ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচন কাল ২০মার্চ, পাঁচজন ম্যাজিষ্ট্রেটের তত্বাবধানে ভোট কেন্দ্রে থাকবে ৪৬৮জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য

Chakaria Picture  18-03-2016এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্টিত হচ্ছে কাল রোববার (২০মার্চ)। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৮টি কেন্দ্রে এবার ৪২৩০৬জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে তুমুল লড়াই হবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থীর মধ্যে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন।

পৌরসভা নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটানিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো.মেজবাহ উদ্দিন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্টানের লক্ষ্যে তাঁরা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। নির্বাচনের আগের দিন থেকে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে চারজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও একজন সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচনে। তিনি তাৎক্ষনিক শাস্তি নিশ্চিত করবেন নির্বাচনী কাজে অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে। তিনি বলেন, আগের দিন থেকে ভোট গ্রহনের শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত থাকবেন ৪৬৮জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। প্রত্যেক কেন্দ্রে ১০জন পুলিশ ও ১২জন আনসার সদস্যের সমন্বয়ে ২২জনের একটি টিম দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও নির্বাচনী এলাকায় টহলে থাকবে র‌্যাব ও বিজিবি সদস্য। তারমধ্যে ৩২জন র‌্যাব সদস্য ও ৪০জন বিজিবি সদস্য কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।

জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও যাছাই বাছাইকালে ব্যাংক ঋণের দায়ে জাতীয় পাটির মেয়র প্রার্থী জসীম উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হাকিম দুলাল মিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। পরে তাঁরা আপীল করলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে এই নির্বাচনে মেয়র পদে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে রয়েছেন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলহাজ নুরুল ইসলাম হায়দার। নির্বাচনের মাঠে বিএনপির প্রার্থী প্রবীণ ও আওয়ামীলীগের প্রার্থী নবীণ। মুলত এবারের নির্বাচনে ভোটের লড়াই হচ্ছে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দুই নবীন-প্রবীণ প্রার্থীর মধ্যে।

পৌরসভার একাধিক এলাকা ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামীলীগের প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী নবীণ হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের দুর্নাম ও মামলা মোকাদ্দমা নেই। দল এবং সাধারণ মানুষের মাঝে তিনি একজন ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি। তার পক্ষে কক্সবাজার জেলা ও চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামীলীগের সকলস্থরের নেতাকর্মী এখন একাট্টা। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। অপরদিকে বর্তমান মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার প্রবীণ হলেও বিগত সময়ে পৌরসভার দায়িত্ব পালন কালে তিনি পৌরবাসির কল্যাণে কতটুকু কাজ করতে পেরেছেন বা করেছেন এখন ভোটের মাঠে তা বিশ্লেষন করছেন অভিজ্ঞ মহল। তফসিল ঘোষনার পর থেকে বিএনপির সিনিয়র সকল নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে ভোটের মাঠে ব্যাপক গনসংযোগ পথসভা করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দার। গনসংযোগকালে কয়েকটি স্থানে তিনি ও তার স্ত্রী প্রতিপক্ষের সমর্থকদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অপরদিকে এবারের নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নিবর্াাচন করছেন ৬৭জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে তিনি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২০জন নারী কাউন্সিলর ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৭জন কাউন্সিলর প্রার্থী। তাঁরা হলেন, সংরক্ষিত আসনে ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে রাশেদা বেগম (কাঁচি), ও জশনে আরা বুলবুল (আঙ্গুর), শিরিন আক্তার (মৌমাছি), জোসনা আক্তার (ভ্যানিটি ব্যাগ) । ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাঈদা ইয়াছমিন (চকলেট), নিগার উস্মে সালমা (ভ্যানিটি ব্যাগ), জেবুনেচ্ছা বেগম ( গ্যাসের চুলা) , রেহেনা খানম (ফ্রক), ফারহানা ইয়াছমিন (হারমনিয়াম), কামরুন নাহার (চুড়ি), রাজিয়া সুলতানা কাউন্সিলর (কাঁচি), নাসরিন ফেরদৌসী রিনা (মৌমাছি), খতিজা বেগম (পুতুল) ও জেসমিন আক্তার জেসি (আঙ্গুর)। ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে সাবেক কমিশনার নিগার সোলতানা বুলবুল(আঙ্গুর), সজরুন নাহার (ভ্যানিটি ব্যাগ),আনজুমান আরা বেগম(কাঁচি), শাহীন আক্তার (গ্যাসের চুলা), হাছনা খানম (মৌমাছি) ও সাজেদা বেগম (চকলেট) । সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১নং ওযার্ডে সাহাব উদ্দিন( ঢেঁড়শ), এম নুরুস শফি ( পানির বোতল), নুর হোসেন কাউন্সিল (টেবিল ল্যাম্প), মকছুদুল হক মধ ু( উটপাখি)ূ, মনোয়ার আলম (পাঞ্জাবী)। ২নং ওয়ার্ডে নুরুল আমিন কাউন্সিলর (টেবিল ল্যাম্প), সাংবাদিক মিজবাউল হক (ব্ল্যাক বোডর্), রেজাউল করিম (পাঞ্জাবী), আবুল কালাম (ডালিম), ও সাইফুল ইসলাম (উটপাখী)। ৩ নং ওয়ার্ডে রশিরুল আইযুব কাউন্সিলর (উটপাখী), আক্কাস আহমদ ( ডালিম), আশেকুর রহমান মামুন (টেবিল ল্যাম্প), জসিম আহমদ (ব্ল্যাক বোর্ড), মোহাম্মদ শফি (পাঞ্জাবী)। ৪নং ওয়ার্ডে, জাফর আলম কালু ( উটপাখী), ফরিদুল ইসলাম (টেবিল ল্যাম্প), জহিরুল ইসলাম(পাঞ্জাবী)। ৫নং ওয়ার্ডে বেলাল উদ্দিন ( ব্ল্যাক বোর্ড), ফোরকানুল ইসলাম তিতু (টেবিল লাইট), শফিকুল আলম (উটপাখি), জাফর আলম (টেবিল ল্যাম্প), ফোরকানুল ইসলাম (ডালিম), সাইফুল ইসলাম (পানির বোতল), জসিম উদ্দিন (পাঞ্জাবী) ও জালাল উদ্দিন (ব্রিজ)। ৬নং ওয়ার্ডে শিব্বির আহমদ (ডালিম), জয়নাল আবেদীন (টেবিল ল্যাম্প), জিয়াবুল হক (পাঞ্জাবী) ও জালাল উদ্দিন (উটপাখি)। ৭ নং ওয়ার্ডে এনামুল হক বাবু (টেবিল ল্যাম্প), জামাল উদ্দিন (ডালিম), আনোয়ার হোসেন ( পানির বোতল), গোলাম কাদের (ব্ল্যাকবোর্ড), হেলাল উদ্দিন (পাঞ্জাবী) ও নুরুল আমিন (উট পাখি)। ৮নং ওয়ার্ডে শহিদুল ইসলাম ফোরকান (টেবিল ল্যাম্প), মুজিবুল হক মুজিব ( উটপাখি), আবুল হোসেন ( পাঞ্জাবী) ,জয়নাল আবেদীন ( পানির বোতল) ও সালাহ উদ্দিন (ডালিম)। ৯নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন (পাঞ্জাবী), হাসান উল্লাহ কায়ছার (গাঁজর), হুমায়ন কবির কমিশনার (টেবিল ল্যাম্প), ফরিদুল আলম ( উটপাখি), বেলাল উদ্দিন (ডালিম)ও নজরুল ইসলাম(ব্ল্যাকবোর্ড)।

এদিকে পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে একাধিক কেন্দ্রকে ঝুকিঁপুর্ণ বলে দাবি করেছেন অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও পৌরসভা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও হালকাকারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দুইটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি অভিযোগ করেছেন, একজন প্রার্থী ভোটারদের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। তাঁর ওয়ার্ডের দুই কেন্দ্রেই নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। প্রতিরাতে ওই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক মিজবাউল হকও কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভোটারেরা যাতে নির্ভয়ে কেন্দ্রে ভোট দিতে পারে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আমরা চাই সুষ্ঠু ভোট হোক।

বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দার সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ‘প্রত্যেক কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। ভোটের দিন এসব কেন্দ্রে সার্বক্ষনিক র‌্যাব ও বিজিবি রাখতে হবে। তা না হলে সুষ্ঠভাবে নির্বাচন হবে এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থী আলমগীর চৌধুরী বলেন, পৌরসভার কোন কেন্দ্রই ঝুঁিকপুর্ণ বলা ঠিক হবেনা। কারন বেশির ভাগ ভোট কেন্দ্র প্রশাসনের নাগারে। ইচ্ছে করলে কয়েক মিনিটের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পৌঁছাতে পারবে। তিনি বলেন, ঝুঁিকপুর্ণ কেন্দ্রের অভিযোগ তুলে বিএনপির প্রার্থী ভোটারদেরকে আতঙ্কে ফেলার চেষ্টা করছেন।

জানতে চাইলে চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি রির্টানিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনের দিন পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি ভোট কেন্দ্র গুলোতে সার্বক্ষনিক থাকবে এক প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের চারটি টিম। নির্বাচন মনিটরিং করবে একজন জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চারজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। তিনি বলেন, ২০জন পিসাডিং অফিসার, ১৩গজন সহকারি পিসাডিং অফিসার ও ২৫০জন পোলিং অফিসার ১৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহনের দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটাররা যাতে নিবিঘেœ কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নিবার্চন কমিশনের পক্ষ থেকে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: