ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে চায় মিয়ানমার

অনলাইন ডেস্ক ::   বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে গেলে কয়েক ধাপ শেষে নাগরিকত্ব দিতে সম্মত মিয়ানমার। তবে প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ শুধু নাগরিক স্বীকৃতির একটি কার্ড দিতে চায়। পরবর্তী আরও দুই থেকে তিনটি ধাপে ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ী তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

ঢাকায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ওই বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব কামরুল আহসান সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির অংশ হিসেবে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আরও ২৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে ৩০ হাজার জনের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে মোট ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হলো।

তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বাধা দূর করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। তবে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

রোহিঙ্গা কূটনীতির অগ্রগতির ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সরকার প্রত্যাশা করছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আগামী অধিবেশনের আগেই প্রত্যাবাসন শুরু হোক। নানা জটিলতা থাকলেও প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টিতে অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কপবাজারে গেলে রোহিঙ্গারা জানায়, নাগরিকত্ব না দিলে তারা ফিরে যাবে না। ঢাকায় বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। আলোচনায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ী মিয়ানমারে তিন ধরনের নাগরিকত্ব চালু আছে। ওই আইন অনুযায়ী মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। তবে এখন কপবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে তাদের নারিকত্বের প্রাথমিক স্বীকৃতি স্বরূপ একটি কার্ড দেওয়া হবে। এরপর আইন অনুযায়ী বাকি ধাপগুলো সম্পন্ন করে তিনটি ক্যাটাগরির মধ্যে যে ধরনের নাগরিকত্ব রোহিঙ্গাদের পাওয়ার কথা তা চূড়ান্ত করা হবে।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে মিয়ানমারে ফিরতে সম্মত ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেশটির হাতে দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মিয়ানমার যাচাই-বাছাই শেষে আট হাজার জনের নাম চূড়ান্ত করেছে। তারা যে কোনো সময় মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে। এখন নতুন করে আরও ২৫ হাজার জনের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুই দেশের মধ্যে ইতিপূর্বে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এ তালিকা দেওয়া অব্যাহত থাকবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সবচেয়ে বড় সমস্যা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার অভাব। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকেই তাই আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য একটি সফরে হবে না। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বার বার আসতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বৈঠকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবসহ প্রতিনিধি দলকে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টিসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কূটনীতির বর্তমান চিত্র জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, এখন যে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল কপবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছে সেটাও একটা অগ্রগতি। এই প্রথম মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নাগরিকত্ব এবং নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছে। এর কারণ হচ্ছে মিয়ানমারও এখন চায় রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যাক। চীনসহ এ অঞ্চলের বড় দেশগুলোও চায় রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান হোক।

তিনি বলেন, মিয়ানমার কীভাবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করবে সেটা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এবং রোহিঙ্গাদের ব্যাপার। এ নিয়ে বাংলাদেশের কোনো বক্তব্য নাই, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কিছু বলবেও না। বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গারা নিরাপদে রাখাইনে ফিরে যাক এবং এ সংকটের স্থায়ী সমাধান হোক। এ কারণে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আস্থা সৃষ্টির জন্য আসিয়ানভুক্ত দেশসহ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে যুক্ত করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে রয়েছে ঢাকা।

তিনি আরও বলেন, নিজেদের ভবিষ্যতের জন্যই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া উচিত। এ বছরই রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যের পরিমাণ মোট চাহিদার তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ভবিষ্যতে আরও কমবে। ফলে রোহিঙ্গাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ও নিশ্চয়তার স্বার্থেই তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়াটা জরুরি। তবে কিছু সংস্থা, প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিচ্ছে, ভুল বোঝাচ্ছে এবং ফিরে যেতে নিরুৎসাহিত করছে। এটা ওই সংস্থাগুলো নিজেদের স্বার্থে করছে। রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে ওই সব সংস্থার নানা রকম সুযোগ বাড়বে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের লাভ হবে না। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের ক্ষেত্রেও এসব সংস্থার নেতিবাচক ভূমিকা ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পাঠকের মতামত: