ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

কুতুবদিয়ার পিআইও অফিস সহকারী ৮ বছর ধরে একই কর্মস্থলে: নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগে অপসারণ দাবী

oniyom durnitiপেকুয়া প্রতিনিধি :::

মো. শামশুল হক। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছে বিগত ৮ বছর ধরে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ অনত্র বদলী করেন শামশুল হককে। প্রতিবারই নানা তদবীর ফন্দি ফিকির করে কুতুবদিয়ায় একই কার্যালয়ে বহাল রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে কুতুবদিয়ায় একই কার্যালয়ে কর্মরত থাকার সুবাধে শামশুল হক জড়িয়ে পড়েছেন নানা অনিয়ম-দূর্নীতি ও বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্যে। তার ঘুষ বানিজ্যে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে কুতুবদিয়ার জনপ্রনিধিরা।

গত ৪ এপ্রিল কুতুবদিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কুতুবদিয়া পিআইও অফিসের সহকারী বিতর্কিত শামশুল হকের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাকে জরুরী ভিত্তিতে কুতুবদিয়া থেকে অপসারনের জন্য লিখিতভাবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সরকারী বিধি মোতাবেক একজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এক স্থানে ২/৩ বছরের অধিক কর্মরত থাকার বিধান না থাকলেও শামশুল হক বিগত ৮ বছর ধরে কুতুবদিয়া পিআইও অফিসে অনৈতিকভাবে অবস্থান করে কুতুবদিয়ার সকল উন্নয়ন কাজকে পুঁজি করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে চরম দূর্ব্যবহার করে চরমভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠে। প্রতি অর্থ বছরে প্রতিটি টিআর, কাবিখা ও কাবিটার প্রকল্প থেকে এক হাজার পাঁচ শত টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ আদায় করেন শামশুল হক। ডিও উত্তোলনের সময় দশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হয়। প্রকল্পের মাষ্টার রোলের নামে প্রতিটনে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। একইভাবে উপজেলা পরিষদের আরো বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করেন। এছাড়াও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দায়েরকৃত অভিযোগে শামশুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, শামশুল হক পিআইও কার্যালয়ের কম্পিউটার মনিটর, টেলিফোন সেটসহ সরকারী অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল তার বাসায় নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করে আসছেন। এ নিয়ে কুতুবদিয়া পিআইও অফিসের অফিস সহায়ক কনক রায় চলতি বছরের ১৫ ফেব্রে“য়ারী পিআইওর কাছে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল খুঁজে পাচ্ছেনা মর্মে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এরপর সেটি পিআইও সৌভ্রাত দাশ জেলা ত্রান ও পুনবার্সন কর্মকর্তার কাছে লিখিত চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেন। সরেজমিনে গিয়ে ও গোপনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, শামশুল হকের বাসায় পিআইও অফিসের গুরুত্বপূর্ন সরকারী মালামালগুলো রয়েছে এবং তা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো তার পরিবারের সদস্যরা সরকারী সম্পদ ব্যবহার করছেন বিধি লংঘন করেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত চলতি বছরের ২ ফেব্রে“য়ারী কুতুবদিয়া পিআইও অফিসের অফিস সহকারী শামশুল হককে জেলা ত্রান ও পুনবার্সন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের লিখিত আদেশের অনুবলে রামু উপজেলার পিআইও অফিসে বদলী করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির বলয়ে বদলীর ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও রামুতে যোগদান করেনি শামশুল হক। বদলীকৃত নির্দিষ্ট কর্মস্থলে যথাসময়ে যোগদান না করায় শামশুল হককে কারণ দশার্নোর নোটিশও দিয়েছেন জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের চিঠি ও নোটিশের কোন ধরনের কর্ণপাত করেনি শামশুল। জানা গেছে, গত ২৪মার্চ জেলা ত্রান ও পুনবার্সন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রশাসনিক কারণে শুন্যপদে রামু পিআইও অফিসে শামশুল হককে বদলী করা হয়। বদলীকৃত কর্মস্থলে গত ৮/০২/১৬ইংরেজী তারিখে যোগদানপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু যোগদানপত্র গৃহীত না করিয়ে শামশুল হক ছুটিতে চলে যায়। পরে শামশুল হক দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় যোগদানপত্র গ্রহণ করেনি। পত্র জারির এক মাস অতিবাহিত করে গত ২২ এপ্রিল বদলীকৃত কর্মস্থল রামু উপজেলায় যান শামশুল হক। এরপর সুচতুর শামশুল হক যোগদান পত্র গ্রহণ না করিয়ে রামু ত্যাগ করেন। জেলা ত্রান ও পুনবার্সন কর্মকর্তা তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরো উল্লেখ করেছেন, শামশুল হক নির্দিষ্ট কর্মস্থলে যোগদান না করে বদলী আদেশ স্থগিতের জন্য তদবীর করেছেন।

প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, কুতুবদিয়া উপজেলায় দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কর্মরত থাকার সুবাধে সরকারী বিভিন্ন টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্প থেকে অনৈতিকভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থাণীয়রা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে শামশুল হকের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ৮ বছরের মধ্যে বেশ কয়েকবার বদলী করা হয় শামশুল হককে। প্রতিবারই অবৈধ টাকার মিশন নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ বদলী ঠেকিয়ে কুতুবদিয়ায় বহাল রয়েছেন শামশুল হক।

জানা গেছে, শামশুল হককে চলতি বছরের ২ ফেব্রে“য়ারী রামু উপজেলায় বদলী করা হয়। তিনি রামু যোগদান না করে ঢাকায় গিয়ে অধিদপ্তরে বদলী ঠেকানোর তদবীরে মোটা অংকের মিশন সফলও করে। এদিকে ৮ বছর ধরে একই কর্মস্থলে বহাল থাকলেও ত্রাণ ও পুনবার্সন অধিদপ্তরের উপ- সচিব সোহরাব হোসেনের গত ২৩ মার্চ স্বাক্ষরিত এক অফিসের আদেশের মাধ্যমে বিতর্কিত অফিস সহকারী শামশুল হককে ফের কুতুবদিয়ায় বহাল রেখেছেন। এ নিয়ে কুতুবদিয়ার বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা অবিলম্বে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত শামশুল হককে দ্রুত কুতুবদিয়া থেকে শাস্তিমূলক বদলীসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ত্রান ও পুনবার্সন অধিদপপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে জোরালো হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে কুতুবদিয়ার পিআইও অফিসের অফিস সহকারী শামশুল হকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তা লিখেন; এ বিষয়ে কথা বলতে আমি কারো কাছে বাধ্য নই বলে নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ কথা বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

পাঠকের মতামত: