ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভালবাসা দিবসে চকরিয়ার গোলাপ নগর জমজমাট, কোটি টাকার ফুল বিক্রির স্বপ্ন চাষীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কাল ১৪ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস। একইদিনে ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুণ পালিত হবে। শীতের হিমেল হাওয়া বিদায় নিচ্ছে, বসন্ত বাতাসে ঝিমধরা শীত নেই, পড়ছে একটু একটু গরমও। তবুও আছে শুধুই ভালোবাসা। প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে সবাই ঘুরতে চায় ভালোবাসা দিবসে।

আবার অনেকে স্বরণীয় করে রাখতে চায় আপনজনকে। তাই এবার এই দুই উৎসব পালন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন লাখো তরুণ-তরুণীরা। এ দুই উৎসবে ফুলদিয়ে বরণ করবে প্রিয়জনদের। এসব দিবস গুলো পালনে প্রচুর ফুলের চাহিদাও রয়েছে। আবার ক’দিন পর আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশে ফেব্রুয়ারি গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত।

এদিকে ভালোবাসা দিবস ও বসন্তকে ঘিরে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটক স্পট ও পার্ক গুলো নতুনরূপে সাজিয়েছে। বসে নেই ফুল ব্যবসায়ীরা। চকরিয়ার ‘গোলাপ নগর’ খ্যাত বরইতলী থেকে আগে ভাগেই নানা প্রজাতির রকমারি ফুল সংগ্রহ করছে সাধের ফুল ব্যবসায়িরা। অনেকেই ফুল চাষীদের কাছে আগাম অর্ডার দিয়ে রেখেছেন, যাতে ফুল সংকটে পড়তে না হয়। এ বছর ফুলও হয়েছে বেশ ভাল। সবমিলিয়ে এখানকার ফুলচাষীরদের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে।

এবার চকরিয়া উপজেলার বরইতলীর চাষীরা কোটি টাকার ফুল বিক্রি করার স্বপ্ন দেখছেন। এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক থাকায় বেশ খুশিমনে ফুল চাষে নামেন চাষিরা। এতে চলতি বছর পুরোদমে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে ‘গোলাপ নগর’ চকরিয়া উপজেলা বরইতলী ইউনিয়নে।

চকরিয়ার বরইতলী থেকে পাইকারি মূল্যে কিনে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে ফুল বিক্রি করেন আড়তদার অনেক ব্যবসায়ী। বরইতলী থেকে তারা প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ হাজার ফুল কেনেন। বিশেষ দিবসে তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে কেনেন তারা। এবারের ভালোবাসা, পহেলা ফালগুন ও মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আগাম অর্ডার দেওয়া হয়েছে গোলাপ ও গ্লাউডিওলাস ফুলের।

বরইতলী একতা বাজার এলাকার ফুলচাষি জসিম চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমি একসময় তামাকের চাষ করতাম। তখন মুনাফাও ভালো পেয়েছিলাম। কিন্তু হাড়ভাঙা খাটুনি ও দিন-রাত পরিশ্রমের কারণে শরীরের অবস্থা তেমন ভালো যাচ্ছিল না। তাই অন্যের দেখা দেখিতে তামাক চাষ ছেড়ে গত তিন বছর ধরে উদ্যোগী হই ফুল চাষে।
এবারও দুই কানি জমিতে গোলাপ ও গ্লাউডিওলাস ফুলচাষ করেছি। ফলনও ভালো হওয়ায় বেশ খুশি লাগছে।
জসিম আরও বলেন, প্রতিদিন সকালে বাগান থেকে ফুল তোলার পর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাইকাররা সরাসরি বাগানে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক পাইকার আগাম অর্ডারও দিয়ে রেখেছেন ভালোবাসা, বসন্ত ও মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে। এতে এবার কম করে হলেও তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

চাষিরা চকরিয়া নিউজকে জানান, ফুলের বাজারে বরইতলীর বাগান গুলোর ফুল বর্তমানে অনেক চাগিদা রয়েছে। প্রতিটি গোলাপের দাম প্রকার ও মানভেদে পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাচঁ টাকায়। আর নানা রংয়ের গ্লাউডিওলাস ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। এতে চাষির পাশাপাশি বাগান পরিচর্যা ও ফুল তোলায় নিয়োজিত চার শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটেছে নিয়মিত পারিশ্রমিক ও কাজ পাওয়ায়।

ফুল বাগান শ্রমিক বরইতলী পূর্ব পাড়ার রহিমা বেগম, আমেনা খাতুন চকরিয়া নিউজকে বলেন, দেশে ফুলের চাহিদা ভালো থাকায় ফুল বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছি। প্রতিদিন টাকাও আয় করছি। এতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালভাবে অভাব-অনটন ছাড়াই সুখে আছি। বলতে গেলে এখন আর আমাদের পরিবারে কোন অভাব নেই।

সরেজমিন ফুলচাষি ও শ্রমিকদের সথে কথা বলে জানা যায়, গোলাপ নগর খ্যাত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের শতাধিক বাগান থেকে প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুল সরবরাহ করা হয় পাইকারী আড়তদারদের কাছে। বিশেষ বিশেষ দিবস গুলোতে এসব বাগানের ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গত আড়াই দশক ধরে এখানকার চাষিরা রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ফুলচাষ করে আসছেন। প্রথমদিকে অল্প জমিতে নানা জাতের ফুলের চাষ হলেও বর্তমানে বরইতলী ইউনিয়নে ১১০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের।

বরইতলী ফুলবাগান মালিক সমিতির সভাপতি মো: মইনুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ ফুল চাষের অনুকুলে থাকায় পুরোদমে ফুলচাষে নেমেছেন শতশত চাষি। তাই আশা করছি, এবারের ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবসে গোলাপ, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল বিক্রি হবে কোটি টাকার কাছাকাছি। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাইকারি ক্রেতারা বাগানে এসে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আগাম অর্ডারও দিয়ে রেখেছেন চাষিদের। আগামী তিনদিনে সবকটি বাগানের সিংহভাগ ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, বরইতলী ইউনিয়নে চলতি বছর ৬৬ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ২৮ হেক্টরে গ্লাউডিলাস ও আরও ১৬ হেক্টরসহ মোট ১১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করছেন পাচঁ শতাধিক চাষি। এবারের ভালোবাসা দিবসসহ সবকটি দিবসে ফুল বিক্রিও ভালো হবে। এতে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন চাষিরা।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সিকদার চকরিয়া নিউজকে বলেন, তার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের জমিতে সর্বনাশা তামাক চাষ করতেন। তামাক চাষের কারণে যেভাবে পরিবেশ ও শারীরিক ক্ষতি হয় তা আমি তাঁদের বিভিন্ন ভাবে বুঝাতে সক্ষম হই। তাই তাঁরা কয়েক বছর ধরে তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে ফুল চাষের দিকে আগ্রহ বাড়িয়েছে। গত তিনবছর ধরে ফুলচাষ করে অনেক মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে জীবন যাপন করছেন। তাদের ছেলে মেয়েরাও স্কুল-কলেজে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেছেন। এবছর প্রকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় চাষিদের বাগান গুলোতে ফলন বেশভাল হয়েছে। বাগান গুলোতে ফুল বিক্রিও বেড়েছে অনেকগুণ।

পাঠকের মতামত: