ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

পুলিশকে ৩ বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিউজ ডেস্ক ::  পেশাগত দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যদের জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (৩ জানুয়ারি) ৩৭তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ বাহিনী পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশের মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।

‘অসহায়, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেবে এবং জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের সেবা দেওয়া, মানুষের জীবনমান উন্নত করা, এটাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

পুলিশ বাহিনীকে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করার তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, পুলিশকে মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারলে, আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে তবে পুলিশের সংখ্যার প্রয়োজন হবে না, মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এদেশে যেকোনো অপরাধ দমন করা যাবে। কাজেই সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। এটাই আমরা চাই।

মানুষের আস্থা অর্জন বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন- মনে রাখবেন, আপনাদের মানুষ যেন ভয় না করে। আপনাদের যেন মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন, অনেক দেশে পুলিশকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনারা শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন। ’ বঙ্গবন্ধু পুলিশ বাহিনীকে এই আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ পুলিশকে ঔপনিবেশিক পুলিশ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জনমানুষের পুলিশে পরিণত করতে জাতির পিতার মহৎ উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘একটা কথা ভুললে চলবে না তোমাদের। তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ, তোমরা ইংরেজের পুলিশ নও, তোমরা পাকিস্তানি শোষকদের পুলিশ নও, তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা এবং নির্দেশনা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন।

নবীন পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ নবীন পুলিশ অফিসাররা শপথগ্রহণ করেছো। সেই শপথ নিয়েই তোমাদের চলতে হবে। একই সঙ্গে জাতির পিতার এই নির্দেশনাগুলোও তোমাদের মেনে চলতে হবে। পুলিশ বাহিনীর অনেক দায়িত্ব, আশাকরি এই দায়িত্ব তোমরা পালন করবে। তোমরা যে জ্ঞান অর্জন করেছে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেছো- তোমাদের শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে চলতে হবে। সব সময় দেশের মানুষের পাশে থাকতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। মানুষের সেবা করাটাই তোমাদের কর্তব্য সেটা সব সময় মনে রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ বসবাস করবে, জীবন-মান উন্নত হবে। মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সরকারের এটাই দায়িত্ব। সেই দায়িত্বে পুলিশ বাহিনী সব সময় আমাদের পাশে আছে এবং যথাযথভাবে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

৭৫ এর পর গণতন্ত্র ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। নইলে ৭৫ এর পর গণতন্ত্র তো বন্দি হয়ে গিয়েছিল ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ছিল না। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি।

অনুষ্ঠানে কৃতী প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পদক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা।

পাঠকের মতামত: