ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার ও বাঁশখালী উপকূলের লবণ চাষীরা রেকর্ড সর্বোচ্চ দাম পাচ্ছে

soltএম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ৪ এপ্রিল ॥

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বাঁশখালীর এলাকার উপকুলের লবণ চাষীরা চলতি মৌসুমে রেকর্ড সর্বোচ্চ লবণের দাম পেয়েছে। এবার লবণ চাষে ভাগ্য খুলেছে কয়েক লাখ লবণচাষীর। তাদের দাবি, স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম মাঠপর্যায়ে সর্বাধিক বেশি দামে বিক্রি হয়েছে লবণ।

ইতোপূর্বে কখনো বৃষ্টির পানি, বন্যা, আবার বাজারে দরপতন কখনো অধিক আমদানিতে বাজারে দেশী লবণের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে বারবার মারখেয়ে আসছিল অর্ধলাখ কৃষক।

জানা গেছে, কক্সবাজারে মাঠে উৎপাদিত লবণের দাম সব রেকর্ড ভেঙেছে। এখন পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪০০ টাকায়। সেই হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১০ টাকা।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর শিল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার একর জমিতে চাষীরা সমুদ্রের লোনা পানি ঢুকিয়ে সূর্যের তাপে সেই পানি শুকিয়ে উৎপাদন করছেন সাদা লবণ। বিকালে মাঠের সেই লবণ তারা উত্তোলণ করেন।

চাষী নুরুল আমিন জানান, ২০ ডিসেম্বর থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে উৎপাদিত প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা দরে। ১৫ মার্চের পর এর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫০ টাকায়। আর এক সপ্তাহ ধরে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা দরে।

সদরের পোকখালী গোমাতলি এলাকার লবণ চাষী নুরুল হক, হাবীব উল্লাহ ও আবদুল্লাহ খানঁ জানান, গত অর্ধযুগ ধরে প্রান্তিক চাষীরা প্রতি কেজি লবণ ২-৩ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারেনি।

তাদের মতে, ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত বোল্ডার লবণে বাজার সয়লাব থাকত। স্বাধীনতার পরবর্তী কোন সময় চাষীরা মাঠ পর্যায়ে কেজিপ্রতি লবণ ১০ টাকায় বিক্রির সুযোগ পাননি। একই উপজেলার খুরুশকূল, চৌফলদন্ডী, ভারুয়াখারী, পোকখালী, ইসলামাবাদসহ জেলার মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় চলতি মৌসুমে লবণের বাম্পার ফলন হয়েছে।

মহেশখালীর কালারমারছড়া এলাকার চাষী ছৈয়দুল কাদের জানান, আমদানির কারণে এত দিন তারা মাঠে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য পাননি। সম্প্রতি আমদানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর মাঠে উৎপাদিত লবণের দাম দ্রুত বেড়ে যায়। এখন পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪০০ টাকা দরে।

টেকনাফ উপজেলা লবণচাষী ঐক্য পরিষদের সভাপতি শফিক মিয়া বলেন, উপজেলায় প্রায় ২৪ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করছে ১৪ হাজার পরিবার। কয়েক বছর ধরে লবণের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ৯০ শতাংশ চাষী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার দাম বাড়ায় চাষীরা বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনায় মাঠে নেমেছে। চলতি এপ্রিল মাসের শেষ পর্যন্ত দরবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এবার লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, লবণ আমদানি বন্ধ করতে আমি শিল্পমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপকূলের গরিব মানুষকে স্বাবলম্বী করতে ভারত থেকে লবণ আমদানি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। লবণের উচ্চমূল্য এখন উপকূলের লাখো মানুষের ভাগ্য খুলে যাচ্ছে। বিপুল উৎসাহ নিয়ে চাষীরা মাঠে নেমেছেন। কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ দিয়েই জাতীয় চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন এই সংসদ সদস্য।

কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প (বিসিক) কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর কক্সবাজার জেলা ও বাঁশখালী উপজেলায় ৫৯ হাজার ৯৬০ একর জমিতে লবণ চাষ হয়। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ লাখ ৮০ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছিল ১৬ লাখ ২৭ হাজার টন। এবার ৬২ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টন। বছরে পুরো দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৭ লাখ ২০ হাজার টন।

বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবছার উদ্দিন জানান, দাম বাড়ায় এখন মাঠে লবণ উৎপাদনের মহোৎসব চলছে। জেলায় ৫৫ হাজার প্রান্তিক চাষীসহ লবণ উৎপাদন ও বিপণনে জড়িত রয়েছেন অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ। তারা আজ বড়ই খুশি।

পাঠকের মতামত: