ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

দৈনিক ইনানীর বিরুদ্ধে এডভোকেট গুন্দুর ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলা

বার্তা পরিবেশক ::  কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইনানী পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও বার্তা প্রধান শফি উল্লাহ শফি ও সম্পাদক প্রকাশক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১০কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দু। ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এ তার পক্ষে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল এই মামলা দায়ের করেন (সি.আর-১৫১৩/২০১৯ইং (সদর)। এতে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ আরও একাধিক ব্যক্তিকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এছাড়াও এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দুর দায়েরী মামলার ওকালত নামায় স্বাক্ষর করে আদালতে উপস্থিত ছিলেন- জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আ.জ.ম মঈন উদ্দীন, সাবেক পিপি এডভোকেট মমতাজ আহমদ, এডভোকেট রাখাল মিত্র, এডভোকেট আমির হোসেন, এডভোকেট সাঈদ হোসেন, এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, এডভোকেট মাহবুবুর রহমান, এডভোকেট সাজ্জাদুল করিম, এডভোকেট তাপস রক্ষিত, এডভোকেট অরুপ বড়–য়া তপু, এডভোকেট ফিরোজুল আলম, এডভোকেট ইমরুল কায়েস মানিক, এডভোকেট শামসুল আলম, এডভোকেট নুরুচ্ছপি, এডভোকেট আহমদ কবির, এডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, এডভোকেট আশরাফুল আলম সুমন, এডভোকেট আবদুল শুক্কুর, এডভোকেট সলিম উল্লাহ বাহাদুর, এডভোকেট আমিনুল হক, এডভোকেট মোঃ তৌহিদুল আনোয়ার, এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ, এডভোকেট মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, এডভোকেট মোহাম্মদ তারেক, এডভোকেট এস.এম শাহীনুল হক, এডভোকেট শওকত বেলাল, এডভোকেট নুর মোহাম্মদ, এডভোকেট ইয়াসমিন শওকত জাহান রোজী, এডভোকেট প্রতিভা দাশ, এডভোকেট সাকী এ কাউছার (সাকী), এডভোকেট এ এইচ এম শাহ জাহান সহ শতাধিক আইনজীবী।
কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ্ দ-বিধির ৫০১/৫০২ ও ৫০৪ ধারায় মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত দৈনিক ইনানী পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও বার্তা প্রধান শফি উল্লাহ শফি ও সম্পাদক প্রকাশক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। একই সঙ্গে আগামী ১৭ ডিসেম্বর-২০১৯ মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাদী একজন আইন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সুনাগরিক ও কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির একজন সিনিয়র সদস্য হন। বাদী সুদীর্ঘ ২০ বৎসর যাবৎ অত্যন্ত সুনামের সাথে বিচার প্রার্থী জনগণ যাতে ন্যায় বিচার পায় তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইন পেশায় নিয়োজিত থেকে কক্সবাজার জেলায় একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী হিসাবে নিজেকে সু-প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ছাড়াও বাদী ছাত্র জীবন থেকেই জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে রাজনীতি করার সুবাদে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের নির্বাচিত সভাপতি হিসাবে ১৯৯১ইং হতে ১৯৯৯ইং সাল পর্যন্ত দক্ষতার সাথে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন এবং কক্সবাজার জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহবায়ক, জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেরও দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সাল হতে ২০১৩ইং সাল পর্যন্ত কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়াও একজন সু-প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী ও একজন রাজনৈতিক দায়িত্বশীল কর্মী হিসাবে বাদী এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দুর সম্পাদনায় “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন”, “মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন”, “অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইন”, “আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলছি”, “এবারের সংগ্রাম”, “উন্নয়নের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা” নামক গ্রন্থ সমূহ প্রকাশিত হয় এবং দেশব্যাপী পাঠক সমাদৃত হয়। যে কারণে বাদীকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ সরকারের মন্ত্রী পরিষদের অনেক সদস্যবৃন্দসহ সারা দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা একজন সৎ ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী সাদামনের ভাল মনের মানুষ ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে চিনেন এবং জানেন। যা বাদীকে অর্জন করতে দীর্ঘ ৩৫টি বছর তিলে তিলে মেধা, শ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।
মামলার আর্জিতে বলা হয়, বাদী একজন কক্সবাজার জেলার সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। ব্যক্তি জীবনে বাদীর একমাত্র মেধাবী কন্যা চট্টগ্রাম সরকারী মহসিন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী। একমাত্র মেধাবী পুত্র কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় হতে আগামী ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার্থী।
অন্যদিকে আসামীরা কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক ২৩টি পত্রিকার মধ্যে শুধুমাত্র “দৈনিক ইনানী” নামক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও বার্তা প্রধান হন। পত্রিকাটি সরকারীভাবে ডিএএফপি ভুক্তও নহে। তারা বাদীর মত সমাজের সু-প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিগণের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগণের নিকট হতে অর্থের বিনিময়ে লাভবান হয়ে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, মানহানীকর জঘন্য প্রকৃতির সংবাদ তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করে জঘন্য অপরাধ সংগঠিত করাই তাদের পেশা। ১নং আসামী কর্তৃক উক্তরূপ জঘন্য মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করায় তাকে সচেতন জনগণ বেশ কয়েকবার গণধোলাই দিয়ে আহত করেন।
এতে আরো বলা হয়, আসামীগণের অপরাধের ধারাবাহিকতায় গত ২১ নভেম্বর আসামীদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও পরিচালিত “দৈনিক ইনানী” পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় বাদী এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দুর ছবি সম্বলিত “ধর্ষণ মামলায় এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দু গ্রেফতার” শীর্ষক এক জঘন্যতম মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে বাদীর ব্যক্তিগত-সামাজিক-পারিবারিক ও রাজনৈতিক মান মর্যাদা চরমভাবে ভুলণ্ঠিত করে বাদীকে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে চরমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। এমনকি বাদীর দুটি অধ্যয়নরত মেধাবী সন্তানদের কাছে বাদীকে পিতা হিসাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তাদের উপর মানসিক চরম আঘাত করেছেন। যার ফলে আসামীরা বাদী এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দুর ১০ কোটি টাকার সম্মানহানি করেছেন। যাহা কোনভাবেই পুরনীয় নয়।
এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দুর আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল বলেন- গত ২০ নভেম্বর বিকাল ৩টার দিকে কক্সবাজার প্রধান সড়কের লালদীঘির পাড়স্থ ইডেন গার্ডেন এর ৪র্থ তলায় অবস্থিত আমার মক্কেলের ‘ল’ চেম্বারে ঢাকার হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোহাম্মদ মহিউদ্দীন ফারুক এসে বিভিন্ন কুশল বিনিময় করেন এবং আমার মক্কেলকে হাতিরঝিল থানার মামলা নং- ২০, তারিখ- ১৩/১১/২০১৯ইং মামলার একজন সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য প্রদানের নিমিত্তে তাঁর সাথে ঢাকায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে আমার মক্কেল উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার অনুরোধে তাহার সাথে ঢাকায় গিয়ে গত ২৩ নভেম্বর শনিবার বিজ্ঞ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত, ঢাকার নিকট সাক্ষ্য প্রদান করে গত ২৪ নভেম্বর কক্সবাজার চলে আসেন। অতঃপর আমার মক্কেলের ‘ল’ চেম্বারে আসলে তাকে স্বাক্ষীরা আসামীগণ কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত “দৈনিক ইনানী” পত্রিকায় প্রকাশিত মিথ্যা, ভিত্তিহীন, মানহানীকর জঘন্য প্রকৃতির সংবাদটি দেখান এবং একই সাথে গত ২৪ নভেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) খাইরুজ্জামান কর্তৃক প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদানের মাধ্যমে “দৈনিক সমুদ্রকণ্ঠ” পত্রিকায় একখানা সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জানান যে, “এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দুর বিষয়ে দৈনিক ইনানী পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। উক্ত সংবাদে ওসি তদন্ত কক্সবাজার সদর মডেল থানার উদ্ধৃতি দিয়ে যে বক্তব্য ছাপানো হয়েছে, তাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ওসি তদন্ত বলেছেন, এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দু সাহেবের বিষয়ে দৈনিক ইনানী পত্রিকার সাথে তার কোন ধরনের আলাপ হয়নি। এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দুকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিনেন ও জানেন। তিনি একজন সাদামনের সৎ মানুষ ও সুপ্রতিষ্ঠিত আইনজীবী এবং সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে মুলত ঢাকার হাতিরঝিল থানার একটি মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অনুরোধ করে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সাক্ষ্য শেষে তাকে স্বসম্মানে কক্সবাজার চলে আসার ব্যবস্থাও করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
মামলার বাদী এডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দু বলেন, আসামীরা পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা জঘন্য সংবাদটি প্রকাশ করার পর কক্সবাজারসহ দেশব্যাপী আমার শুভানুধ্যায়ী ও শুভাকাঙ্খীরা তাদের ফেসবুক পেইজের আইডি থেকে প্রকৃত ঘটনার বিষয় জেনে ওই পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করায় আসামীদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আসামীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবী জানিয়ে যাচ্ছেন এবং তাঁদের মধ্যে আসামীদের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে এবং আমার সম্মান রক্ষার্থে এবং ভবিষ্যতে যাতে আমার মত সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিগণের মান মর্যাদা নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতার নামে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে কারো মান মর্যাদার হানি করতে না পারে, তৎ নিমিত্তে আসামীদের আইনের আওতায় বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদানের জন্য আমি আসামীগণের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রার্থনায় বিজ্ঞ আদালতে দালিলিক প্রমাণাদি সহ এই মামলা দায়ের করলে, বিজ্ঞ আদালত আমার দাখিলকৃত কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করে আসামীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারার অপরাধ আমলে নিয়ে সমন ইস্যূ করার আদেশ প্রচার করেন।

পাঠকের মতামত: