ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগিদের খাদ্য সরবরাহে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি

মাহাবুবুর রহমান. কক্সবাজার :: ২৯০ জন রোগির ২ বেলা খাবারের জন্য ৩০ কেজী মুরগির মাংস। ২ কেজি ডাল এবং সবজি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিজন রোগি প্রায় ৩শ ১০ গ্রাম মাংস পাওয়া কথা থাকলেও এখন পাচ্ছে প্রায় ১২০ গ্রাম। আবার ১ দিন পর পর মাছ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মাছের দেখা পায়না রোগিরা। এছাড়া মাছ মাংসের বদলে ডিম দেওয়ার নিয়ম না থাকলে ও শুধু মাত্র ডিম দিয়ে চালিয়েছে প্রায় দেড় মাস।

এভাবে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে রোগির খাবারে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি চলছে যা সবাই জানলেও কেউ বলার সাহস পাচ্ছেনা। কারন এই বিশাল অনিয়ম দূর্নীতির সাথে জড়িত রয়েছে হাসপাতালের উর্ধতন কর্মকর্তা সহ ঠিকাদার সিন্ডিকেট। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা খাবার দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সাধারণ রোগিদের খাবার দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি টাকা।

কয়েক দিন ধরে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগিদের খাবার নিয়ে চলছে বিশাল অনিয়ম দূর্নীতি। ২৪ জুলাই সকাল ১০ টায় হাসপাতালের রান্না ঘরে গিয়ে দেখা গেছে রান্নার কাজে নিয়োজিত কয়েকজন মুরগীর মাংস কাটছে জানতে চায়ছে তারা জানান এখানে শুনেছি ৩৫ কেজী মুরগীর মাংস এনেছে সেখান থেকে উচ্ছিষ্ট চলে যাবে প্রায় ৫ কেজী সে হিসাবে থাকবে ৩০ কেজী যা দিয়ে ২ বেলা রোগিদের খাবার দিতে হবে। আজকে ভর্তি রোগির সংখ্যা ২৭২ এছাড়া রোহিঙ্গা সহ মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন আছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে ২৩ জুলাই ছিল ২৬৬ জন রোহিঙ্গা সহ ২৯০ জনের রান্নার জন্য এনেছে সেই ৩০ কেজী মাংস। ২ কেজী ডাল ১০ কেজী আলু এবং কিছু সবজি। আর এ সব কিছু রান্নার জন্য আদা আধা কেজী,পেয়াজ ২ কেজী অর্থাৎ মসলার পরিমান খুবই অল্প তাই কোন মতে পানির বন্যা করে রোগিদের খাওয়ানো হচ্ছে।

এভারে গত কয়েক দিনের তথ্য নিয়ে জানা গেছে প্রতিদিন অন্তত ৩০০ জনের খাবার রান্না করতে হয় তবে মাংস বা উপকরণ থাকে খুব অল্প।

এদিকে হাসপাতালের অফিস সূত্রে জানা গেছে প্রায় ৪ মাস আগে টেন্ডারের মাধ্যমে হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহের কাজ পায় শাহরিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্টান যার মালিক আবদুল হামিদ তিনি বান্দরবানের বাসিন্দা। তবে এখানে রয়েছে তার আরো বেশ কয়েকজন সহযোগি যারা মিলে হাসপাতালে রোগিদের খাদ্য সরবরাহের নামে লুটপাট করছে।

আর কাগজ পত্র অনুযায়ী একজন রোগিকে মাংস দিলে অন্তত ৩শ ১০ গ্রামের বেশি পাওয়ার কথা কিন্ত সে হিসাবে এখন ১শ ২০ গ্রামও পাচ্ছেনা। আর ১ দিন পর পর মাছ দিতে হবে। কিন্তু গত ১৫ দিনে মাছ দিয়েছে ২ বার। এছাড়া এপ্রিল মাস পুরু এবং মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শুধু ডিম দিয়ে রোগিদের খাওয়ার দেওয়া হয়েছে। আর তখন ভর্তি রোগি কম থাকলেও কাগজে কলমে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর সে সময় এই বিরাট অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তৎকালীন সুপার ডাঃ মহিউদ্দিন সেসব কর্মচারীদের মারতে আসেন বলেও জানা গেছে।

এছাড়া স্থানীয় রোগিদের খাবারের জন্য দৈনিক ১২৫ টাকা বিল আর রোহিঙ্গাদের খাবারের জন্য দৈনিক ২৫০ টাকা বিল পাবে ঠিকাদার। তবে রোহিঙ্গাদের ২ জন খাবার পাবে কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা কোন খাবারের ব্যবস্থা না করে এইমনগড়া খাবার দিয়ে বাড়তি বিল করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারে নাস্তায় ডিম পাউরুটি,দুধ থাকার কথা থাকলেও খাওয়ার অনুপযুক্ত কলা এবং বাসি পাউরুটি দেওয়া হয়। আর এই খাদ্য তালিকা বা মালামাল দেখার প্রাথমিক কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার নোমান নাকি ঠিকাদের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে তিনি উল্টো কম মালামাল দিয়ে রান্না করার জন্য চাপ দেন।

জানতে চাইলে সেই নোমান ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই করে বলেণ, লকডাউন চলাকালে বাজার না থাকার ১ মাস ডিম দেওয়া হয়েছিল। তবে মাঝে মধ্যে মুরগী দেওয়া হয়েছিল। আর ১ দিন পর মাছ দেওয়ার কথা থাকলে দিচ্ছেনা কেন জানতে চাইলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সব জানে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার আবদুল হামিদের কাছে ফোনে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। হাসপাতালের সরকারী পরিচালক ডাঃ রফিকুছালেহীন এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

পাঠকের মতামত: