ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই নগরীতে নতুন আরো ৭ রোগী শনাক্ত

নিউজ ডেস্ক ::  যতই দিন গড়াচ্ছে, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চট্টগ্রামে। গতকাল একদিনে নতুন করে আরো ৭ জনের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন এবং বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ২ জন রোগী ভর্তি হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২৪ জুলাই ২ জন, ২৩ জুলাই ৮ জন এবং ২২ জুলাই ৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় নগরীতে। এনিয়ে কেবল জুলাইয়ের ২৫ দিনেই ৩৬ জনের ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। আর জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। সবমিলিয়ে জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট ৪১ জন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পাওয়া গেলো চট্টগ্রামে।
এদিকে, জুলাই মাসে চট্টগ্রামে হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও এখনো রাজধানী ঢাকার মতো মহামারী বা আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলে দাবি করেছেন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। তাছাড়া চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ঢাকায় কিন্তু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়জনের মৃত্যুর খবর আমরা শুনেছি। তবে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও এখনো পর্যন্ত মৃত্যুর খবর আমরা পাইনি। সে হিসেবে, ডেঙ্গু নিয়ে চট্টগ্রামে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
কয়দিন আগে হওয়া টানা বৃষ্টিপাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। বৃষ্টিপাতের পর স্বাভাবিক ভাবেই এর প্রকোপ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। যদিও বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ঢাকা শহরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসকসহ বেশ কয়জনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে।
যার কারণে অপ্রত্যাশিত মরণব্যাধি এই রোগের প্রকোপ নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামেও। যদিও জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে ডেঙ্গু আক্রান্তের খুব একটা খবর পাওয়া যায়নি। তবে ২য় ও ৩য় সপ্তাহে এসেই ডেঙ্গুর প্রকোপ দৃশ্যমান হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরেও। পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। সিভিল সার্জন বলেন, ডেঙ্গু ঢাকায় মহামারী রূপে আবির্ভূত হলেও চট্টগ্রামে ততটা নেই। যদিও এখন এর প্রকোপ কিছুটা বাড়ছে। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। চারদিকে খোঁজ-খবর রাখছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে মেডিকেল টিমসহ সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কন্ট্রোলরুমও চালু করা হয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশে সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বরে এ জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। কারণ, এ সময়টায় ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে (ফুলের টবে, ডাবের খোসায়, বিভিন্ন খালি কৌটায় প্রভৃতি) পানি জমে থাকে। জমে থাকা বৃষ্টির পরিষ্কার পানিতে এ মশা প্রজনন করে থাকে। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও এ ধরনের পানি যেন জমে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি দিনের বেলা সতর্কতামূলক মশারি টানিয়ে ঘুমানোর পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র জ্বরই এ রোগের প্রধান লক্ষণ। মধ্যম বা অধিক মাত্রায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত হঠাৎ প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়। প্রথম দিকে কোন পরিবারই আক্রান্তকে হাসপাতালে আনার কথা ভাবেনা। পরবর্তীতে জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা, হাড়ব্যথার পাশাপাশি শরীরে লালচে দানা বা র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। প্রথমে হাত-পায়ে এবং পরে পুরো শরীরে দেখা যায়। অনেক সময় রক্ত ক্ষরণও হয়ে থাকে। এছাড়া তীব্র মাথাব্যথা, গলাব্যথা, পিঠব্যথা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। এ ধরণের জটিল লক্ষণ দেখা দিলে কেবল তখনই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় মানুষ। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ রোগীকে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন মনে হলেই মানুষ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবে। ফলে হাসপাতালে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম।আজাদী

পাঠকের মতামত: