ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে বিপিএল ঘিরে চলছে ভয়ঙ্কর জুয়ার কারবার

শাহীন মাহমুদ রাসেল ::  বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ক্রিকেট খেলা নিয়ে সমগ্র দেশ যখন উন্মাদনায় আছে ঠিক সে মূহুর্তে কক্সবাজারের প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার যুব সমাজ ব্যস্ত হয়ে পড়ছে বিপিএল এর জুয়া খেলায়।

প্রশাসন এ বিষয়ে অবগত না থাকার  ফলে ক্রমশ এর বিস্তার লাভ করে যুবসমাজ বিপথ গামী হচ্ছে। জুয়ায় টাকা হেরে গিয়ে অনেক যুবক চুরি ছিনতাই সহ নানা ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ‘খেলা হয় ঢাকায় আর জুয়া চলে এলাকায়’ এমন পরিস্থিতি পুরো জেলা জুড়েই।

এক সময় তাস ছিল জুয়া খেলার অন্যতম মাধ্যম। আর যারা তাস খেলত তারা লুকিয়ে গোপন কোন আস্তানায় জুয়ার আসর বসাতো। তবে এখন সময় পাল্টে গেছে। এখন প্রকশ্যে জুয়া খেলা চললেও কারো করার কিছু থাকে না। গত কয়েক বছর থেকে বিপিএল খেলা শুরুর সময় থেকে ক্রিকেট জুয়ায় আসক্ত হয়ে পরেছে তরুন, যুবকসহ অনেকেই। ঘরে বা নিজ কর্মস্থানে বসেই মোবাইল ও বিকাশ একাউন্টের মাধ্যেমে ক্রিকেট জুয়া খেলছেন। জুয়া খেলায় বাজি ধরে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে চুরি চিন্তাই সহ নানা ধরনের অপরাধ মুলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে এক শ্রেণীর যুবসমাজ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাট-বাজার থেকে শুরু করে পাড়া- মহল্লার চায়ের দোকান, বাসা-বাড়ি এমনকি যেখানেই টিভি সেখানেই চলছে বাজি ধরা। খেলা শুরু হওয়ার পর থেকে ১০০ থেকে শুরু হয়ে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা হচ্ছে। জুয়ার টাকা যোগান দিতে কেউ কেউ দামি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, সোনার গহনাসহ নানা দামি জিনিসপত্র বন্ধক রাখছে। আর সুদের ব্যবসায়ীরাও থাকছেন জুয়ার বোর্ডের পাশেই। উপজেলা সদরসহ প্রায় ৪৫টি স্পটে বিপিএল জুয়া চলছে। ফলে ক্রিকেট জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় টিভির পর্দার সামনে খেলার দর্শকের মধ্যে যে ভিড় দেখা যায়, এর প্রতিটিই ছোটখাটো জুয়ার আসর। ম্যাচে জয়-পরাজয়, এক ওভারে কত রান, এক বলে কী হবে, কোন খেলোয়াড় কেমন খেলবে এমন সব কিছুর ওপরই হচ্ছে জুয়া। চায়ের দোকানের এসব ছোটখাটো আসরে পুরো ম্যাচের জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে একেক ধরনের রেট রয়েছে। তবে সাধারণত ফেবারিট দলের পক্ষে দেড় হাজার ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের পক্ষে এক হাজার টাকা ধরে খেলার প্রচলনই বেশি। মাঝারি মাপের জুয়ায় ১০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা রেট দেওয়া হচ্ছে। কেবল ম্যাচে হারজিত নিয়েই বাজি নয়, প্রতি ওভারে ওভারে- এমনকি বলে বলে বাজি ধরছেন ছোট-বড় বাজিকররা। রাস্তার মোড়ের দোকানগুলোতেই বেশি হচ্ছে এ খেলা।

ঠিকানা প্রকাশ না করার শর্তে মিজান নামের এক বিপিএল জুয়াড়ি বলেন, হরেক রকম বাজি হয়। নির্দিষ্ট কোনো বলে উইকেট পড়বে, সিঙ্গেল-ডাবল রান হবে, নাকি বাউন্ডারি হবে। কোনো ওভারে ১০ রানের কম বা বেশি হবে কি না, কিংবা উইকেট পড়বে কি না। ইনিংসে রানের পরিমাণ কিংবা খেলার ফলের ওপর বাজি হয়। ম্যাচে ভালো দলের পক্ষে বাজির হারও বেশি হয়। দরও বেশি ওঠে। ভালো দল হারলে টাকা যেমন বেশি যায়, তেমনি খারাপ দল জিতলে বেশি টাকা আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ নিয়ে বলেন ক্রিকেটের বড় কোন আসর হলেই তাদের ছেলেরা বাড়িতে ঠিকমত থাকে না। বাসার থেকে এইটা লাগবে, ওইটা লাগবে বলে টাকা পয়সা নেয়। কখনো টাকা পয়সা পরিবারের পক্ষ থেকে না দিতে পারলে তারা বাসায় জামেলা সৃষ্টি করে। এদিকে বিপিএল নিয়ে যুবকরা জুয়ার দিকে অধিক পরিমানে ঝুঁকে পড়ছে রামু ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দশক ধরে দেশে যে ক্রিকেট উন্মাদনা দিন দিন বাড়ছে। এ উন্মাদনাকে এক শ্রেণীর জুয়াড়ি তাদের সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। প্রথমদিকে জুয়াড়িরা শহরকেন্দ্রিক তৎপরতা শুরু করলেও এখন তা ছড়িয়ে দিচ্ছে গ্রামে। অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছে এ জুয়ার আসর। এ জুয়া খেলে অনেকে রাতা-রাতি বনে যাচ্ছে লাখপতি আবার অনেকে হচ্ছে নিঃস্ব। বিপিএলকে ঘিরে এমনই মত্ত মেতে উঠেছে শহর কেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটটি এতো ধূর্ত যে পুলিশ হানা দিয়েও তাদেরকে ধরতে পাচ্ছেনা।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের ওসি (ডিবি) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, কিছুদিন আগেও কয়েকজনকে আটক করে হাজতে পাঠিয়েছি। বিপিএল জুয়ার বিষয়ে আমরা বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযান করেছি। তিনি আরোও বলেন, প্রকাশ্যে যেসব জুয়ার আসর বসছে সেখানে আমাদের অভিযান যথারীতি চলছে। অলিগলিতে বা চা দোকান রেস্টুরেন্টে বিপিএল ক্রিকেট নিয়ে জুয়া চলছে কিনা এমন খবরাখবর নেয়া হচ্ছে। এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালানো হবে।

পাঠকের মতামত: