ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

মহাসড়কের চুনতি ঢালায় লবণের ট্রাক-লেগুনা মুখোমুখি সংঘর্ষ, সড়কে নিথর ১৫ প্রাণ (আপডেট)

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: লবণ বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী লেগুনার সংঘর্ষে সড়কে নিথর ১৫ প্রাণ। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য তথা চুনতি বন রেঞ্জ কার্যালয়ের নিকটস্থ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে মর্মান্তিক ও ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ১২ জন যাত্রী। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আরো একজন। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো তিনজন যাত্রী। তাদেরকে প্রথমে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নবী হোছাইনসহ (৪০) দুজন মারা গেছেন। আহত সাইফুল (৩৫) ২৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক মো. আমির। হতাহতরা সবাই লেগুনার যাত্রী।

লোহাগাড়া উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক জাহেদুল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে চকরিয়া নিউজকে জানান, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক কাইছার হামিদের দুই ভাইও রয়েছেন। তারা হলেন চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের কোরবানিয়া ঘোনার আব্বাস উদ্দিনের পুত্র জসীম উদ্দিন (৩৩) ও তাওরাফ হোসেন বেলাল (১৮)।

সাংবাদিক জাহেদ আরো জানান, দুর্ঘটনায় নিহতদের সবাই পুরুষ। এর মধ্যে দুজন বৃদ্ধ রয়েছেন। নিহত অন্যরা হলেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীর কালামিয়ার ছেলে মোহাম্মদ বাদশা (৩৮), চকরিয়ার উত্তর হারবাংয়ের মৃত আমির হোছেনের পুত্র আবদুস সালাম (৭০), লোহাগাড়ার চুনতি মীরখিলের আবদুর রশিদের পুত্র সিরাজুল ইসলাম (৪০), বড়হাতিয়ার কুমিরাঘোনার আবদুল মাবুদের পুত্র মোহাম্মদ রুবেল (২০), লোহারদিঘির জাফর আহমদের পুত্র জহির উদ্দিন (২৮), উত্তর কলাউজানের আবুল হোছনের পুত্র মোহাম্মদ এনাম (৪৪), অজ্ঞাত আবদুর রশিদ (৫০), লেগুনা চালক চকরিয়ার মৃত ছৈয়দ আহমদের পুত্র ফরহাদ উদ্দিন (১৮) ও হেলপার খুটাখালী গর্জনীয়া পাহাড় এলাকার নূর মোহাম্মদের পুত্র মোহাম্মদ সুমন (১৫)।

এদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্র্রেরণ করা তিনজনের মধ্যে আরো দুজন চমেক হাসপাতালে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দোহাজারী হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি মো. ইয়াছির আরাফাত। আহত অপরজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লোহাগাড়া থেকে যাত্রীবোঝাই করে চকরিয়া যাচ্ছিল লেগুনা পরিবহনের গাড়িটি। লেগুনাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ছারপোকা। ওই গাড়িতে যাত্রী ছিল অন্তত ১৭ জন। যাত্রীবোঝাই লেগুনা মহাসড়কের চুনতি জাঙ্গালিয়া ঢালার কাছে পৌঁছতেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের মধ্যে পড়ে যায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা লবণবোঝাই ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট-২২-৩৯৪৮) সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় ১২ যাত্রী।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ চকরিয়া নিউজকে জানান, দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পর গুরুতর আহত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। এর মধ্যে একজন পথে মারা যায়। বাকি তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকে প্রেরণ করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

লোহাগাড়া থানার ওসি জাকির হোসাইন মাহমুদ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে ১২ জন এবং অপর একজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। তিনি জানান, দুর্ঘটনার পরপরই থানা, হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় জনতার সহায়তায় হতাহতদের উদ্ধার করা হয়। এরপর আহতদের প্রেরণ করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

এ ব্যাপারে দোহাজারী হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি মো. ইয়াছির আরাফাত চকরিয়া নিউজকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়কের বাঁকের কারণে। দুর্ঘটনার পরপরই মহাসড়কের দুই পাশে আহত যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। পরে দুর্ঘটনায় পতিত গাড়ির ভেতর থেকে হতাহতদের একে একে বের করে আনা হয়। এরপর ক্রেন দিয়ে গাড়ি দুটি মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে প্রায় এক ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

তিনি আরো জানান, কক্সবাজার ছেড়ে আসা লবণবোঝাই ট্রাকের চালক দুর্ঘটনার পর পরই পালিয়ে যায়। জব্দ করা হয় ট্রাক ও লেগুনা। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: