ইস্কাটনের বাসা থেকে সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে দুই দফায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। জিজ্ঞাসাবাদে শফিক রেহমানকে যেসব প্রশ্ন করা হয়েছে তার অনেক বিষয়ে মাহমুদুর রহমান জানেন বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন শফিক রেহমান। কিছু নথিপত্র মাহমুদুর রহমানের কাছে আছে বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানান তিনি। তাই মাহমুদুর রহমানকেও পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আগামী ২৫ এপ্রিল তার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তাকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পেলে প্রয়োজনে দু’জনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ডিবি।
ডিবির এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, শফিক রেহমান যুক্তরাষ্ট্রে বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এ বিষয়ে দু’বার বৈঠক হয়েছিল, সেখানে কে কে ছিলেন? আলোচ্য বিষয় কি ছিল, তা মাহমুদুর রহমান জানতে পারেন। শফিক রেহমানের দেয়া তথ্য যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে শফিক রেহমানকে।
যুক্তরাষ্ট্রেও শফিক রেহমানের বিচার সম্ভব
ঘুষের মাধ্যমে এফবি আইয়ের নথি কেনায় যুক্তরাষ্ট্রেও শফিক রেহমানের বিচার হওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। যুক্তরাষ্ট্রে বে আইনী পন্থায় গোপন তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা গুপ্তচরবৃত্তি হিসেবে গণ্য হয় এবং এটা শাস্তিযোগ্য বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। শুক্রবার রাতে নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন জয়।
স্ট্যাটাসে জয় লিখেছেনÑ ‘বিএনপি এবং আমাদের “সুশীল সমাজ” এর একটি অংশ শফিক রেহমানের সাফাই গাইতে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই আমি এ বিষয়ে কিছু নিরেট বাস্তবতা তুলে ধরছি।’ এরপর জয় লিখেছেনÑ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রেকর্ড অনুযায়ী, অভিযুক্ত এফবি আই এজেন্ট রবার্ট লাস্টিক টেক্সট ম্যাসেজে লিখেছে যে, “রিজভী আহমেদ সিজার আমাকে ‘অফ’ করতে চায়। মেরে ফেলার অর্থে সø্যাং হিসেবে আমেরিকায় এ শব্দটা ব্যবহার করা হয়। তাই, আহমেদ তার ষড়যন্ত্রের সহযোগীকে বলেছে, সে আমাকে হত্যা করতে চায়, আর সেটা সে গ্রেফতার হওয়ার অনেক আগেই। গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে জেরার দায়িত্বে থাকা এজেন্টদেরও সে একই কথা জানিয়েছে। ট্রায়ালের মাধ্যমে আহমেদ দোষী সাব্যস্ত হয়নি। সে অপেক্ষাকৃত লঘু অপরাধে দোষী বলে নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে, যা গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীরা মামলা হেরে যাওয়া এবং দীর্ঘ কারাবাস এড়াতে করে থাকে।
হত্যা প্রচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার দীর্ঘ সময় জেল খাটার সম্ভাবনা থাকলেও সেই স্বীকারোক্তির মাধ্যমে সে কারাবাসের মেয়াদ কমিয়েছে।” জয় ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেনÑ ‘লাস্টিকের সঙ্গে শফিক রেহমানের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। যদি তথ্য যোগাড় করার জন্য কোন সাংবাদিক অপরাধমূলক কর্মকা-ের আশ্রয় নেয়, সেক্ষেত্রে সেটা অপরাধ। এটা যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি অপরাধ, তাই যুক্তরাষ্ট্রেও শফিক রেহমানের বিচার হতে পারে। সবশেষে জানাতে চাই, শফিক রেহমান মার্কিন নাগরিক না হয়েও ঘুষের মাধ্যমে এফবি আইয়ের গোপন নথি কিনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে এটা গুপ্তচরবৃত্তি এবং এর শাস্তি কোন দুর্ভেদ্য যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলে আজীবন কারাবাস।’
ডিবির এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে শফিক রেহমান বলেছেন, ঢাকা ও লন্ডনে বিএনপির হাইকমান্ডের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের বেশ কয়েক নেতা উপস্থিত ছিলেন। কোথায় কোথায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং কোন কোন নেতা উপস্থিত ছিলেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। শফিক রেহমান জিজ্ঞাসাবাদে আরও বলেছেন, ২০১২ সালে যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান তখন তার বিমানের টিকেট দিয়েছিলেন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাসকারী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মিল্টন ভূঁইয়া। শফিক রেহমানের থাকা-খাওয়াসহ এফবি আই সদস্যকে যে ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেয়া হয় সেটাও শফিক রেহমানের নামে দিয়েছেন মিল্টন ভূঁইয়া। বিনিময়ে মিল্টন ভূঁইয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির একটি ভাল পদ দেয়ার কথাবার্তা হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান শফিক রেহমান।-জনকন্ঠ।

 

পাঠকের মতামত: