ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

 নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ১০০ জনের

চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে প্রসুতি সেবা বেড়েছে

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে প্রসুতি রোগীদের সেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারির সফলতার সাথে শততমপূর্ণ হওয়ায় নরমাল ডেলিভারি টিমকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি আলহাজ্ব জাফর আলম।

বৃহস্পতিবার ১৫অক্টোবর সকাল ১১টায় হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদুল হকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়ন করেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি আলহাজ্ব জাফর আলম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শামসুল তাবরীজ ও চকরিয়ার থানার ওসি শাকের মুহাম্মদ যুবায়ের।

এসময় চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বুধবার ১৪অক্টোবর পর্যন্ত গত আড়াইমাসে ১১১টি নরমাল ডেলিভারি সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হাসপাতাল প্রশাসন সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

জানা গেছে, চলতিবছরের ২৬জুলাই থেকে ১৪অক্টোবর পর্যন্ত গত আড়াই মাসে প্রায় একশ’ ৮টি নরমাল ডেলিভাারি করে সফলতাও পেয়েছে চিকিৎসক টিমটি। ডেলিভারি রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে একটি হটলাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদুল হকের নেতৃত্বে চিকিৎসক টিমটি প্রসুতি রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসের শেষের দিকে হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদুল হক যোগদানের পর চিকিৎসকরা একটি টিম গঠন করে নরমাল ডেলিভারি ওয়ার্ক শুরু করে। হাসপাতালের গেইট থেকে শুরু করে মুল ভবনের দেওয়ালে নানা প্রচারণায় কৌশলও কাজে লাগান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিদের্শনায় দুইজন গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নরমাল ডেলিভারির কাজ করে যাচ্ছেন। এতে সর্বাক্ষণিক ৬জন নার্স (মিডওয়েফ) নরমাল ডেলিভারির কাছে নিয়োজিত রয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভার হাসপাতালপাড়ার আরিফুল ইসলামের স্ত্রী সুমি আক্তার (২২)। তার একটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তান তিন বছর হয়েছে। গত সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরো একটি সন্তান জন্ম দিয়েছে তিনি। সরকারী এমন সেবায় তিনি ও তার পরিবার বেশ খুশি।

হাসপাতালের বেডে সেবার মান নিয়ে জানতে চাইলে সুমি আক্তার বলেন, ‘এলাকার লোকজনের নানা কথায় অনেক ভয় পেয়েছিলাম। নিয়মিত চেকআপ করার সময় বেসরকারী একটি হাসপাতালে সিজার করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু আমার স্বামী জানতে পারে সরকারী হাসপাতালে উন্নত সেবায় নরমাল ডেলিভারি করা হয়। এতে অনেকটা সাহস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। সরকারী হাসপাতাল হলেও এখানে ডাক্তার ও নার্সরা অনেক আন্তরিক। এখানে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একটি সন্তান ভুমিষ্ঠ হয়েছে। আমি এবং আমার শিশু সন্তান সুস্থ আছি।’

একই কথা বললেন বরইতলীর শান্তিবাজার গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী আরিন আক্তার (২০), পৌরসভার বাটাখালীর মো. ইউসুফের স্ত্রী ইয়াসমিন জন্নাত (১৯), মৌলভীপাড়ার আলমগীরের স্ত্রী শাহিনা আক্তার (২৬)। মঙ্গলবার ও বুধবার বেলা (১টা পর্যন্ত) চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ২জনের নরমাল ডেলিভারি হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সিনিয়র নার্স সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এভাবে নরমাল ডেলিভারি হলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত ও নিরাপদ হবে। দরিদ্রসহ সাধারন মানুষ অনেক খরচ থেকেও বাচঁবেন। এ হাসপাতালে ডেলিভারী নিরাপদ করতে আমিসহ৫ জন দক্ষ মিডওয়েফ কাজ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত চেক-আপ, ডিএন্ডসি, এম.আরসহ নানা পরীক্ষা বিনামূল্য গর্ভবতী মহিলাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। গত দুইদিনে হাসপাতালে গর্ভবতী ৬জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে দুইজনের সফলভাবে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করা হয়েছে।’

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদুল হক বলেন, ‘একটা সময় চকরিয়া সরকারী হাসপাতালে প্রসূতি মায়েদের নরমাল ডেলিভারি করানো প্রায়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জুলাই মাসে আমি যোগদান করার পর আমরা সবাই মিলে টিম ওয়ার্ক শুরু করি। দালাল চক্রের কিংবা দায়মা-দের বাধা উপেক্ষা করে এর সফলতা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে যেখানে হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারী ১০/১৫ জন করা যেত। সেখানে দিন-দিন এটা বৃদ্ধি পেয়ে ২৬জুলাই থেকে ১৪অক্টোবর ১০৮জনকে নরমাল ডেলিভারী করানো হয়। এই অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত ২৪টি সফল নরমাল ডেলিভারী করানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নরমাল ডেলিভারি হাসপাতালে এসে করানোর সংখ্যা বাড়ছেই। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না। যদি ডেলিভারি রোগীকে অতি জরুরি সিজার করতে হয়, তাহলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ডেলিভারি হওয়ার পর উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জন্ম নেয়া শিশুর জন্য জামা-কাপড় এবং মশারী ওই শিশুর মাকে উপহার দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

 

পাঠকের মতামত: