ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঠিকাদারের অবহেলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে দীর্ঘসুত্রিতা

সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার ::  চলতি বর্ষা মৌসুমেও জোয়ার-ভাটা থেকে মুক্তি পাচ্ছেনা কক্সবাজার উপকূলের অন্তত ৭ লাখ মানুষ। প্রতি বছর জরুরী বরাদ্দের নামে মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ হলেও তা কোন কাজে আসছে না বেড়ীবাঁধ নির্মাণে। যা বরাদ্দ করা হয় তা অনেকটা পকেটস্থ করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে দীর্ঘসুত্রিতার কারণে দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না উপকূলের লোকজনের। এখনো জোয়ার-ভাটা চলছে উপকুলের বিভিন্ন এলাকায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২১টি পোল্ডারের অধীন জেলার আট উপজেলায় ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তৎমধ্যে অধিকাংশই ভাঙ্গা।  উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ ইমান আলী জানিয়েছেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যা নির্দেশ দেন তাই বাস্তবায়ন করা হয়। ইতোমধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় যা নির্দেশনা দেন তাই হবে।
এদিকে বৈরী আবহাওয়া ও জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় উপকুলের ধলঘাটা, মাতারবাড়ি,
কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল, বড়ঘোপ ও উত্তর ধুরুং এর বিভিন্ন পয়েটে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে লোকলয়ে।
আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুচ্ছাফা জানান, ইউনিয়নের পশ্চিম তাবলরচর, আনিচের  ডেইল, জেলেপাড়া, কাহারপাড়া এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। দক্ষিণ মুরালিয়া, অমজা খালী, আজম কলোনী, কৈয়ারবিল মলমচর, উত্তর কৈয়ারবিল, মহাজনপাড়া, মফজল ডিলার পাড়া, বাতিঘর পাড়া,কাইছার পাড়া, নয়াকাটা, আকবরবলী ঘাট, ফয়জানির বাপের পাড়া, পূর্ব নয়াকাটা, উত্তর সতর উদ্দিন,পেয়ারাকাটা, ক্রসডেম বিসিক এলাকায় জোয়ারের নোনা পানি ডুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ৫ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ খোলা থাকায় সর্বত্র জোয়ার-ভাটা চলছে। ঠিকাদর সময়মত কাজ না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, প্রতি বছর কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় অস্থায়ী বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জন্য জরুরী ভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয় মোটা অংকের টাকা। কিন্তু ওই টাকা কাজ না করেই ভাগ করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। যার ফলে জরুরী বরাদ্দের নামে প্রতি বছর সরকারের মোটা অংকের টাকা অপচয় হচ্ছে উপকূলীয় এলাকায়। এ ছাড়া বিভিন্ন ঠিকাদার ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নির্মাণাধীন স্থায়ী বেড়ীবাঁধ নির্মাণ কাজে দীর্ঘসুত্রিতা উপকুলের লোকজনের দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, বরাদ্দের অন্ততঃ ৬০ ভাগ কাজ করলেও জোয়ার ভাটা থেকে রক্ষা পেত উপকূলীয় এলাকার অন্তত ৭ লাখ মানুষ। মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানিয়েছেন, জরুরী বরাদ্দের নামে প্রতি বছর মোটা অংকের সরকারের অর্থ অপচয় করা হচ্ছে। যে টাকাগুলো অপচয় করা হচ্ছে তা দিয়ে স্থায়ী বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা যেত। তদন্ত করলে কি পরিমান কাজ তারা করেছেন তা বেরিয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উপকূলের লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ দিলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের যোগসাজসে বরাদ্দকৃত টাকা ভাগ বাটোয়ারা করেন। যার ফলে কোন কাজই হয় না। বর্তমানে স্থায়ী বেড়ীবাঁধ নির্মাণে যারা কাজ করছেন তাদের কাজের দীর্ঘসুত্রিতার কারণে মাতারবাড়ি সাইট পাড়া ও উত্তর রাজঘাটে এখনো জোয়ার-ভাটা চলছে।
প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ এলাকা ধলঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানিয়েছেন, এই বর্ষা মৌসুমে পুরো ধলঘাটাই জোয়ার ভাটা থাকবে। শুষ্ক মৌসুমে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার যে পরিমান উন্নয়ন করা হয়েছে তা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। বেড়ীবাঁধ নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন না করায় আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।  প্রতি বছর জরুরী বরাদ্দের নামে যে টাকা অপচয় করা হয় তা যেন আর না হয়। ওই বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে এলাকার অনেক গুরুত্বপুর্ণ কাজ করা সম্ভব।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, পূর্ব থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭১ পোল্ডারের কুতুবদিয়া দ্বীপে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা ছিল। বিগত তিন বছর পূর্বে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় ৯২ কোটি টাকা বাঁধ নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিলেও যথাসময়ে কাজ করেনি। তবে বেশী ভাঙন এলাকায় জোয়ার রক্ষার জন্য জিও ব্যাগে বালি ভর্তি করে জোয়ার ঠেকানোর জন্য কিছু কিছু এলাকায় বাঁধ দেয়া হয়েছে। গত দুই দিন ধরে পশ্চিম তাবলরচর এলাকা ভাঙন বাঁেধ জরুরী ভিত্তিকে জোয়ার ঠেকানোর জন্য মাটি দিলেও তা পূর্ণিমার জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে তা তলিয়ে গেছে। আমরা এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

পাঠকের মতামত: