ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

অবৈধ রোহিঙ্গাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আইওএম’র রহস্যজনক মিশন

Ruhingaআতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার :::

কক্সবাজার জেলাব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনুপ্রবেশকারী অবৈধ রোহিঙ্গাদের নিয়ে রহস্যজনক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্হা (অাইওএম) ও কয়েকটি এনজিও। এসব এন জি ও সংস্হার দেশী-বিদেশী কর্মকর্তারা মায়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী অবৈধ রোহিঙ্গাদের ধর্মান্তরকরন ও দেশে না ফিরতে উদ্ধুদ্ধকরনসহ ও বহুবিধ উস্কানীমুলক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফ উপজেলা ও পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকারি রোহিঙ্গাসহ কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থানকারী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের নানাভাবে পৃষ্টপোষকতা ও উস্কানি দিচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা  (আইওএম)সহ কক্সবাজারে কর্মরত কয়েকটি এনজিও। অভিযোগ উঠেছে, আইওএমসহ ওই সব বেসরকারি সংস্থার পৃষ্টপোষকতার কারণেই সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না।
এছাড়াও সম্প্রতি যে অভিযোগটি গুরুতর ভাবে সামনে এসেছে তা হলো, আইওএমের সহযোগিতায় বিভিন্ন খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী সংগঠনের ব্যানারে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির, উপকূলীয় এলাকা চোয়াংখালী, মনখালী, পাটুয়ারটেকসহ উপজেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে তাদের খ্রিষ্টান ধর্ম শিক্ষাদান ও সুযোগ বুঝে ধর্মান্তকরনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে উপরোক্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের আড়ালে খ্রীষ্টধর্মীয় বইপুস্তক বিতরনের  সময় তিনজন খ্রীষ্টান ধর্মীয় লোককে আটক করেছিল উখিয়া থানা পুলিশ। এরা হলেন ন্যাশনাল খ্রীষ্টান কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সভাপতি বিশপ ফিলিপ অধিকারী (৫৫), পালক বিকাশ মন্ডল (৩২) ও শংকর দাশ (৩৬)। এদের সকলের বাড়ি ঢাকার ১২৭০ নং ভাটারা নতুন বাজার এলাকায়।
উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি অঞ্চলের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, ৮০’র দশকে এদেশে প্রথম রোহিঙ্গাদের আগমন ঘটে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজার জেলার রামু, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। তাদের সরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেয়া হয়। পরে দুইদেশের মধ্যকার সফল কূটনৈতিক তৎপরতায় রোহিঙ্গা  প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অতি অল্প সময়ে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে সক্ষম হলেও অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন বন-জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে যায়।
ওই সূত্রগুলো মতে, এই প্রত্যাবাসনের কিছুদিন পর ফের দ্বিতীয় দফায় ১৯৯১ সালে সীমান্তের নাফ নদী অতিক্রম করে দুই লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন শরাণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করে। এ প্রক্রিয়ায় ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে ফেরৎ পাঠানো হলেও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে ১ হাজার ৭৭৫ পরিবারের ১৪ হাজার ৪৩১ জন রোহিঙ্গা এবং উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এক হাজার ১৯৪ পরিবারে ৯ হাজার ৮৫০ জনসহ প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা দুই শিবিরে অবস্থান করেন।
২০০৪ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেলে আটকা পড়ে ৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এসব অবৈধ রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে ইতিমধ্যে সরকার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে।
এ জরীপে কক্সবাজার জেলায় প্রাথমিক ভাবে ৩৭ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা পরিবার চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে ২০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার এবং ১৭ হাজার খানা মিশ্র রোহিঙ্গা পরিবার হিসেবে সনাক্ত করা হয়। যাতে রয়েছে অন্তত ৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা।
ওইসব সূত্র অভিযোগ তুলেছেন, এসকল অবৈধ রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ‘আইওএম’! যদিও এই সংস্থাটির কাজ হলো বিভিন্ন দেশে অবৈধ ভাবে অভিবাসিত হয়ে আটকে পড়া নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু আইওএম ওই কাজের সুযোগে বাংলাদেশ সরকারের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রোহিঙ্গাদের এদেশে অবস্থান করতে নানাভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, সম্প্রতি কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গদের ১৫টি বসতবাড়ি ভেঙ্গে দেয় বনবিভাগ। কিন্তু আইওএমের পক্ষ থেকে তালিকা তৈরি করে আরো কিছু সংখ্যা বাড়িয়ে মোট ৯৭টি রোহিঙ্গা পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।
সূত্র মতে, ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ক্যাম্প ইনচার্জ) মাহমুদুল হক ‘আইওএমে’র কক্সবাজার জেলার সমন্বয়ক আসিফ মুনীরের সাথে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। যা পরবর্তীতে উখিয়ার ইউএনও’র মধ্যস্থতায় সমাধান করা হয়।
এব্যাপারে ‘আইওএম’র কক্সবাজার জেলা সমন্বয়কারি আসিফ মুনীর বলেন, ‘সরকারের অনুমতি নিয়ে আমরা রোহিঙ্গাদের মাঝে কাজ করে যাচ্ছি।’
কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ক্যাম্প ইনচার্জ) মাহমুদুল হক বলেন, ‘আমি নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সার্বিক বিষয়ে দেখাশোনা করি। আর অনিবন্ধিত যে সকল রোহিঙ্গা রয়েছেন এদের নিয়ে কাজ করে থাকে আইওএম।’ উখিয়া টেকনাফের স্হানীয় বাসিন্দারা জানান, আইওএম সহ কয়েকটি এনজিও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সমস্যাকে জিইয়ে রেখেছে। এদের অাস্কারায় বেপরোয়া হয়ে উঠা অপরাধপ্রবন রোহিঙ্গাদের কারনে জেলার আইনশৃংখলা পরিস্হিতির মারাত্নক অবনতি হচ্ছে। এদিকে অাইওএম কর্তৃক অবৈধ রোহিঙ্গাদের পৃষ্ঠপোষকতা, রোহিঙ্গাদের  মিয়ানমারে না ফিরতে উস্কানি ও  ধর্মান্তকরনে উদ্ধুদ্ধকরনসহ আরো বিবিধ কর্মকান্ড সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয় এর কর্মকর্তাদের। এর উপর চলমান রোহিঙ্গা জরিপে কক্সবাজার জেলায় তিন লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা সনাক্ত হলে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা স্বার্থ রক্ষায় মরিয়া হয়ে মাঠে নামে বিতর্কিত এনজিও সংস্হা অাইওএম। এর অংশ হিসাবে গণমাধ্যমের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরাতে আইওএম কর্মকর্তারা কক্সবাজারের একটি তারকা হোটেলের সম্মেলন কক্ষে “নিরাপদ প্রত্যাবসনে দায়িত্বশীল রিপোর্টিং” শীর্ষক ২ দিনের তথাকথিত কর্মশালার আয়োজন করে। কিন্তু ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া উক্ত কথিত  “কর্মশালা”য় সচেতন অনেক সাংবাদিক যাননি। এসব এনজিও বিশেষ করে অাইওএম’র লাগাম এখন থেকে টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হতে পারে বিধায় এদের যাবতীয় কর্মকান্ড গোয়েন্দা নজরদারীর আওতায় আনার  দাবী জানিয়েছেন জেলার  সচেতন মহল।

পাঠকের মতামত: