ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আহত পুলিশ সদস্যের জীবন রক্ষায় চাকুরি হারালেন এনজিও কর্মী

নিউজ ডেস্ক ::  ‘হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল’ নামের আন্তর্জাতিক একটি এনজিও’র মাইক্রোবাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত পুলিশ উপ পরিদর্শককে মানবিক কারনে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেয়ার অপরাধে চাকরি হারিয়েছেন ওই সংস্থারই এক কর্মী। মানবিক কাজের জন্য স্থানীয় একজন তরুণের চাকরি হারানোর বিষয়টি এলাকার লোকজনের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় আহত পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখার তানভীরকে চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বিকাল ৩ টায় তার অপারেশন শুরু হয়। ইফতেখারের বড় ভাই নুরুল আবছারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার ভাইয়ের একটি হাত সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। তার হাতে পায়েও অপারেশন করা হয়েছে।

জানা গেছে, ‘হ্যান্ডিক্যাপে’র অর্থ হচ্ছে পক্ষাঘাতগ্রস্থ লোককে সহযোগিতা দেয়া। অথচ সেই হ্যান্ডিক্যাপেরই পদস্থ কর্মকর্তারা আহত পুলিশ উপ পরিদর্শককে সেই গাড়ি থেকে রাস্তায় ফেলে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন চাকুরি হারা কর্মীকে। এমনই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে ১ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়িতে। ঘটনার কয়েকদিন পর বিষয়টি সবার নজরে আসলে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের সাইমান রোডের হ্যান্ডিক্যাপ অফিস থেকে এনজিওটির ভাড়া করা একটি মাইক্রোবাস যাচ্ছিল উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে। মাইক্রোবাসটিতে ছিলেন দুইজন বিদেশী ভিজিটর। হ্যান্ডিক্যাপের মাইক্রোবাসটি হিমছড়ি পৌঁছার সাথে সাথেই কক্সবাজারমুখি টেকনাফ থানায় সদ্য যোগদানকারি উপ পরিদর্শক ইফতেখার তানভীরের মোটর সাইকেলটিকে সজোরে ধাক্কা মারে।

মাইক্রোবাসের ধাক্কায় পুলিশের উপ পরিদর্শক ইফতেখার তানভীর তার মোটর বাইক নিয়ে রাস্তায় দুমড়ে মুচড়ে পড়ে যান। হ্যান্ডিক্যাপের মাইক্রোবাস চালক রহিম এনজিওটির কক্সবাজার অফিসে বসা জেনারেল সার্ভিস অফিসার মো. জাহেদুল গণির সাথে যোগাযোগ করে এসব জানান। চালক রহিম এসময় পুলিশ উপ পরিদর্শকের অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে গাড়িতে তুলে নেন। এরপর এনজিওকর্মী জাহেদ দুর্ঘটনার কথা দ্রুত এনজিও’র উখিয়া অফিসের এরিয়া সার্ভিস ম্যানেজার এম.এস. নাঈমকে জানান। ঘটনার কথা জাহেদুল গণি এনজিও’র ঢাকা অফিসেও অবহিত করেন। এরপর এম.এস নাঈম কক্সবাজার অফিসে বসা এনজিওকর্মী জাহেদকে নির্দেশনা দেন যে আহত পুলিশের উপ পরিদর্শক ইফতেখারকে দ্রুত গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে বিদেশীদের উখিয়ার গন্তব্যে নিয়ে যেতে।

জেনারেল সার্ভিস অফিসার মো. জাহেদুল গণি এসব বিষয়ে আরো জানান, অফিসের এরকম নিষ্ঠুর কথা শুনে তার (জাহেদ) মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। জাহেদ তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, আহত লোকটার অবস্থা মোটেই ভাল নয়। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। অন্যথায় লোকটা পক্ষাঘাতগ্রস্থও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাতেও নাছেড়া বান্দা এমএস নাঈম। এম.এস নাঈমের এক কথা-আহত পুলিশ কর্মকর্তাকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি বিদেশীদের রোহিঙ্গাদের মানবিক কাজে নিয়ে যেতে হবে। এম.এস নাঈমের এমন অমানবিক কথা না শুনে এনজিওকর্মী জাহেদুল গণি গুরুতর আহত পুলিশ উপ পরিদর্শককে গাড়িতে করে চিকিৎসা দেয়ার জন্য চালক রহিমকে নির্দেশ দেন। যথারীতি জাহেদুল গণির কথায় গাড়ির চালক রহিম আহত পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে যান হাসপাতালে। অভিযোগ উঠেছে এনজিও’র জেনারেল সার্ভিস অফিসার মো. জাহেদুল গণির কথায় আহত পুলিশ কর্মকর্তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার কথা শুনেই পুরো অফিসটিই যেন রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এমনকি একজন আহত সরকারি কর্মকর্তার প্রতি মানবতা দেখানোর বিষয়টিকে ‘বড় অপরাধ’ হিসাবে গণ্য করা হয়। এজন্য জাহেদকে কারণ দর্শাও নোটিশও দেয়া হয়।

পরবর্তীতে উক্ত অফিসের কর্মকর্তারা গাড়ির চালক ও জাহেদুল গণির উপর চড়াও হয়। অফিসের কর্মকর্তারা বাংলাদেশী একজন সরকারি কর্মকর্তার প্রতি মানবিক আচরণ করার অপরাধে তাকে বারবার তিরষ্কার করতে থাকেন। এমনকি তাকে মানসিক চাপের মুখে ফেলে জোর পুর্বক পদত্যাগ পত্রে দস্তখতও আদায় করে নেন। জাহেদুল এমন অমানবিক কাজের প্রতিকার চেয়ে মঙ্গলবার (৩ মার্চ) শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) এর কাছে তার চাকরি ফিরে পাবার ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানিয়েছেন। এ বিষয়ে গাড়িটির চালক রহিমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, একজন আহত সরকারি কর্মকর্তাকে প্রাণে বাঁচাতে গিয়ে তারও চাকুরি গেছে। এসব বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য এনজিও হ্যান্ডিক্যাপের উখিয়া অফিসে কর্মরত এরিয়া সার্ভিস ম্যানেজার এম.এস নাঈমের মোবাইলে বার বার মোবাইল করা হয়। তিনি একবার মোবাইল ধরেই লাইন কেটে দেন।

মানবিক কাজ করতে গিয়ে এনজিওটির এরকম অমানবিক কাজে হতাশ হয়ে জাহেদুল সোমবার (২ মার্চ) রাত ১০ টা ১৩ মিনিটে তার নিজের ফেসবুক আইডিতে জাহেদুল গণি ‘মানবতার আড়ালে হিংস্রতা’ শীর্ষক একটি স্ট্যাটাস পোষ্ট করেন। সেই ষ্ট্যাটাসটি রিতীমত ভাইরাল হয়ে পড়ে। তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ষ্ট্যাটাসটি নিয়ে। এরকম স্ট্যাটাসটি পোষ্ট করায় এনজিও অফিসের কর্মকর্তারা জাহেদুলকে হুমকি দিচ্ছেন যে তার বিরুদ্ধে আইসিটি ধারার মামলা করা হবে। আহত পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখার তানভীরও একটি পোষ্ট দেন নিজের ফেসবুক আইডিতে। এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
সুত্র : দৈনিক পূর্বকোন

পাঠকের মতামত: