ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্লাজমা দিতে চান করোনাজয়ী চকরিয়ার তরুণ আকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা এস এম আকাশ চৌধুরী। বাবা-মা পরিবারসহ আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনাভাইরাসে। নিজের বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিয়ে খুব অল্পদিনেই সেরে উঠেছেন আকাশসহ তার পুরো পরিবার। সুস্থ হয়ে করোনায় আক্রান্তদের প্লাজমা দিতে তার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি।

আকাশ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের এসএম চরের বাসিন্দা। তার বাবার নাম বশির আহমদ সওদাগর (৭০), মা মর্শিদা বেগম (৬০) এবং তার ছোট বোন কক্সবাজার সরকারি কলেজের একাউন্টিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া জন্নাত (২০)। তারা সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন।

প্লাজমা দেওয়ার আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে আকাশ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কোন ওষুধ নেই। শুনেছি প্লাজমার মাধ্যমে অনেকে সুস্থ হচ্ছে। আক্রান্ত হওয়ার পর মানুষ যেভাবে আমাদের ভালোবাসা দেখিয়েছেন তাদের ঋণ কখনও শোধ করতে পারব না। ভালোবাসার ঋণ হিসেবে নিজের প্লাজমা দিতে চাচ্ছি। আমার ছোট বোন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে সেও প্লাজমা দান করবে। আমাদের শরীরে প্লাজমায় যদি একজন করোনা আক্রান্ত রোগীও বেঁচে যায় তার চেয়ে বড় পাওয়ার আর কিছু হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমার সাথে চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালী থানার ওসি মহসিন স্যার যোগাযোগ করেছেন। ওনারা একটা প্লাজমা ব্যাংক করছেন। ওখানে আমাকে প্লাজমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।’

প্লাজমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা.সিরাজুম মুনির চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘একজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী সুস্থ হওয়ার পরেই প্লাজমা দিতে পারে। প্লাজমা দিলে শরীরের তেমন কোন সমস্যা নেই। এটা বেশি পরিমাণ পানি ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খেলে ওই প্লাজমার ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।’

কক্সবাজারের প্লাজমা থেরাপির কোন ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত না। রক্ত কণিকা থেকে প্লাজমা নিতে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এজন্য মেশিনের প্রয়োজন। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এই মেশিন আছে কী না আমি অবগত না।’

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে আকাশ চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, মে মাসের ৩ তারিখে থেকে আমার শরীরে জ্বর দেখা যায় এবং সর্দি-কাশিও শুরু হয়। এরপর থেকে আমি বাড়িতে একটি রুমে একা থাকতে শুরু করি। পরে ৯ মে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা দিয়ে আসি। এর দুইদিন পর ১১ মে আমি করোনায় পজিটিভ হই। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আতিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহবাজ প্রেসক্রিপশনে আমাদের কিছু ওষুধ লিখে দেন। ওই ওষুধগুলো বাইরে ফার্মেসি থেকে কিনে এনে খেতে থাকি। পাশাপাশি ঘরোয়া টোটকা যেমন-গরম পানির ভাপ, ঘনঘন রং চা থেকে এবং গরম পানি পান করি। একপর্যায়ে আমাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ২৪ মে টেস্ট করি। ২৭ মে আমার রিপোর্ট নেগেটিভ হয়। সবশেষ ২৮ তারিখে আমার বাবা-মা ও বোনেরও রিপোর্টও নেগেটিভ আসে। আমার পরপর দুটো টেস্টে নেগেটিভ রেজাল্ট আসে।

তিনি বলেন, আক্রান্ত হওয়ার প্রথম দিকে আমরা খুব ভেঙ্গে পড়েছিলাম। এ সময় আমাদের স্থানীয় সাংসদ জাফর আলম ও কাকারার চেয়ারম্যান শওকত ওসমান আমার খবরাখবর নিয়েছেন। আমাদের পরিবারের সব দায়িত্ব তারা পালন করেছেন। যখন যা লাগে তাই দিয়েছেন। পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশি ছাড়াও বন্ধু-বান্ধবরাও সাহস দিয়েছে। তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও দোয়ায় আমরা খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছি। তবে আমার আব্বা-আম্মার জন্য খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ মার হাঁপানির সমস্যা ছিলো। বাবার বয়সও ছিলো বেশি। আল্লাহর কৃপায় আমরা সুস্থ হয়ে উঠেছি।

সুস্থ হওয়ার পরপরই প্লাজমা দান করার ইচ্ছে প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। ওই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে অসুস্থ করোনা আক্রান্তদের তার শরীরের প্লাজমা দান করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আব্বা-আম্মা বোন সবার ফলোআপ রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আমি ডাবল নেগেটিভ। নেগেটিভ আসার পর পুনরায় টেষ্ট করিয়েছিলাম প্লাজমা দিতে ইচ্ছুক বলে। করোনা যুদ্ধে অবদান রাখা কোন ডাক্তার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ বা সেনা অথবা একজন মাকে প্লাজমা দিতে পারলে খুশি হতাম।

পাঠকের মতামত: