ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পর্যটন শহরের বেহাল সড়ক ব্যবস্থা, আবর্জনার স্তুপ ড্রেনে

মোঃ নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার ::  দেশের পর্যটন রাজধানীখ্যাত কক্সবাজার শহরের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। চারিদিকে ভাঙাচোরা রাস্তা। পথেঘাটে পড়ে থাকে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। ডাস্টবিনের গন্ধে নাকে হাত দিয়ে চলাফেরা করতে হয়।

সাধারণ পথযাত্রী চলাচলের নেই কোন ফুটপাত। স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতা দখল করে নিয়েছে ফুটপাত। যে কারণে কক্সবাজার শহর এখন ভাঙ্গাচোরা পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে।
কক্সবাজার পর্যটন নগরী হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেলেও স্থানীয় প্রশাসন তেমন কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখাতে পারছেন না।

শহরের সড়ক উপসড়কে বড় বড় গর্তে যেকোনো মুহূর্তে যে কোন যানবাহন পড়তে পারে দুর্ঘটনায় চলে যেতে পারে কিছু প্রাণ। এর ফলে চলাচল করতে ড্রাইভারদের পড়তে হয় হিমশিমে।

প্রধান সড়ক ও শহরের অলিগলির সড়কগুলোতে যান চলাচল অনুপযোগী। স্থায়ী সমাধানের আশায় জেলার সড়ক বিভাগ কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ সাধারণ জনগনের।

সম্প্রতি কক্সবাজার পৌরসভা কিছু কিছু জায়গায় ব্রিক সলিং এর কাজ করলেও তা আবারো আগের মতো হয়ে পড়েছে।

ঘুরে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের কক্সবাজার সদর উপজেলার সামনে, কক্সবাজার বাস টার্মিনাল সড়ক, সিটি কলেজের সামনে, খুরুশকুল রাস্তার মাথায়, কালুর দোকান এলাকা, বার্মিজ মার্কেট, শহরের প্রাণকেন্দ্র বাজারঘাটা, সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের প্রত্যেকটি সড়ক উপসড়ক চলার অনুপযোগী হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণ ও কক্সবাজারে আগত পর্যটক গণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।

সড়ক মেরামত না করায় সড়কে যান চলাচল অনুপোযোগী হওয়াতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা এবং যানজট লেগেই থাকে।
এর জন্য পর্যটক ও স্থানীয়রা সড়ক বিভাগকে দায়ী করছেন। দায় এড়াতে পারে না কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও কক্সবাজার পৌরসভা।
বার্মিজ মার্কেটের দোকানদার মাওলানা হাফেজ জানান, প্রধান সড়ক লাগোয়া সড়কের যা অবস্থা বড় বড় গর্ত দেখে বার্মিজ মার্কেটে আসা দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকগণ বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে যা আমাদের শুনতে হয়, যদি প্রশাসন একটু সজাগ থাকেন তবে এ সড়ক ব্যবস্থা সুন্দর করতে বেশি সময় লাগবে না।

কালুর দোকান এলাকার বাসিন্দা আতিক জানান, পৌরবাসী যেন মহা বিপদে আছে। সড়ক ব্যবস্থা অতীতে এমন আকার ধারণ করেনি। এতে বর্তমানে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।

খুরুশকুল রাস্তার মাথার বাসিন্দা সাংবাদিক ইমরুল কায়েস তার ফেসবুকে বেশ কয়েকবার লাইভে দেখিয়েছেন বিভিন্ন দুর্ঘটনা, এবং বিগত বর্ষা মৌসুমের বেহাল অবস্থা গুলো তিনি তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু আজ অব্দি কোন কাজ হয়নি শুধুমাত্র কিছু ব্রিক সলিং এর কাজ ছাড়া।

সম্প্রতি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)এর চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অবঃ) ফোরকান আহমেদ এর কাছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক কেন জানতে চাইলে উত্তর দেন, সবার সহযোগিতায় কক্সবাজারকে একটি পর্যটন বান্ধব শহরে পরিণত করা হবে।

পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রধান সড়ক ও বিমানবন্দর সড়কের সংযোগস্থলে স্টারফিশ ভাস্কর্য, হোটেল মোটেল রোডে নির্মিত করা হয়েছে সাম্পান ভাস্কর্য, লাবনী পয়েন্টে নির্মিত করা হয়েছে রূপচাঁদা ভাস্কর্যের।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) এর ব্যবস্থাপনায় সড়ক আলোকায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দরিয়ানগর হইতে হিমছড়ি এলাকায় মেরিন ড্রাইভ সড়কে এলইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের আওতায় শহরে বিভিন্ন জায়গায় ৬০০টি এলইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে।

কক্সবাজারের একমাত্র সড়ক হলিডে মোড় বাজারঘাটা লারপাড়া (বাস স্ট্যান্ড) প্রধান সড়ক বর্তমানে সংস্কারের অভাব এবং চারপাশের অবৈধ দখলের কারণে প্রায়শই যানজট লেগে থাকে। তাই উক্ত সড়কটি সংস্কারসহ প্রশস্তকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার, এটি একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।

কউক চেয়ারম্যান জানান, ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হলিডে মোড় হতে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চার লেনের সড়ক উন্নয়ন কাজ সকলের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন হবে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল মানিক জোন সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল ডায়মন্ড এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজার শহরকে পর্যটনবান্ধব করতে প্রথমে প্রধান সড়ক, এরপর সমুদ্রঘেষা উপসড়কগুলি মেরামত করা প্রয়োজন। বর্তমানে সুগন্ধা পয়েন্টে সড়কটি নাজুক অবস্থা সড়কটি অচিরেই মেরামত করতে হবে।

কক্সবাজার পৌরসভা মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে যেখানে সড়ক ব্যবস্থা বেশ নাজুক হয়েছে সেখানে পৌরসভার অর্থায়নে সাধারণ জনগণ যেন চলাচল করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধান সড়ক ও উপসড়কগুলোর শীঘ্রই একটা স্থায়ী সমাধান হবে।

পাঠকের মতামত: