ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ঝুঁকিতে ভেল্লাপাড়া সেতু

দুই প্রান্তে অবৈধ বাল্কহেড থেকে পাথর খালাস

নিজস্ব প্রতিবেদক ::  চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ভেল্লাপাড়া সেতুর দুই প্রান্তে অবৈধ বাল্কহেড থেকে চলছে পাথর খালাস। সম্প্রতি পাথর খালাসে যুক্ত হয়েছে ক্রেনযুক্ত বার্জও। আবার পাথরবাহী এসব বাল্কহেড ও বার্জ নোঙর করা হয় সেতুটির খুঁটি কিংবা পাটাতনের সাথে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি। ইতোমধ্যে সেতুটির মাঝখানে তৈরি হয়েছে ফারাকও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিকলবাহা খালে ভেল্লাপাড়া সেতুর পশ্চিম প্রান্তে বালু ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী। তারা বাল্কহেডে বালু এনে ভেল্লাপাড়া সেতুর নিচ দিয়ে আনলোড ড্রেজারের মাধ্যমে খালাস করে নেন। গত কয়েক মাস ধরে যুক্ত হয়েছে পাথর খালাস। বহির্নোঙরে অবস্থান করা মাদারভ্যাসেল থেকে অবৈধ বাল্কহেডে পাথর এনে ভেল্লাপাড়া এলাকায় খালাস করছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। শুরু থেকে বাল্কহেড থেকে সনাতন পদ্ধতিতে শ্রমিকদের দিয়ে খালাস নিলেও বর্তমানে যুক্ত হয়েছে ক্রেনবাহী বার্জও। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভেল্লাপাড়া সেতুর লাগোয়া দক্ষিণ পাশেই ক্রেনবাহী বার্জ যুক্ত করা হয়েছে। বার্জের ক্রেন দিয়ে বাল্কহেড থেকে সরাসরি ট্রাকে পাথর আনলোড করা হচ্ছে। বার্জ ও বাল্কহেড দুটিই রশি দিয়ে সেতুর সাথে বাধা রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করা ইউনুচ তালুকদার নামের এক প্রভাবশালীর নেতৃত্বে এসব পাথর খালাস চলছে। এখানে পাথর খালাসের জন্য অনুমোদিত জেটিও নেই।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ভেল্লাপাড়া সেতুটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু। সেতুটি দুর্ঘটনায় পড়লে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। কারণ কালুরঘাট রেলসেতু দিয়ে সীমিত আকারে যানবাহন চলে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই সেতুটি পর্যবেক্ষণ করছি। বিগত দুয়েক বছর ধরে ভেল্লাপাড়া সেতুর পশ্চিম প্রান্তে জেটি বানিয়ে বালু ব্যবসা করছেন কয়েকজন প্রভাবশালী। তারা বাল্কহেড থেকে আনলোডিং ড্রেজার দিয়ে বালু খালাস করে। এতে খালের দুই পাড়ে ভাঙন বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে খালের পূর্ব প্রান্তেও বাল্কহেড দিয়ে পাথর খালাসে যুক্ত হয়েছে বেশ কয়েকজন। তারা রাজনৈতিক প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে সেতুটির দুই স্প্যানের মাঝখানে ফারাক সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কারণে বার্জ ও বাল্কহেডের ধাক্কা লাগলে সেতুটি ধসে যেতে পারে। আবার এসব বাল্কহেডগুলোও অবৈধ। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বাল্কহেডগুলোর মালিকানা চিহ্নিত করাও দুরূহ হবে।
সড়ক বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, ২০০৭ সালে একটি ইস্পাত কারখানার কোল্ড রোলবাহী বার্জের ধাক্কায় শিকলবাহা খালের কালারপোল সেতুর দুটি স্প্যান ধসে পড়েছিল। মাঝখানে একবার প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে স্প্যানগুলো সংযুক্ত করা হয়েছিল। পরে আবার ধসে পড়ে। ধসে পড়ার পর থেকে প্রায় ১৩ বছর পার হয়েছে, এখনো নতুন সেতুর কাজ শেষ করতে পারিনি।
এ বিষয়ে ইউনুচ তালুকদার দৈনিক আজাদীকে জানান, বাল্কহেড থেকে বার্জের মাধ্যমে আমরাই পাথর খালাস করছি। খালের পাড়ে পাথর খালাস করতে কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে না।
এ ব্যাপারে দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ আজাদীকে বলেন, ভেল্লাপাড়া সেতুটি যেহেতু সড়ক ও জনপথ বিভাগের, সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়-দায়িত্ব আমাদের। তাই যারাই বার্জ ও বাল্কহেড দিয়ে পাথর খালাস করছে আমরা তাদের অনুরোধ জানাব, সেতু থেকে নিরাপদ দূরত্ব রেখে এসব নৌযান নোঙর করার জন্য। তারপরও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। অন্যথা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টিতে নজর দিতে পারেন।
পরে এ বিষয়ে জানতে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমার অফিসিয়াল মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পাঠকের মতামত: