ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ‘এক্সপ্রেসওয়ে’ হবে ছয় লেনের

পিপিপি প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়িত হবে। প্রাথমিকভাবে জাপানের মারুবেনি করপোরেশনকে নির্মাণকাজ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ আগাচ্ছে। অবশ্য সেটি চূড়ান্ত হতে এক বছর সময় লাগবে।

আসিফ সিদ্দিকী, নিজস্ব প্রতিবেদক ::  চার লেন মহাসড়কের বদলে ছয় লেনের ‘এক্সেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মিত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। এতদিন এই সড়ককে চট্টগ্রাম-ঢাকার মতো প্রচলিত চার লেনের সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কক্সবাজার ঘিরে সরকারের জ্বালানি উৎপাদন অঞ্চল, সাবরাং ও সোনাদিয়ায় বিশেষায়িত পর্যটন অঞ্চল এবং মহেশখালীতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে কক্সবাজার। সেই সুফল পেতে দুটি ইমার্জেন্সি লেনসহ ছয়লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ধীরগতি এবং স্থানীয় গাড়ি চলাচলের জন্য থাকছে দুটি সার্ভিস লেন।

উল্লেখ্য, কর্ণফুলী সেতুর পর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে হবে টোল রোড অর্থাৎ এই রোডে চলতে গেলে মাশুল দিতে হবে। সড়কের গতিসীমা ঠিক রাখতে বাইরে থেকে এক্সেস কন্ট্রোল বা যান প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকবে, দীর্ঘ সড়কের দুই পাশজুড়ে থাকবে নেট ফেন্সিং বা ঘেরা দেওয়া। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও স্থানে নির্মিত হবে ওভারপাস কিংবা আন্ডারপাস; যাতে মূল সড়কের চলাচল নিরবচ্ছিন্ন থাকে। আর কম গতির গাড়ির জন্য চার লেনের বাইরে দুপাশে থাকবে দুটি সার্ভিস লেন। নির্ধারিত স্থান থেকে গাড়ি মূল সড়কে ওঠার সুযোগ থাকবে। দুর্ঘটনা বা বিপদের সময় বের হওয়ার জন্য দুপাশে দুটি জরুরি এক্সিট লেন বা বের হওয়ার পথ রাখা হবে। অর্থাৎ সর্বশেষ প্রযুক্তি নিয়ে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হবে আর গতি হবে ঘণ্টায় একশ কিলোমিটার।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় জি টু জি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) ভিত্তিতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রাথমিকভাবে জাপানের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান মারুবেনি করপোরেশনকে নির্মাণকাজ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ আগাচ্ছে; সেটি চূড়ান্ত হতে এক বছর সময় লাগবে।

প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পিপিপি কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘চার লেন প্রকল্পের স্টাডি রিপোর্টের ওপর নতুন কিছু ফিচার যুক্ত করেই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হবে। এজন্য বুয়েট বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে গত জুলাই মাসে একটি চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে তারা প্রকল্পের ডিজাইন ও অর্থায়ন চূড়ান্ত করে রিপোর্ট দেবে। এরপর প্রকল্প প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে আমরা অনুমোদনের জন্য কেবিনেট কমিটি অব ইকোনমিতে পাঠাব। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী অনুমোদন দিলে কাজটি শুরুর চুক্তি হবে।’

তিনি বলেন, ‘পিপিপি প্রকল্পে প্রথমদিকে একটু দেরি হলেও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হওয়ার পর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি যত দ্রুত কাজ শেষ করে চালু করতে পারবে; ততই তার বিনিয়োগ ওঠে আসবে। দেরি হলে সেই কম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘জাপান সরকার এই প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে মারুবেনি করপোরেশনের নাম প্রস্তাব করেছে; তবে সেটি চূড়ান্ত হবে ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট দেওয়ার পর। আর সরকার প্রকল্প বিনিয়োগ করবে কিনা তাও চূড়ান্ত হবে রিপোর্ট পাওয়ার পর। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না কবে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হবে।’

জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটির দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক। আর দোহাজারী থেকে চন্দনাইশ পর্যন্ত দেড় থেকে দুই লেনের সড়ক। আর পটিয়া থেকে শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত দেড় লেনের সড়কটি সবচেয়ে খারাপ, আঁকাবাঁকা ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ।

কক্সবাজার জুড়ে যে মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে এর সুফল পেতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দূরদর্শী ও সুদূর প্রসারী উল্লেখ করে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘আগামী ৫০ বছরে কক্সবাজারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কোন পর্যায়ে উন্নীত হবে সেই ভাবনা মাথায় রেখেই এই প্রকল্প। আমরা চাই দ্রুত এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হোক।’

এদিকে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে। সেই বন্দর চালুর আগেই তারা সড়কটির গতিশীল করতে চায়। ইতোমধ্যে এই সড়কের চার লেন সড়ক নির্মিত হওয়ার আগেই পাঁচটি সেতু নির্মিত হচ্ছে; যেগুলো ছয় লেনের। এসব সেতু ঘিরে যাতে কোনো যানজট তৈরি না হয় সেজন্য আগে ভাগেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে অন্তত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ও যানজট প্রবন স্থানে মাটির ওপরে ওভারপাস এবং মাটির নিচে আন্ডারপাস নির্মাণ করবে জাইকা।’

জাইকার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পাঁচটি স্থানে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে আগেভাগেই ওভারপাস-আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য জাইকার অর্থায়নে ফিজিবিলিটি স্টাডি হচ্ছে। জাইকার ফান্ড থেকেই সেটি বাস্তবায়িত হবে। মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর চালুর আগেই এটি নির্মান করতে চাই; আমরা একমুহূর্তের জন্য পিছিয়ে থাকতে চাই না।’

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে কক্সবাজারে এক জনসভায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেনে রুপান্তরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর বিদেশি কম্পানির ফিজিবিলিটি স্টাডির পর ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেন সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু গুরুত্ব বিবেচনায় সেই প্রকল্পটির বদলে এক্সপ্রেসওয়ে করার প্রক্রিয়া চলছে। এই কাজটির নির্মান শুরু হতে কমপক্ষে তিন বছর লাগবে; ফলে সেই সময় পর্যন্ত বিদ্যমান সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হতে কত সময় লাগবে এখন ধারণা নেই। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার চাইলে পিপিপি আওতায় কাজটি দ্রুত করতে পারে। আর বর্তমান সড়ক দিয়েই ট্রাফিক সামাল দেয়া একটু কঠিন হবে; নতুন প্রকল্প নেয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তবে সবচে সমস্যা হবে চট্টগ্রাম-দোহাজারী পর্যন্ত; বাকি সড়কে ক্রমবর্ধমান ট্রাফিক ততদিন পর্যন্ত হয়তো সামাল দেওয়া যাবে।’

 

পাঠকের মতামত: