ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে নামে বেনামে বিক্রি হচ্ছে ‘মানবাধিকার !

এম. বেদারুল আলম, কক্সবাজার ::  কক্সবাজারে নামে বেনামে বিক্রি হচ্ছে ‘মানবাধিকার’ ব্যবসা। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নাম নিয়ে রীতিমত চাদাঁবাজির পশরা সাজিয়েছে অনেক অখ্যাত-কুখ্যাত সংগঠন। তাদের অনেকেরই নেই কোন সরকারি অনুমোদন, নেই কোন সঠিক কাগজপত্র। আছে নাম সর্বস্ব কার্যক্রম। যে কার্যক্রম সালিশের নামে চাঁদা আদায়। চাঁদার পরিমান শুনলে রীতিমত অনেকে হতবাক হওয়ার মত। মানবাধিকারের নামে এ ব্যবসা লাগামহীনভাবে চললেও দেখার কেউ নেই।
কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের বিরুদ্ধে এমন ও অভিযোগ রয়েছে বিচারের নামে আদালতের আদলে সমন জারির। বাদী-বিবাদীকে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদালত কতৃর্ক যে সমন প্রদান করা হয় তেমনি সমন জারির বিষয়টি একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়েছে। সার্চ মানবাধিকার সোসাইটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সামাজিক মানবাধিকার সোসাইটি, সার্ক মানবাধিকার সোসাইটি, হিউম্যান রাইট আই, জনস্বার্থ রক্ষণ সোসাইটি, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইট ফেডারেশন, হিউম্যান রাইট এন্ড পিস সোসাইটিসহ অনেক ভুইভোড় সংগঠন সাধারণ মানুষের নানা সমস্যাকে পূঁজি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
স্বামী স্ত্রীর বিরোধ নিস্পত্তি, জায়গা বিরোধ, জায়গা দখল, বিশিষ্ট জনকে পদক বিক্রি, রাজনৈতিক নেতাদের পদ ব্যবহার করে উক্ত সংগঠনের নামে নিরব চাঁদাবাজি চলছে কক্সবাজারের আনাচে কানাছে। বেশি প্রতারিত হচ্ছে গ্রামের সহজ,সরল মানুষ। এমন অভিযোগ ও রয়েছে সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে নারী সমস্যা সমাধানের নাম করে উল্টো নারীদের নিয়ে হোটেলে রাত্রিযাপনের।
সম্প্রতি শহরের বাহারছড়ার একটি জায়গা বিরোধ নিস্পত্তির জন্য সার্চ মানবাধিকার সোসাইটি বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের সীল ব্যবহার করে ছুরত আলম নামের ব্যক্তিকে সমন জারি করে সংগঠনটি। আদালতের সমন জারির আদলে ‘মোকদ্দমা নিস্পত্তি করনার্থের সমন’ শিরোনামে দেওয়া সমনের নিচে উল্লেখ রয়েছে দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৫ নং হুকুম ১নং ও নিয়মিত উল্লেখ রয়েছে। মোকাম উল্লেখ করা হয়েছে সার্চ মানবাধিকার সোসাইটি কক্সবাজার জেলা , থানা কক্সবাজার লিখে নুর বানু যেহেতু আপনার বিরুদ্ধে মোকদ্দমা উপস্থিত করিয়াছেন তাই বিবাদী ছুরত আলমকে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হুবহু আদালতের সমন জারির মত সমন পেয়ে ভয় পেয়ে যায় বিবাদী।
সমনপ্রাপ্ত ছুরত আলম জানান, আমি প্রথমে বুঝিনি কিছু । আমার বোনের সাথে জমি বিরোধ আছে কিন্তু এটি কক্সবাজার মডেল থানায় বিচারাধীন। মানবাধিকার সংগঠন থেকে সমন পেয়ে উল্লেখিত তারিখে উপস্থিত হলে বিরোধ সমাধান করবে বলে ১০ লাখ টাকা দিতে বললে আমি ১ মাস পরে জানাব বলে চলে আসি। সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী নামের ব্যক্তি সমাধান করার নামে টাকা চেয়েছে বলে জানান ছুরত আলম।
আদৌ এ ধরনের সমন দেয়ার এখতিয়ার আদালত ছাড়া কারো আছে কিনা বিষয়টি জানার জন্য বিশিষ্ট আইনজ্ঞ, কলামিষ্ট এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আইনদ্বারা স্বীকৃত আদালত ব্যতিত অন্য কোন ব্যক্তি সংগঠন সমন জারি করতে পারেনা বা এখতিয়ার তাদের নেই। সেটি নি¤œ আদালত হোক। কোন মানবাধিকার সংগঠন তা করলে সেটি গর্হিত কাজ হবে।
কক্সবাজারের আইনজীবী, কমিউনিটি পুলিশের প্রধান এডভোকেট ছৈয়দ রেজাউর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, সমন দেওয়ার এখতিয়ার শুধুমাত্র আদালতের, কোন মানবাধিকার সংগঠন আদালতের ন্যায় কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারেনা। যদি করে তা আদালত অবমাননার সামিল।
মানবাধিকার সংগঠনের সমন জারির বৈধতা বিষয়ে কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ফরিদ উদ্দিন খন্দকার চকরিয়া নিউজকে জানান, আদালত ছাড়া কোন ব্যক্তি সংগঠন সমন জারি করতে পারেনা। সিআরপিসি-৭৫ ধারায় সাধারণত আদালত সমন জারি করে। আদালত ব্যতিত কেউ সমন জারি করে থাকলে তা আমলযোগ্য অপরাধ হবে। কেউ এ ধরনের সমন জারি করলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
কক্সবাজারে অস্তিত্বহীন এবং সাধারণ মানুষের হয়রানির অন্যতম কারন হয়ে দাড়িয়েছে ভুইফোঁড় এ সব সংগঠন। মানবাধিকার বিক্রেতা এসব সংগঠনের উপর নজারদারির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের হয়রানি রোধে এখনই আইনগত ব্যবস্থা জরুরি।

পাঠকের মতামত: