ঢাকা,রোববার, ৫ মে ২০২৪

কক্সবাজারের সবুজের মাঠজুড়ে সবজির হাসি

শাহীন মাহমুদ রাসেল :: আদিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবজি ক্ষেত। পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বেগুন, বরবটি, ঢেড়স, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা। সবজি চাষের জন্য কক্সবাজার জেলার বিখ্যাত কয়েকটি উপজেলার সদর, রামু ও চকরিয়ার প্রায় প্রতিটি এলাকায় এখন এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মিশ্র চাষের প্রচলন দীর্ঘদিন থেকে। পাহাড়ে যেমন জুম চাষে হরেক রকমের ফসল হয়। তেমনি মিশ্র চাষেও আবাদ হয় হরেক রকম সবজির। কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমের শেষ দিকের নিন্মচাপ ও পাহাড়ী ঢলে এখানকার মিশ্র ক্ষেতের ফসলে অভাবনীয় উর্বরতার যোগান দিয়েছে।

মৌসুমের শুরুতে পাহাড়ী ঢলে কোন কোন এলাকায় ফসলহানি হয়েছে। তবে পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা নতুন মাটিতে নতুন করে আবাদ করার পর বিস্ময়ে হতবাক প্রান্তিক চাষীরা। তারা দেখছেন, সবজি ক্ষেতে অন্যরকম চিত্র। কোনরকম সার ছাড়াই বেড়ে যাচ্ছে গাছ। নির্ধারিত সময়ে ধরতে শুরু করেছে ফলন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে জেলায় এবার শরৎকালীন শাকসবজি আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৭শত হেক্টর যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। রামু ও সদরে উঁচুনিচু জমি, টিলা ও পাহাড়ের পাদদেশে এখন মিশ্র ফসলের বিস্তৃত মাঠ। বাঁকখালীর দু’পাশে ও চকরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ হয়েছে হরেক রকমের শাকসবজির।  শাকসবজির ভান্ডার হিসেবে পরিচিত চকরিয়া, রামু ও সদরে ব্যাপকহারে সবজির আবাদ হয়েছে।

এছাড়া বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, ক্ষিরা, বরবটি, পালংশাক, ডাটা, ঝিংগা, ঢেঁড়স, করলা ও উচ্ছে ইত্যাদি শীতকালীন সবজিরও বাম্পার ফলন হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকার সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। চকরিয়া ও রামুতে থেকেও ব্যাপক সবজি চট্টগ্রাম এবং ঢাকার বাজারে যাচ্ছে। শরৎকালীন সবজি হিসেবে এ অঞ্চলে বেগুন, বরবটি, ঢেড়স, শসা, ক্ষীরা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, কচু, ঘিমা কলমি, কাকরোল, করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, ডাটা, লালশাক, ধুন্দুল, পুঁইশাক ও পাটশাকের ব্যাপক আবাদ হয়েছে।

সরেজমিনে রামু কাউয়াখোপের টমেটো চাষি আলী আহাম্মদ এর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ঐশী জাতের টমেটো চাষ করেছেন তিনি। মৌসুমের প্রথমেই উৎপাদিত টমেটো বিক্রি করে যাবতীয় খরচ উঠিয়ে লাভের মুখ দেখছেন তিনি।

সদরের খরুলিয়া এলাকার কৃষক মনির আলম বলেন, গেল বছর মুলা ও সীম বিক্রি করে যে মুনাফা করেছি এবার তার দ্বিগুন মুনাফার আশা করছেন। কারণ হিসেবে তিনি আবহাওয়া অনুকূল ও ভালো বীজ পেয়েছেন বলে জানান।

একই এলাকার আব্দুস সালামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, এবার আমি বাড়ির সামনের ভিটিতে লাউ লাগিয়ে এ পর্যন্ত সাড়ে ৯ হাজার টাকা লাভ করেছি। আশা করি এ জমির লাউ আরো এক মাস বিক্রি করতে পারব। গেল বছরও ভালো লাউ বিক্রি করেছি। তবে এবার বেশি লাগিয়েছি এবং লাভও বেশি হয়েছে।

দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকার টমেটো চাষি মামুন, সরিষা চাষি আতাউল্লাহর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোরের কুয়াশার মধ্যেই ফসলের মাঠে গিয়ে দিনভর সবজি পরিচর্যা করেন তারা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ভ্যান, পিকআপ, মিনি ট্রাকযোগে লিংকরোড, রামু ও সদরের বাজারগুলোতে প্রতিদিন ভোরেই নিয়ে যাচ্ছেন শীতের সবজি।

রামুর কাউয়াখোপ এলাকার চাষী আমান উল্লাহ জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও তিনি প্রায় ১০ একর জমিতে মিশ্র শাকসবজির চাষ করেছেন। একই জমিতে করলা, ঢেড়স, মিষ্টিকুমড়া, বরবটি ও চালকুমড়ার আবাদ করেন। এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে বলে তিনি বলেন, বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে এসব জমি আগের তুলনায় যেমন সতেজ হয়েছে, তেমিন পাহাড়ী ঢলে নতুন মাটি আসায় উর্বরতাও বেড়েছে। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার তেমন সার দিতে হয়নি। বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় পোকামাকড়ের উপদ্রবও ছিলনা। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হলে নানারকম রোগবালাই দেখা দেয়। স্বাভাবিক বর্ষণের ফলে প্রাকৃতিকভাবেই এসব রোগবালাই চলে গেছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, আশা করা যায় আগামী কয়েক বছর ভালো ফলন অব্যাহত থাকবে।

আমান উল্লাহর মতো বাঁকখালী নদীর পাড়ের চাষী আবদুল আজিজও ফলনে বেজায় খুশি। তিনি জানান, বাঁকখালীর চরে দীর্ঘদিন ধরে সবজি চাষ করে আসছেন। তবে এবারের মতো ফলন নিকট অতীতে তিনি পাননি। তিনি বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কয়েক দফায় দু’কূল প্লাবিত করেছে বাঁকখালী নদী। আর এ কারণে দুই পাড়ে পলি মাটি জমেছে। টানা বর্ষণ ও সেইসাথে নরম মাটির পরশ ভূমিকে দারুণভাবে উর্বর করে তুলেছে। এর সুফল মিলছে সবজির ফলনে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের সবজি চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। বর্ষার শুরুতে কিছু কিছু এলাকায় ফসল নষ্ট হয়। ওইসব এলাকায় কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাপকহারে সবজির আবাদ করেছেন।

পাঠকের মতামত: