ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে অস্তিত্বহীন ১৪ পূজামণ্ডপ, জেলা প্রশাসনের বরাদ্দ বাতিল

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজার জেলার ১৪টি অস্তিত্বহীন পূজা মন্ডপের নামে বরাদ্দকৃত অনুদান বাতিল করা হয়েছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তালিকা নিয়ে সাধারণ পূজার্থীরা আপত্তি করায় জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এ ব্যবস্থা নিয়েছে। বাতিলকৃত মন্ডপের অনুদানের অর্থ হিন্দু রোহিঙ্গাদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের দুর্গাপূজায় কক্সবাজার সদর উপজেলায় চারটি অস্তিত্বহীন ঘটপূজার মন্ডপ দেখিয়ে আধাটন চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। এরপর চলতি বছর সেই অস্তিত্বহীন ৪ মন্ডপের পাশাপাশি আরো ১০টি মন্ডপ যোগ করে মোট ৩১০টি মন্ডপের জন্য বরাদ্দ চেয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৫৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ আসে। কিন্তু ২০১৮ সালে অস্তিত্বহীন সহ মোট ৩০০ মন্ডপের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেলেও এবার আরো ১০টি বেড়ে যাওয়ায় তদন্ত সাপেক্ষে ১৪ মন্ডপকে অস্তিত্বহীন উল্লেখ করে বাদ দেওয়া হয়। বাদ পড়া কথিত মন্ডপগুলো সদর উপজেলার। এ উপজেলার তালিকায় ৬৮ মন্ডপ দেখানো হয়েছিল। অস্তিত্বহীন মন্ডপগুলোর বরাদ্দ বাদ দেওয়ার পর কক্সবাজার জেলার মোট মন্ডপ সংখ্যা দাড়াল ২৯৬টিতে।
রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে জেলা পূজা উপযাপন পরিষদের মতবিনিময় সভায় ৩১০ মন্ডপের পরিবর্তে ২৯৬ মন্ডপের কথা উল্লেখ করা হয়।
অস্তিত্বহীন মন্ডপ আবিস্কার ও বাদ যাওয়ার বিষয়টি হিন্দু সম্প্রদায়সহ সচেতন মহলের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গতবারে পূজা শেষে অস্তিত্বহীন মন্ডপের কথা উঠায় তা অস্বীকার করেছিলেন জেলা ও উপজেলা পূজা কমিটি। কিন্তু এবার সেই চারটিসহ আরো ১০টি মিলিয়ে ১৪টি মন্ডপ বাদ যাওয়ায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা চলছে। জেনে-শুনে অস্তিত্বহীন মন্ডপের তালিকা উপস্থাপন করায় নেতৃবৃন্দের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ পূজার্থীরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের দুর্গাপূজার ব্যয় বহনের জন্য জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি-সম্পাদক স্বাক্ষরিত ৩১০ মন্ডপের কথা উল্লেখ করে একটি তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেয়া হয়। তালিকা মতো বরাদ্দও চলে আসে।
সূত্র মতে, সদরে গত বছরের চেয়ে ৩টি মন্ডপ বেড়ে ৬৮টি হওয়ায় অস্থিত্বহীন মন্ডপের বিষয়টি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে সমালোচনা শুরু হয়। গত বছরের অভিযুক্ত চারটির বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে চলতি বছর আরো মন্ডপ বৃদ্ধি করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে পূজার্থীরা জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভায় বিষয়টি তুলে ধরেন। সেখানেই গতবারের অভিযোগ উঠা চারটিসহ আরো ১০টি মন্ডপের অস্তিত্ব না পাওয়ায় সদরের ৬৮টি মন্ডপ থেকে ১৪টি মন্ডপ বাদ দিয়ে ১৪১টি প্রতিমা ও ১৫৫টি ঘট পূজা মিলিয়ে ২৯৬ মন্ডপের জন্য ১৫৫ টন বরাদ্দ ঠিক রাখা হয়। এতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হিন্দু শরণার্থীদের একটি পূজার খরচও সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ বলেন, তালিকা আমরা নিজেরা করিনা। উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির করা তালিকা আমরা সমন্বয় করে জেলা প্রশাসনে উপস্থাপন করি। এবারও একই ভাবে সেটা হয়েছিল। জেলায় ১৪২ টি প্রতিমা ও ১৬৮টি ঘট পূজা মিলিয়ে ৩১০টি পূজার তালিকা দেয়া হয়েছিল। সে হিসাবেই ১৫৫ টন চাউল বরাদ্দ হয়। কিন্তু গতবারে সদরে চারটি পূজা মন্ডপের অস্তিত্ব নিয়ে অভিযোগ উঠায় এবার জেলা প্রশাসন নিজেরাই তদারকি করে সদরের ১৪টি মন্ডপ বাদ দিয়ে ১৪১টি প্রতিমা ও ১৫৫টি ঘট পূজার নির্ধারণ করে দেয়। সে হিসেবে বাকি ৭ টনকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হিন্দু শরণার্থীসহ উপজেলায় ব্যয়বহুল মন্ডপে কিছু বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিন্দুধর্মীয় এক নেতা বলেন, সদর উপজেলার ২০১৮ সালের তালিকায় পৌরসভার মন্ডপের তালিকাতেও অস্তিত্বহীন মন্ডপ ছিল। এর আগের বছর গুলোর তালিকায় অস্তিত্বহীন এসব মন্ডপের নাম ছিল না। ২০১৯ সালেও তালিকায় এসব নাম থাকায় টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সুষ্পষ্ট। জেলাব্যাপী হয়ত এ অনিয়মের মহড়া হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রনালয়ের হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও কক্সবাজার জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দন শর্মা জানান, বিষয়টি অনভিপ্রেত। এভাবে হওয়া কখনো কাম্য নয়। ধর্মীয় বিষয় নিয়ে এভাবে করা উচিত নয়। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা বলেন, আমাদের জমা দেয়া তালিকা যা-ই হউক জেলা প্রশাসন রেজুলেশন করেই ২৯৬ মন্ডপের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনিও স্বীকার করেন গতবারের ৪টিসহ নতুন ১০টি ভূয়ামন্ডপ বাদ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কঙবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম মাহফুজুর রহমান বলেন, কে কিভাবে এসব করেছে তা পূজা উদযাপন পরিষদ ভালই জানবে। তবে গতবার অভিযোগ উঠায় এবার সেসব মন্ডপ বাদ দেয়ার পাশাপাশি নতুন অস্তিত্বহীনগুলোও বাদ গেছে। এবিষয়ে প্রশাসন কোন বিতর্কে জড়াতে চায় না বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: