ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদা দিয়েই চলছে লাইসেন্স বিহীন মাহিন্দ্রা অটো রিক্সা

ওমর ফারুক হিরু, কক্সবাজার :: কক্সবাজার শহরের কোর্ট বিল্ডিং, আইবিপি সড়ক ও বাসটার্মিনাল এলাকায় দৈনিক দেড় শতাধিক মাহিন্দ্রা অটো রিক্সা আসা-যাওয়া করে। যার বেশিরভাগেরই লাইসেন্স নাই। লাইসেন্স বিহীন এসব গাড়ি চলে মাসিক চাঁদা দিয়ে। যার ভাগ বন্টন হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে। প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বেরিয়ে আসছে এমনই তথ্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের আাদালত প্রাঙ্গনস্থ পৌরসভার সামনে, আইবিপি সড়কের মুখে ও বাস টার্মিনাল এলাকায় দৈনিক দেড় শতাধিক মাহিন্দ্রা অটো রিক্সা আসা-যাওয়া করে।
প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ মাহিন্দ্রার লাইসেন্স নাই। যেসব গাড়ির কাগজ পত্র রয়েছে তাদের আবার রোড পারমিট (রাস্তার নামার অনুমতি) নেই। কিন্তু এসব গাড়ি রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শুধু মাত্র মাসিক চাঁদার বিনিময়ে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ‘কক্সবাজার জেলা অটো রিক্সা সিএনজি টেম্পো পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন’ এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এসহানকে মাসিক ২২০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে লাইসেন্স বিহীন মাহিন্দ্রা অটো রিক্সা রাস্তায় চালানো হচ্ছে। এছাড়া রোড পারমিট না থাকা গাড়িগুলো থেকে মাসিক ৪০০ টাকা করে নিচ্ছে ওই সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু তাকে (মো: এহসান) টাকা দিলেই কি লাইসেন্স না থাকার পরেও প্রশাসন (ট্রাফিক পুলিশ) গাড়ি ছেড়ে দেয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহিন্দ্রা অটো রিক্সা চালকদের কাছ থেকে জানা যায় লাইসেন্স বিহীন গাড়ি যদি কোন ট্রাফিক পুলিশ আটকায়, তখন তারা মো: এহসানকে ফোন ধরিয়ে দেয়। পরে ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি ছেড়ে দেয়।

মেহেদী হাসান নামে এক মাহিন্দ্রা চালক জানান, তারা প্রতি মাসে মান্থলি (মাসিক) বাবদ ২২০০ টাকা করে মো: এহসানের হাতে তুলে দেন। যার বিনিময়ে লাইসেন্স না থাকার পরেও নিশ্চিন্তে সড়কে গাড়ি চালাতে পারে।
মন্জুর আলম নামে আরেক মাহিন্দ্রা চালক জানান, মাসিক চাঁদা দেওয়ার প্রচলন অনেক আগের। করোনার সংকটকালীন সময়ের আগে মাসিক টাকা নেওয়া হত টুকেনের মাধ্যমে। ওই সময় চাঁদা ছিল ১৫০০ শত টাকা। এখন টুকেন দেওয়া হয়না। আর চাঁদার অংকও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০০ টাকা।
লিয়াকত নামে আরেক মাহিন্দ্রা অটো রিক্সা চালক জানান, তার গাড়ির লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু রোড পারমিট নেই। অর্থাৎ গাড়ি রাস্তায় নামার অনুমতি নেই। তাই তিনি মো: এহসানকে মাসিক ৪০০ টাকা দিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে। তার মত একইভাবে যাদের রোড পারমিট নেই তারা মাসিক ৪০০ টাকা দিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছেন।

এসব ব্যাপারে জানতে শহরের আইবিপি সড়ক সংলগ্ন ‘কক্সবাজার জেলা অটো রিক্সা সিএনজি টেম্পো পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন’ অফিসে গিয়ে ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: এহসানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মাসিক টাকা নিয়ে রাস্তায় গাড়ি চলতে দেওয়ার ব্যাপারটা আগে থাকলেও বর্তমানে নাই। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। তিনি আরো বলেন শহরের বেশিরভাগ মাহিন্দ্রা অটো রিক্সা গাড়ির লাইসেন্স নেই। তারা প্রশাসনের কাছে সময় নিয়েছে লাইসেন্স করিয়ে নেবে। এই মুহুর্তে তিনি কোন ধরণের টাকা নেননা।

এ ব্যাপারে ‘কক্সবাজার জেলা অটো রিক্সা সিএনজি টেম্পো পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন’ এর সভাপতি মোহাম্মদ রাশেদ জানান, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের চাঁদাবাজি হয়না। তাদের বৈধ সংগঠনের মানক্ষুন্ন করার জন্য আরেকটি অবৈধ সংগঠন এসব মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মোহাম্মদ তুহিন আহমেদ জানান, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগেও অভিযান চালিয়ে বেশি কিছু মাহিন্দ্রা অটো রিক্সা জব্দ করেছিল। পরে নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে লাইসেন্স করিয়ে নেওয়ার অঙ্গিকারে গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই নবাগত কর্মকর্তা আরো জানান, ট্রাফিক বিভাগের সম্মান রক্ষার্থে কোন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবেনা।

পাঠকের মতামত: